‘সেদিনই শিবির আন্দোলনটা নিজেদের কবজায় নিয়ে যায়’
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২ আগস্ট,শনিবার,২০২৫ | আপডেট: ১২:৫৬ এএম, ৩ আগস্ট,রবিবার,২০২৫

সংগৃহীত ছবি
২০২৪ সালের ১৯ জুলাই, তৎকালীন সরকারের তিন মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে ৮ দফার ঘোষণা দিয়ে পরদিন (২০ জুলাই) কালো ব্যাজ ধারণ ছাড়া কোনো কর্মসূচি নেই বলে জানান তিন সমন্বয়ক নাহিদ, হাসনাত ও সারজিস।
তবে ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা ওইদিনই ৯ দফা ঘোষণা করে তা প্রিন্ট, অনলাইন ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াতে প্রচার করা নিয়ে জীবনবাজি রাখা সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করে আব্দুল কাদেরের মাধ্যমে। মূলত সেদিনই শিবির আন্দোলনটা নিজেদের কবজায় নিয়ে যায়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সেদিনের ঘটনা বর্ণনা দিয়ে এসব তথ্য জানিয়েছেন বাংলাভিশনের সিনিয়র সাংবাদিক কেফায়েত শাকিল। তার ওই স্ট্যাটাসটি যোগাযোগমাধ্যমে ফেসবুকে ইতোমধ্যে ভাইরাল হয়েছে।
জুলাই আন্দোলনের উত্তাল দিনগুলোর স্মৃতিচারণ করে তিনি লেখেন, ঢাকার রাস্তায় যখন প্রতি মুর্হূর্তে ছাত্র জনতার লাশের স্তূপ জমছিল, তখন আওয়ামী লীগ সরকারের তিন মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন তিন সমন্বয়ক। সেখানে তারা ৮ দফার ঘোষণা দিয়ে পরদিন ২০ জুলাই কালো ব্যাজ ধারণ ছাড়া কোনো প্রতিবাদ কর্মসূচি নেই বলে জানান। সেই সময় হাসনাত বিবিসিকে বলেন, নাহিদের সঙ্গে ফোনে আলাপ করে তারা এই কর্মসূচির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, আমার খুব মনে পড়ে, সেদিন এই কর্মসূচি দেখে আমার সহকর্মী সাদ্দাম হোসাইন (Saddam Hossain) কেঁদেই দিয়েছিলেন। বলছিলেন, এত মৃত্যুর পর এটা মানা যায় না। এটা জাতির সঙ্গে প্রতারণা। আমি সাদ্দাম এবং নিয়াজ মাখদুম (Niaz Makhdum) ভাই নিজেদের মধ্যে চরম হতাশ আলোচনা করে বাসায় যাই।
বাসায় ঢুকতেই আমার সময় টিভির সাবেক কলিগ ও কালবেলার প্রতিবেদক অন্তু মুজাহিদ (Antu Mujahid) কল করে বলেন, শাকিল ভাই ৯ দফা পেয়েছেন? আমি বললাম, কিসের ৯ দফা? আট দফা দেখেই তো হতাশ। উনি বললেন, আপনাকে পাঠাতে বলব? আমি বললাম বলেন।
তারপর একটা নম্বর থেকে আব্দুল কাদেরের নামে ৯ দফার একটি এমএমএস আসে। সেই নম্বরে যোগাযোগ করে মাহাদী নামে একজনের সঙ্গে কথা বলে আব্দুল কাদেরের নম্বর নিই এবং ৯ দফা নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলি। কাদের আমাকে ফোনে বলেন ৮ দফা না, ৯ দফার সিদ্ধান্ত হয়েছে। যারা ৮ দফা ছড়িয়েছে এটা আমাদের সিদ্ধান্ত নয়। তারপর আমরাই সেটা বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রচারের চেষ্টা চালাই। বার বার তাদের কল দিয়ে পরামর্শ দেই। মিডিয়াগুলোতে প্রিন্ট প্রেস রিলিজ ও সিডিতে ভিডিওবার্তা পাঠাতে বলি।
এসবই ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদের আন্দোলন প্রচেষ্টা ছিল উল্লেখ করে এই সাংবাদিক আরও বলেন, এগুলো যে শিবিরের কাজ ছিল তখন না জানলেও অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে শিবির প্রকাশ্যে আসার পর জেনেছি। ওই মোবাইল নম্বরটি থেকে শিবিরের মিডিয়া বিভাগ আমার সঙ্গে আরও বেশ কয়েকবার যোগাযোগও করেছে। সেই সময়ের সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ দিয়েছে, প্রকাশনা পাঠিয়েছে।
কেফায়েত শাকিল বলেন, মূলত সেদিনই শিবির আন্দোলনটা নিজেদের কব্জায় নিয়ে যায়। ওইদিন থেকে আন্দোলনের অনেক কিছুর সঙ্গে জড়িয়ে যাই আমরা বেশ কিছু সাংবাদিকও। নিজেদের অজান্তেই শিবিরের সার্কেলে ঢুকে যাই আমরা। কারণ তখন আমরা সাদিক কায়েম, সিবগাতুল্লাহদের চিনতাম না। আমরা জানতাম তারা সমন্বয়ক। তাও আবার সাদিকের নাম জানতাম সালমান। সেই পরিচয়েই তারা আমাদের সঙ্গে আন্দোলনের বিভিন্ন বিষয় ডিল করতেন, সহযোগিতা নিতেন। সম্ভবত ১ আগস্ট রাতে সিবগাতুল্লাহ আমাদের বলেন, এ সপ্তাহে শেখ হাসিনাকে আমরা তাড়াবোই। তার পতন অনিবার্য। তার চারদিন পরই ঘটলো সেই ঘটনা।
সেই সময়ের সাক্ষী হিসেবে বলতে পারি, পদে সমন্বয়ক না হলেও ১৯ জুলাই থেকে মূলত আন্দোলন সমন্বয়ক সাদিক-সিবগাতুল্লাহই করেছেন। আর সামনে থেকে লড়েছেন আব্দুল হান্নান মাসুদ, রিফাত রশিদ, আব্দুল কাদেররা।
তিনি বলেন, ২০ জুলাইয়ের পর ১ দফার ঘোষণা পর্যন্ত নাহিদের আর কোনো ভূমিকা কারও জানা আছে কিনা জানি না। অবশ্য এই সময়ের মধ্যে সে পুলিশের হেফাজতেই বেশি ছিল। তবে পুলিশ হেফাজতে লিখিতভাবে আন্দোলন প্রত্যাহারও তারা করেছিল। সত্যি বলতে সেই সময় যদি সাদিকরা আন্দোলন এগিয়ে না নিতো তাহলে তো ওদের লিখিত বার্তার মধ্যদিয়েই আন্দোলনের কবর রচনা হয়েছিল। বিজয় আর দেখা হতো না, আজ ক্রেডিটের মারামারিও হতো না।
তবে জুলাই আন্দোলনে নাহিদদের অনেক অবদান ও ত্যাগের কথা উল্লেখ করে সাংবাদিক শাকিল বলেন, এ আন্দোলনে নাহিদদের অনেক অবদান এবং অনেক ত্যাগ আছে যেটা অস্বীকার করলে জুলুম করা হবে। আমি তার অবদান অস্বীকার করছি না। কিন্তু উনারা যেভাবে ক্রেডিট নিয়ে মারামারি করছেন, এতে জাতীয় ঐক্যে বিভক্তি তৈরি হচ্ছে। যার ফল যাচ্ছে পরাজিতদের ঘরে। তাই আমার জানা সত্যটা না লিখে পারলাম না।
আরও পড়ুন
এই বিভাগের আরো খবর

চাঁদাবাজি করতে গিয়ে গ্রেপ্তার রিয়াদের দেওয়া ফেসবুক পোস্ট ভাইরাল

সেনাপ্রধানের ভূয়সী প্রশংসায় সারজিস আলম

কিসের স্বাধীন দেশ, আমার বাবাকে প্রকাশ্যে হত্যা করে মিছিল করতেছে

কারা চাঁদা নিচ্ছেন সেটা আর বললাম না, চাঁদা সাবধানে নিয়েন : ইলিয়াস
