avertisements 2

রক্তক্ষয়ী সংঘাতের শঙ্কা মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৯ মার্চ,বৃহস্পতিবার,২০২৩ | আপডেট: ০১:৪২ এএম, ৪ মে,শনিবার,২০২৪

Text

রাজধানীর খ্যাতনামা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে চলছে চরম উত্তেজনা। এখানে নজিরবিহীনভাবে প্রধান শিক্ষক হিসেবে দুইজন দায়িত্ব পালন করছেন। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) প্রতিষ্ঠানের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক জাকির হোসেনকে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে নির্দেশ দিলেও পদ ছাড়েননি অধ্যক্ষ দাবিদার ফরহাদ হোসেন। প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় দু’জনই পাল্টাপাল্টি নির্দেশ দিয়ে চলেছেন। সর্বশেষ ঐতিহাসিক ৭ মার্চ পালন নিয়ে একপক্ষ অপর পক্ষকে বাধা দেয়। এ নিয়ে প্রতিষ্ঠান বিস্ফোরণোন্মুখ হয়ে ওঠে। বর্তমানে দু’পক্ষে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে। যে কোনো সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ বেধে যেতে পারে।

পরিচালনা কমিটির সভাপতি দোলোয়ার হোসেন আগামী ১৫ মার্চ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছেন। অপরদিকে মাউশি নিযুক্ত প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন ১২ মার্চ থেকে যথারীতি ক্লাস ও পরীক্ষা চলবে বলে নোটিশ জারি করেছেন। এ অবস্থায় চরম বিপাকে পড়েছেন রাজধানীর নামি প্রতিষ্ঠান মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রায় ৪০ হাজার শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা।

তারা বর্তমান অ্যাডহক কমিটি ভেঙে দিয়ে ঢাকার জেলা প্রশাসক বা বিভাগীয় কমিশনারকে প্রধান করে নতুন গভর্নিংবডি গঠনের দাবি জানিয়েছেন। ঢাকা শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বর্তমান অচলাবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে তারা কমিটি ভেঙে দেওয়ার কথা ভাবছে।  মিরপুরের স্বনামধন্য এ প্রতিষ্ঠানটিতে সাম্প্রতিক সময়ে বড় ধরনের দুর্নীতির ঘটনা সরকারি তদন্তেই ধরা পড়েছে।

এ অবস্থায় এখন প্রতিষ্ঠান প্রধানের দায়িত্ব নিয়ে ক্যাম্পাসে বর্তমানে অনেকটা যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ পদে ফরহাদ হোসেনের নিয়োগ বিধিসম্মত না হওয়ায় এবং চাকরির বয়স শেষ হয়ে যাওয়ায় জাকির হোসেনকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয় মাউশি। তাঁকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য প্রতিষ্ঠানটির গর্ভনিং বডিকে নির্দেশ দেওয়া হয়।

এই চিঠির পর জাকির হোসেন স্কুলে গিয়ে সভাপতিকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করেন। কিন্তু সভাপতি দায়িত্ব না দিয়ে সময়ক্ষেপণ করেন। একসময় দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে অপারগতা প্রকাশ কবরেন। পরে জাকির সিনিয়র শিক্ষকদের উপস্থিতিতে দায়িত্ব বুঝে নেন। এর পরপরই তিনি প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য বেশ কয়েকটি নোটিশ ও আদেশ জারি করেন।

অন্যদিকে, জাকির কোনো নোটিশ দিলেই একটু পরই অজ্ঞাত স্থান থেকে পাল্টা নোটিশ জারি করছেন ফরহাদ। প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষকরা জানিয়েছেন, ফরহাদকে এ ক্ষেত্রে সহায়তা করছেন পরিচালনা কমিটির সভাপতি দেলোয়ার।

কয়েকজন শিক্ষক জানান, স্থানীয় কিছু সন্ত্রাসী জাকিরকে নানা ধরনের হুমকি দিচ্ছে। শিক্ষকরা এর নেপথ্যে সভাপতিকেই দুষছেন। শিক্ষকরা জানিয়েছেন, ঢাকা শিক্ষা বোর্ড, শিক্ষা অধিদপ্তরসহ সরকারি তিনটি সরকারি তদন্তে ফরহাদ হোসেনের নিয়োগ ‘অবৈধ’ প্রমাণিত হয়।

প্রধান শিক্ষক জাকির সমকালকে বলেন, ৭ মার্চের অনুষ্ঠান শুরুর আগে দেলোয়ার ও ফরহাদ প্রতিষ্ঠানের অডিটোরিয়ামের চাবি লুকিয়ে রাখেন। অডিটোরিয়ামে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয় তাঁদের। পরে বিক্ষোভ মিছিল শেষে মূল ক্যাম্পাসে আলোচনা সভার আয়োজন করেন তাঁরা।

গতকাল অজ্ঞাত স্থান থেকে ৫ দিন স্কুল বন্ধের নোটিশ জারি করেন সভাপতি দেলোয়ার হোসেন। এ নোটিশ বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।  অন্যদিকে জাকিরও পৃথক নোটিশ জারি করেন। তিনি প্রধান শিক্ষকের সংরক্ষিত ছুটির মধ্যে থেকে এক দিনের ছুটির (৯ মার্চ) ঘোষণা দেন। ফলে ছুটি নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়েছে।

বুধবার এ বিষয়ে ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার সমকালকে বলেন, স্কুলের ছুটি দেওয়ার এখতিয়ার গভর্নিং বডির নেই। তিনি জানান, শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে জাকির হোসেনকে প্রধান শিক্ষক পদে দায়িত্ব দেওয়ার জন্য পরিচালনা কমিটির সভাপতিকে চিঠি দিয়েছে। তিনি দায়িত্ব বুঝিয়ে না দিলে কমিটি ভেঙে দেওয়া হবে।

মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদও একই তথ্য জানান। তিনি বলেন, ফরহাদের নিয়োগ মোটেও বিধিসম্মত হয়নি। তাই তিনি অধ্যক্ষ পদে থাকতে পারবেন না। জাকির হোসেনকে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেওয়ার জন্য আদালতের নির্দেশনাও আছে। পরিচালনা কমিটির এ নির্দেশনা না মানলে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2