শ্যামা কাহন-৪

মেয়েটির নাম রমা 

রমা খোনকার, কুমারখালীর

বাসুদেবপুর খন্দকার  বাড়ির মেয়ে

খন্দকার টাইটেল আভিজাত্যে খোনকার।

সময়টা শেখদের, ওরাই উজ্জ্বল সবখানে,

সৈয়দ চৌধুরী মিয়ারা সব তলানিতে। 

ঝন্টু শেখ দারোয়ানী বাড়ির তৃতীয় প্রজন্ম

হেতমখাঁ দারোয়ানী বাড়ি! মনে আছে তো! 

শেখীয় জৌলুষ মন্টু শেখকে 

সিটি মেয়রের পেয়াদা বানিয়েছিল।

গেল দশকে মন্টুর প্রয়াণ হোল। 

পাঁচ ছেলের ছোটটা সবে হাইস্কুলমুখী

তবে বাপের বেটা বলতে সে ঐ ঝন্টুই।

আগের গুলো যে যার মত - কেউ কেরানী,

স্কুলের দপ্তরী, সিটি হাটের পাইকার, কিংবা

বানেশ্বর হাটে আলু পটলের আড়তদার। 

শ্যামার কথা কি আর বলি - 

জীবনের অতি আদিমতায় যৌবনে জং,

বড় ছেলে সুঠাম দেহের তাগড়া জওয়ান 

শান্তি মাসির তালুকে খাস পেয়াদা, 

মিটিং মিছিলে মাথা সাপ্লাইয়ের ঠিকাদার,

মন্টু মামার ধাঁচ তার চলনে বলনে। 

ছোটটা গঞ্জিকাপ্রেমী হিরোইঞ্চি 

বস্তির মোড়েই আস্তানা।

নতুন শতকে শ্যামার কোলে মেয়ে 

তবে শ্যামাকে শয্যাশায়ী করে। 

শ্যামার মেয়ে, রমা নামেই সাব্যস্ত হয় 

কন্যা সন্তানে মায়ের চোখে কালির ছাপ। 

এই নরক থেকে মেয়েকে বের করার আকুলতা

তার ছিল, ছেলেকে বলেওছিল।

মিলেও যায়! কুমারখালীর বাসুদেবপুর 

নিঃসন্তান মিঠু খন্দকারের মেয়ে এখন রমা।

স্কুল পেরিয়ে মেয়েটি কলেজ মুখী হোল

সমাজের হাজারো প্রতিবন্ধকতা। 

শ্যামা কন্যা আজ রমা খোনকার, পঞ্চবটি 

রাজশাহির খাঁবাড়ির নাতনী, হালে মহিলা

কলেজ রাজশাহীর একাদশের ছাত্রী।

ঝন্টু ডিগ্রী পড়লেও পাশ দেয়া হয়নি 

মহিলা কলেজের রাস্তাপারে ফাস্ট ফুডের

দোকান তার,সঙ্গে চটপটি ফুচক্যাও আছে।

পঁচিশ পেরোনো ঝন্টুর বেশ রমরমা ব্যবসা

স্কুল কলেজের তরুনীদের চাপ নিয়ে 

সকাল দুপুর পেরিয়ে যায়, সান্ধ্যকালীন

সময়েও জমাট তার কাফে-ডি জিএস

তরুন-তরুনীদের একটুকরো স্বর্গ যেন।

চঞ্চল চপলা রমাও এই ক'দিনে চেনামুখ।

ফুচক্যা সমোচাই তার প্রিয়, ঝন্টুর চোখ

এড়াইনি,অবশেষে বন্ধুত্বের চৌকাঠে পা।

বয়সের ব্যবধান আট দশ হবে

তবুও কেন যেন ঝন্টুর এখানেই শুরু।

দৌলদিয়া গণিকালয়ের শ্যামার গর্ভজাত 

রমা আজ খন্দকার পরিচয়ে রাজশাহী 

পঞ্চবটির খাঁ বাড়ির নাতনী, 

হেতমখাঁ মন্টুর ছেলে ঝন্টুর হাত ধরে 

গুড়ি পাড়ার পাশ ঘেঁষে পদ্মা পাড়ে- 

দুজনের একান্তে হাত ধরে চলা।

মন্টু শেখের নামডাক হওয়া ছেলেটি

নিয়তির অদৃশ্য ইশারায় কালের সাক্ষী 

অজান্তেই শাপমোচনের জমাদার যেন।

ফুটফুটে নিষ্পাপ রমাও আজ মূলস্রোতে

মিঠু খোনকারের কন্যা - বিধির লিখন।

ওরা নিজেরা নিজেদেরকে চিনেছে 

জীবন গড়ার স্বপ্নে হয়েছে চোয়ালবদ্ধ

অবশেষে সামাজিক শাসনে যুগলবন্দি।