avertisements 2

মাধবী-৬৯

মোঃ আসাদুজ্জামান
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৮ অক্টোবর,শনিবার,২০২২ | আপডেট: ০১:৪৭ পিএম, ৪ মে,শনিবার,২০২৪

Text

মাধবী,
আজ হেলাল হাফিজে মজেছি, তোমাতে প্রণত হয়ে তাঁর বাক্যে বলতে তোমাকে কই, ‘তারপর ফেরে, তবু ফেরে, কেউ তো ফেরেই, আর জীবনের পক্ষে দাঁড়ায় ! ভালোবাসা যাকে খায় এইভাবে সবটুকু খায়!’ সুনীল গঙ্গাপাধ্যায়ের মত তোমাকে যখন দেখি, তার চেয়ে বেশি দেখি 
যখন দেখি না।বিরহ যাতনায় রুদ্রের মত জোস্নার গন্ধ ভরা রাতে আকাশের হলুদ ছায়ায় তোমাকে খুঁজি । তুমিতো জানো মাধবী, মানুষের যৌবন শেষ হয়ে যায়, যৌবনবেদনা যায় না। তাই, সহসা ব্যাকুল বিকেলে বাজে তোমার বাসনাকরুণ দুরাশা ! আমি তোমার কাছে চেয়েছিলাম কিছু স্বপ্ন, কিছু মিথ্যে মধুর বোধহীন প্রতিশ্রুতি, তুমি দিয়েছিলে যৌবনের ধনুর্বাণ লুকানো ইচ্ছার শমীগাছ ! এই মিথ্যে প্রবোধ কিংবা শমীগাছের মাঝদিয়ে তোমার দিকে তাকালে মনে হতো তোমার দুটি বাহু সুদূরের দুটি পথ ! সেই সূদুরের পথ আজও খুঁজি গহীন অরণ্যে ! যুক্তরাজ্যে এখন পড়ন্ত বিকেল, মিঠেল রোদের হাওয়া, সাম্রাজ্যবাদের বিলাসী কাঠামোয় জীবন উপভোগ্য মনে হলেও তোমার শূণ্যতার কাছে সবই নস্যি ! সবকিছুর মাঝে তোমার কফি’র মগ, মন মেজাজে  শ্রাবণ মেঘের দোলা, উপেক্ষার দহণ, অবুঝের কাছে দেওয়া তোমার প্রতিশ্রুতি ভাঙার গল্প, তার শাসন, তোমার যাতনা, তাকে বৃথা সান্তনা দেওয়ার চেষ্টা, আরও কত কিছু ! ভালো আছোতো আমার শ্বাসতঃ সুন্দর মাধবী ?!
মাধবী,
২ অক্টোবর ২০২২ ইং তারিখে ভারত থেকে প্রকাশিত দৈনিক ‘INDIA TODAY’ পত্রিকাটি বাংলাদেশের খুন-গুম নিয়ে কথা বলায় জাতিসংঘ, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, অধিকার সহ অন্যদের কর্মকান্ডের উপর একটি নেতিবাচক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে । এই প্রতিবেদন ডুবন্তপ্রায় ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ সরকারকে উদ্ধার করার একটি অপকৌশল মাত্র। গোটা সংবাদটিতে  সরকারের সমালোচকদেরকে বিষোদগার করা হয়েছে । প্রকাশিত প্রতিবেদনটি যে কেউ পড়লেই পরিস্কার হবে  যে সরকারের সকল অপকর্মকে জায়েজ করার জন্য এই ধরনের একটি ফরমায়েশী প্রতিবেদন তৈরী করা হয়েছে যা ‘বিদ্বেষপূর্ণ’, ‘বিভ্রান্তিমূলক’ এবং সত্য ও বাস্তবতা  বিবর্জিত । প্রতিবেদনে জনৈকা রহিমা খাতুনের হারিয়ে যাওয়ার ঘটনাকে সামনে আনা হয়েছে যার সাথে বিএনপি কিংবা উল্লেখিত সংগঠনগুলোর ন্যুনতম যোগসূত্র নেই । এমনকি, রহিমার হারিয়ে যাওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে আওয়ামীলীগ কিংবা সরকারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক কোন প্রতিক্রিয়াও নেই। উক্ত রহিমাকে সামনে এনে একদিকে যেমন ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলম, হুমায়ুন কবির, সুমন এর মত আরও অনেক গুম হওয়া মানুষের গুমের ঘটনাকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে, অন্যদিকে ‘চিহ্নিত সন্ত্রাসী কিংবা জঙ্গী কিংবা মাদক কারবারীদের’ খুন-গুম- মানবাধিকার লংঘনের  ঘটনাগুলোকে বৈধতা দেওয়ারও অপচেষ্টা করা হয়েছে ।  সঙ্গত কারণেই কেউ এই প্রতিবেদন বিশ্বাস করে না বলে আামি মনে করি । প্রতিবেদনটিতে  দুইজন ব্যাক্তিকে উদ্ধৃত করে তাদের মুখ দিয়ে, বিশেষ করে মিসেস সুলতানা কামাল চক্রবর্তীকে দিয়ে, বিএনপির বিরুদ্ধে বিষোদগার করানো হয়েছে। মিসেস চক্রবর্তী এবং ইমতিয়াজ আহমেদ সাহেব দুজনেই চিহ্নিতভাবে আওয়ামীলীগের পক্ষের মানুষ । এদেরকে ভোট ডাকাতির বিপক্ষে, বিনা বিচারে মানুষ হত্যার বিপক্ষে, ইডেন কলেজের ন্যাক্কারজনক ঘটনার বিপক্ষে, দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতির মিছিলে প্রকাশ্যে গুলি করে বিএনপি’র নেতা কর্মীদের হত্যার বিপক্ষে কিংবা সম্প্রতি রাজবাড়ীতে একজন ব্লাড ডোনারের ফেসবুকে মত প্রকাশের স্বাধীনতার জন্য গ্রেফতার করার বিপক্ষে রাস্তায় নামতে বা প্রতিবাদ করতে দেখিনি আমরা । India Today তে যে ভাবে এবং যে ভাষায় মিসেস চক্রবর্তী বিএনপির বিরুদ্ধে তাঁর অভিমত ব্যাক্ত করেছেন তা অনভিপ্রেত, অনাকাংখিত এবং ফ্যাসিবাদী সরকারের পক্ষে তাঁর অবস্থানকে দ্ব্যার্থহীনভাবে জনসমক্ষে নিয়ে আসা ।  তাঁর এই প্রতিক্রিয়া বাংলাদেশে চলমান মানবাধিকার লংঘনকে উৎসাহ দিবে  বলে আমি মনে করি। মিসেস চক্রবর্তীর প্রতিক্রিয়া দেখে কবি গুরু রবিন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোট গল্প ‘হৈমন্তী’র একটা ডায়লগ মনে পড়লো ! সেখানে, হৈমন্তী’র শ্বশুর বলেছিলেন, “দক্ষিণার জোরে সব ডাক্তারের কাছেই সব রোগের ঔষুধ মেলে” ! মিসেস সুলতানা কামাল চক্রবর্তী বা ইমতিয়াজ সাহেবরা হয়তো দক্ষিণা নেন না, তবে তাদের  আদর্শিক শক্তিকে রক্ষা করার জন্য তারা  মানবাধিকার লংঘনের পরও সরকারের পক্ষে জাতিকে প্রেসক্রিপশন/ছবক দিতে পারেন !! এটা জাতির জন্য দূর্ভাগ্য !
মাধবী,
জীবনানন্দ দাশের প্রেয়সীর মতো, 
      আমাকে খোঁজ না তুমি বহুদিন-  
      কতদিন আমিও তোমাকে খুঁজি  
      নাকো; এক নক্ষত্রের নিচে তবু-একই 
      আলো পৃথিবীর পারে আমরা দুজনে 
      আছি; পৃথিবীর পুরনো পথের রেখা 
       হয়ে যায় ক্ষয়, প্রেম  ধীরে মুছে যায়, 
       নক্ষত্রেরও একদিন মরে যেতে হয় ! 
মাধবী,
হেলাল হাফিজ আজ থেকে বহু বছর আগে আমার মনের কথা বুঝতে পেরে যথার্থই লিখেছিলেন, 
                কেন নাড়া দিলে? 
         নাড়ালেই নড়ে না অনেক কিছু 
           তবু কেন এমন নাড়ালে?
         পৃথিবীর তিন ভাগ সমান দু'চোখ     
          যার, তাকে কেন এক মাস শ্রাবণ    
                দেখালে!
          কেন ওভাবে নাড়ালে?
         যেটুকু নাড়ালে নড়ে না তুমুলভাবে    
                ভেতরে বাহিরে
           কেন তাকে সেটুকু নাড়ালে?
আমি এই নাড়ানোর কোন প্রতিকার পাবো না জানি ! তবে, হেলাল হাফিজের মত করেই বলি,
      মানুষ না বোঝে যদি আরেক মানুষ 
      আমি আহত হবো না, আহত হবো না
         কবিতার কসম খেলাম আমি শোধ     
               নেবো সুদে ও আসলে, 
                  এবার নিহত হবো।

 

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2