রাশেদুল ইসলাম
পাঠকের প্রতিক্রিয়া
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১৬ অক্টোবর,শনিবার,২০২১ | আপডেট: ০৮:৫০ এএম, ১১ মার্চ,সোমবার,২০২৪
ফেসবুক বন্ধু KH Khalid একটা প্রশ্ন করেছেন । প্রশ্নটি নিম্নরূপঃ
‘আল্লাহ কেন এতো ধর্ম সৃষ্টি করলেন তাঁর প্রিয় সৃষ্টির মাঝে এতো বিভেদ সৃষ্টি করে’ ??
এ প্রশ্নের প্রেক্ষিতে ৪১ টি মন্তব্য করা হয়েছে । আমি সাধারণত কারো ধর্মীয় মতামতের উপর কিছু বলতে চাইনে । আজ কেন যেন মনে হোল দুএকটা মন্তব্যের উপর বিনীতভাবে একটা ব্যাখ্যা দেওয়া যেতে পারে । আগে বলে নেওয়া ভালো যে, আমি নিজে মোটেও ধর্ম বিষয়ে বিশেষজ্ঞ কেউ নই । পবিত্র কোরআনের একজন নাদান পাঠক মাত্র ।
জনাব KH Khalid এঁর প্রশ্নের প্রেক্ষিতে ফেসবুক বন্ধু Mizanur Rahman মন্তব্য করেছেন, ‘আল্লাহর মনোনীত ধর্ম ইসলাম। বিভ্রান্তরা বিভিন্ন ধর্ম তৈরি করেছে’। একই বিষয়ে জনাব Mohammed Hossain বলেছেন, “মহান আল্লাহর মনোনীত দ্বীন একটা, সেটা ইসলাম। আল্লাহ তো এতো ধর্ম দেন নি”।
আমি শুধু এ দুটি মন্তব্যের উপর দুএক কথা বলব । আসলে পবিত্র কোরআন এমন একটি ধর্মীয় গ্রন্থ যেখানে একটু মনোযোগ দিয়ে পড়লে প্রায় সব প্রশ্নের জবাব পাওয়া যায় । বিভিন্ন ধর্ম বিষয়ে পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ আমাদের নবী হযরত মোহাম্মদ (সঃ) কে বলেন,
“তোমার প্রতিপালক যদি ইচ্ছা করতেন, তবে সকল মানুষকেই এক জাতিতে পরিণত করতে পারতেন (আয়াত, ১১৮, সূরা হুদ)।
আল্লাহ ইচ্ছা করলে তোমাদের এক জাতি করতে পারতেন । (আয়াত ৯৩, সূরা আন -নহল) ।
আল্লাহ ইচ্ছা করলে তোমাদের এক উম্মাহ বা জাতিতে পরিণত করতে পারতেন । (কিন্তু তা তিনি করেন নি)। কারণ, তিনি তোমাদের যে পথনির্দেশ ও বিধান দিয়েছেন, তার আলোকেই তোমাদের পরীক্ষা করতে চান । অতএব তোমরা সৎকর্মে প্রাণপণ প্রতিযোগিতা করো । (আয়াত ৪৮, সূরা মায়েদা)।
এসব আয়াতের অর্থ আমি যা বুঝেছি তা হোল, মহান আল্লাহ নিজে ইচ্ছে করেই বিভিন্ন ধর্মের অস্তিত্ব বজায় রেখেছেন । ফলে এ নিয়ে বিভেদ সৃষ্টি না করে সকলেই (বিশ্বাসী অবিশ্বাসী) নিজেদের মধ্যে সৎকর্মের প্রতিযোগিতা করবে- এটাই পবিত্র কোরআনের নির্দেশনা ।
বিশ্বাসীদের সৎকর্ম বিষয়ে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে,
“বিশ্বাসী পুরুষ হোক বা নারী, যে-ই সৎকর্ম করবে তাকে দুনিয়ায় সার্থক জীবন দান করব এবং পরকালে সে তার কাজের শ্রেষ্ঠ পুরষ্কার পাবে । আয়াত ৯৭, সূরা আন- নহল) ।
মহান আল্লাহ নবী করিম (সঃ)কে সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন,
“প্রতিপালকের সন্তোষটি লাভের জন্য যারা সকাল সন্ধ্যায় তাঁকে ডাকে তাদের কাউকেই তুমি দূরে সরিয়ে দিওনা । তাদের কোন কাজের জবাবদিহিতার দায়িত্ব তোমার নেই, না তোমার কোন কাজের জবাবদিহিতার দায়িত্ব তাদের উপর বর্তায় । তাই তাদের কাউকে দূরে সরিয়ে দেয়ার অধিকার তোমার নেই । যদি সরিয়ে দাও, তাহলে তুমি জালেমদের অন্তর্ভুক্ত হবে” ।
(আয়াত ৫২, সূরা আন আম)।
পবিত্র কোরআনে আরও বলা হয়েছে,
“আল্লাহকে বাদ দিয়ে ওরা যাদের উপাসনা করে, ওদের (সেই দেবতাদের) গালি দিওনা । যদি দাও তাহলে ওরা অজ্ঞতাবশত আল্লাহকে গালি দেবে । (আয়াত ১০৮, সূরা আন আম) ।
বলা হয়েছে,
নিশ্চয়ই জেনো মুসলমান, ইহুদী, সাবেয়ী ও খ্রিষ্টানদের মধ্যে যেই আল্লাহ ও আখেরাতে বিশ্বাস করবে এবং সৎকর্ম করবে, তাদের কোন ভয় বা দুশ্চিন্তার কারণ নেই । (আয়াত ৬৯, সূরা মায়েদা)।
আরও বলা হয়েছে,
মহাবিচার দিবসে বিশ্বাসী, ইহুদী, সাবেয়ী, খ্রিষ্টান, অগ্নিউপাসক ও শরিককারিদের ধ্যানধারণার ব্যাপারে আল্লাহ চূড়ান্ত ফয়সালা করবেন ।
(আয়াত ১৭, সূরা হজ্ব) ।
এসব বিষয়ে পবিত্র কোরআনের নির্দেশনা খুবই সুস্পষ্ট । সবাই যদি মনোযোগ দিয়ে পবিত্র কোরআন পড়েন, তাহলে ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য বোঝা যায় ।
সত্যিকার অর্থে ইসলামে ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি বা অন্য কোন ধর্মকে অসম্মান করার কোন সুযোগ নেই ।
মহান আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন ।
১৪ অক্টোবর, ২০২১ । ইস্কাটন, ঢাকা ।