
জালাল উদ্দিন আহমেদ
বাঙালীর হাজার বছর
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১৬ আগস্ট,সোমবার,২০২১ | আপডেট: ১২:৩৫ এএম, ১৭ মে,শনিবার,২০২৫

বাঙালী নিজেদেরকে বাঙালী ভেবেছে তখনই যখন এই ভূখন্ডে তাদের আপন অস্তিত্বের মূলে বিজাতীয় আগ্রাসন চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা হয়েছে। নয়'শ খ্রীষ্টাব্দের সেই পাল বা সেন রাজত্বের দিকে তাকালে দেখি, কি ভয়াবহ এক বিজাতীয় কৃষ্টি কালচারে নিষ্পেষিত ছিল এই বাংলার আদি আবাহনের আঞ্চলিক জাতিগোষ্ঠী।.প্পপ যখন ভারতীয় ইতিহাস পড়ে বড় হয়েছি, তখন জেনেছি ওই পাল ও সেনরা ছিলেন বাঙালীর উত্থানের সময়কাল। বাঙালী শাসনের সুবর্ণ সময়। কিন্তু নাড়ির খোঁজ নিতে গিয়ে যা জেনেছে বা যা জেনে নিজেকে বাঙালী রাজা মহারাজার উত্তর পুরুষ ভেবে গর্বিত হতাম তা কিন্তু শুভংকরের ফাঁকি ছাড়া কিছুই নয়। আমাদের গর্বের সেই পাল সেনরা প্রকৃত অর্থে বাঙালী ছিলেন না। পালরা ছিলেন ইউপি মগধের উত্তর ভারতীয় ক্ষাত্র বংশীয় যোদ্ধার জাতি। তারা বাংলা দখলে নিয়ে পাল বংশের পরম্পরা তৈরী করে। পরবর্তীতে দক্ষিন ভারতের আর্য রক্তের ব্রাহ্মন্য সেনরা বাংলায় তাদের রাজ কায়েম করেন। তারা সংস্কৃত ভাষা রাজভাষা হিসাবে প্রচলন করেন যা বাঙালীর মুখের ভাষা নয়। এক্ষেত্রে পাল ও সেনদের উৎসাহেই এই ভূখন্ডে হিন্দু ধর্মের ধর্মীয় বিভাজন প্রকট আকার ধারন করে। তাদের ধর্মের ব্রাহ্মন, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শুদ্রের সুত্রপাত সম্ভবতঃ সে সময়ের সৃষ্টি বলেই ইতিহাসবিদেরা অনুমান করেন। প্রকৃত অর্থে এই বাংলা মুলুকের আদি বাসিন্দা ও বসতির মূল মানব সন্তানেরা ছিলেন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গোষ্টি সমন্বয়ের এক সামষ্টিক জাতিস্বত্ত্বার আধিবাসী। কৃষিজীবি, মৎসজীবি এবং ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পেশার গোষ্টি কেন্দ্রিকতায় তাদের জীবন ও জীবিকার সংস্থানে তারা সমাজবদ্ধ ছিল। ধর্ম্মান্ধতার গোঁড়ামির অক্টোপাশে তারা কখনোই বিগ্রহ বিবাদে জড়িত ছিল না। মনের শান্তি ও সমাজ সংসারের শৃংখলা আবদ্ধে তারা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গোষ্টি কেন্দ্রিকতায় নিজস্ব আয়োজনে বিভিন্ন শক্তি ও অপদেবতার পুজা পার্বন পালন করতো। তাইতো অনেক ইতিহাসবিদ বলে থাকেন হিন্দু রাজা মহা রাজারা বাংলার প্রবল পরাক্রমশালী শাসক ছিলেন বটে কিন্তু তারা বাঙালী হতে পারেন নি। বাংলা ভাষা ও কৃষ্টি কালচারকে তারা আপন করে নেয়নি। বরং সংস্কৃত বা পালি ইত্যাদি ভাষায় তাদের রাজ কার্য চালিয়েছেন। সাধারন বাঙালীর ভাষাকে লৌকিক ভাষা হিসাবে গন্য করেছেন। অর্থাৎ রাজা, রাজ কর্মচারী ও ব্রাহ্মন পন্ডিতের ভাষা করে তারা সংস্কৃতকে রাষ্ট্রীয় ভাষা হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছেন।
হাজার বছরের বাংলাকে নিয়ে যখন আমরা চিরুনী বিশ্লেষনে বসি তখন এই বাংলার আচার-বিচার গতি-প্রকৃতির কয়েকটি অধ্যায়কে সামনে না এনে পারি না। মৌর্য শাসন গুপ্ত শাসন বা পরবর্তীতে স্বাধীন বাংলা শাসনের গোচন্দ্র, ধর্মাদিত্য কিংবা শশাঙ্ক, হর্ষবর্ধন, রাজ্যবর্ধন ইত্যাদি রাজা মহারাজাদের বাংলা শাসনের কেচ্ছা কাহিনী আমরা শুনেছি। কিন্তু শশাঙ্কের মৃত্যুর পর বাংলা অঞ্চলে মাৎসন্যায় সময়কাল চলে এক'শ বছর ধরে। মাৎসন্যায় কথাটির আভিধানিক অর্থ হোল বড় মাছ ছোট মাছকে খাবে বাধাহীন ভাবে। অর্থাৎ মহারাজা রাজাকে কিংবা রাজা ক্ষুদ্র জায়গীর জমিদারকে খুন করে রাজ্য ও সম্পদ লুট করবে বাধাহীনভাবে। সত্যিকার অর্থে মাৎসন্যায়ের এই এক'শ বছর ছিল বাংলার যুদ্ধ বিগ্রহ, অরাজকতা ও নাকালের সময়কাল। এরপরেই আমরা পাই চার'শ বছরের পাল বংশীয় বাংলা শাসনের রাজত্ব। সে সপ্তম শতকের মাঝামাঝি সময়। পাল বংশীয় রাজারা ছিলেন শৈব পুজারী। আবার কেহ কেহ ছিলেন বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী। ক্ষাত্র বংশীয় এই রাজবংশ ছিল দৌর্দন্ড প্রতাপশালী। তবে এই বংশের দীর্ঘ সময়ের রাজা ধর্মপাল ছিলেন অত্যন্ত সহনশীল এবং প্রজা বৎসল। তার সময়ে প্রজারা যার যার ধর্ম ও আচার অনুষ্ঠান নিজেদের মত পালন করতে পারতেন। তবে পালেরা সাধারন প্রজাদের রাজকার্যে নিতে পছন্দ করতেন না। তারা ব্রহ্মনদেরকে রাজ কার্যের সর্বক্ষেত্রে বিশ্বাস করতেন। এমনকি রাজ্যের প্রধানমন্ত্রী হিসাবেও তারা ব্রাহ্মনদেরকে নিয়োগ দিতেন। জাত-পাতের জটিলতা বাংলার উঠানে তখন থেকেই শুরু। আর যেহেতু ব্রাহ্মনরা ধর্ম গুরু ও রাজ কার্যের প্রথম সারিতে ছিলেন বিধায় তারা হিন্দু ধর্মের প্রকৃত পাঠের সরল উক্তিগুলি সাধারন হিন্দুদেরকে বুঝাতেন না। তারা নিজেদেরকে ঈশ্বরের দূত এবং ঈশ্বর প্রদত্ত ধর্মের বিধি বিধানের বয়ান ও খন্ডন করার দায়িত্বও তাদের বলে তারা সাধারন মানুষকে বুঝাতেন। এমনকি ধর্মীয় গ্রন্থ পড়া কিংবা মন্দিরে প্রবেশেও নিম্ন বর্নের হিন্দুদের তারা অছ্যুত করে রেখেছিল। শোনা যায় হিন্দু ধর্মের নারী জাতিরাও এই ব্রাহ্মন্য কুটচক্রে তাদের ধর্মীয় পবিত্র গ্রন্থ সমূহ ছোঁয়া বা পড়ার ব্যাপারে নিষিদ্ধ ছিল। পাল বংশের পতনের পর বাংলায় সেন বংশের রাজত্ব কয়েম হয়। এই সেনরা ছিলেন কর্নাটক ও দক্ষিন ভারতের আর্য রক্তের ব্রাহ্মন। তারা কখনোই তাদের গোত্রীয় উঠানে বাংলার সাধারন মানুষকে সমান সারিতে ফেলতেন না। বাংলার পরাক্রমশালী শাসক হিসাবে তারা বঙ্গের বাঙালীকে সেবক ও পুজক হিসাবে গন্য করতেন। এভাবেই প্রথম সহস্রাব্দের সপ্তম শতক হতে ১২০৪ সাল অব্দি বাংলায় পাল ও সেন রাজত্বের সময়কাল অতিবাহিত হয়।
বাঙালীর আপন আঙ্গিনায় কিছুটা স্বস্তির বাতাস বইতে শুরু করে বার'শ শতকের পর। যখন মুসলিম সাম্য ও সৌহার্দের বাণী অবহেলিত বঙ্গের জন গোষ্ঠিতে প্রচার হওয়া শুরু হয়। অবশ্য এর আগেও পারস্য ও আরব ভূখন্ড হতে পীর ফকির ও ওলেমা মাশায়েখরা তবলিগি আদলে এতদাঞ্চলে ইসলাম প্রচারে আগমন করেন। আমরা জেনেছি সেই আট'শ শতকে ইরানের বোস্তাম নগরের বিখ্যাত সাধক ও ইসলাম প্রচারক বায়েজিদ বোস্তামী(রহঃ) চট্টগ্রামের নাসিরাবাদে ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে তার আস্তানা গাঁড়েন। এরপরের দশক ও শতক জুড়ে ইসলামী ধর্ম প্রচারকদের বঙ্গদেশে আসার অনেক কাহিনী আমরা জেনেছি। ইসলামী ধর্ম গুরুদের এভাবে বাঙলায় ইসলামের শান্তি ও সাম্যের বাণী প্রচার এবং মহানবীর পবিত্র জীবনীর আলোক ছটায় ততদিনে বাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে তারা স্বাগতম ও সমাদার পেয়েছিলেন। ফলে এতদাঞ্চলে ইসলামের প্রচার ও প্রসারে তারা কামিয়াব হয়েছিলেন। পরবর্তীতে মুসলমান শাসকেরা যখন বাংলা তথা ভারতের শাসনভার নিজেদের ঘাড়ে নিলেন তখন থেকে ভারতীয় উপমহাদেশে সেইসব শাসক, যোদ্ধা ও পীর ফকিরের সমন্বয়ে ইসলামের শান্তির বানী প্রচারে ব্যপকতা পায়। ফলে বর্ণ বিদ্বেষের নিপীড়িত হিন্দু জাতিস্বত্ত্বার উল্লেখ্যোগ্য মানব সন্তান ইসলাম ধর্মের ছায়াতলে সমবেত হন। এবং এই প্রক্রিয়ায় মুসলমানদের ছয়'শ বছরের ভারত শাসনে এতদাঞ্চলে মুসলমান জাতিস্বত্ত্বার বিকাশে ব্যপকতা পায়।
বাংলায় মুসলিম শাসনের যে বৈশিষ্টে বঙ্গদেশের সিংহভাগ মেজরিটি নিয়ে ইসলামের আত্মপ্রকাশ ঘটে তার মুলে ছিল মুসলমান শাসক, যোদ্ধা কিংবা পীর ফকিরদের বাংলার সামাজিক অর্থনৈতিক ও অন্যান্য পারিপার্শিক সমস্ত কাজকর্মে তারা{ স্থানীয় বাঙালীদের সাথে আত্মিক, পারিবারিক ও সামাজিক সমস্ত অঙ্গনেই মিশে গিয়েছিলেন। আপন করে নেয়ার ইসলামী এই শিক্ষার আলোক বর্তিকার ছটায় তারা বাংলার গনমানুষের আপন হতে পেরেছিলেন। এমনকি মুসলমান শাসকেরা তাদের রাজ কার্যের বিষয়টিও আমজনতার সম্পৃক্ততায় সমৃদ্ধ করেছিলেন। সেক্ষেত্রে বাঙালী তার আপন মেধা ও দক্ষতায় মুসলিম শাসকদের অংশীদার হতে পেরে উৎসাহ বোধ করে। এভাবেই মসলিম শাসকেরা বাংলায় তাদের বিশ্বস্ততা অর্জন করেন। মুসলিম জাগরনের ডি ফ্যাক্টো হিসাবে ইসলামের সমৃদ্ধি এভাবেই বিকশিত হয়। অপরদিকে হিন্দু রাজা মহারাজারা তাদের জাত পাত বর্ন বৈষম্যের সীমানার বাইরে গিয়ে তাদের রাজকার্য ও সামাজিক কোন ক্ষেত্রেই বাঙালী জনগোষ্টিকে সম্পৃক্ত করতে পারেন নি। এর ফলে ধর্মীয় জাতিস্বত্ত্বায় নাম থাকলেও জাত-পাত, ছ্যুত-অছ্যুত, উঁচু-নীচু বাছ বিচারে উক্ত সম্প্রদায়ের একটি বৃহৎ অংশ ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নেয়। ফলশ্রুতিতে বাঙালী জাতিগত স্বত্ত্বা অক্ষুন্ন রেখেই, ধর্মীয় জাতিস্বত্ত্বায় মুসলমানেরা ব্যপকভাবে আত্মপ্রকাশ করে।
বাংলায় মুসলিম আধিপত্যের রাজ্য প্রতিষ্ঠাকাল শুরু হয় ১২০৪ সালে খিলজী বংশীয় ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বখতিয়ার খিলজীর হাত ধরে। এভাবেই ১৩৩৮ সাল পর্যন্ত দিল্লির সুলতানিয়াতের আনুকুল্যে বাংলায় মুসলমান শাসন দীর্ঘায়িত হয়। তবে ১৩৩৮ এর পর হতে ১৫৩৩ সাল পর্যন্ত বাংলায় স্বাধীন সুলতানিয়াতের সূচনা হয়। এই সময়কালে বাংলা স্বাধীন মুসলিম শাসকের শাসনে পরিচালিত শাহ বংশীয় সুলতানরা বাংলার স্বাধীন সুলতান ছিলেন। এদের মধ্যে শামসিদ্দিন ইলিয়াস শাহ, সিকান্দার শাহ, নাসির উদ্দিন মাহমুদ শাহ, আলাউদ্দিন হোসেন শাহ প্রমুখ উল্লেখযোগ্য ছিলেন। ১৫৩৩ সাল হতে ১৫৩৯ পর্যন্ত সময়টায় দিল্লির মোঘল ও আফগানদের মধ্যে যুদ্ধ বিগ্রহে বাংলা অঞ্চলে অশান্তি আসে। তবে বাদশাহ হুমায়ুনকে পরাজিত করে আফগান সেনাপতি শেরখান (যিনি পরবর্তীতে শের শাহ নাম ধারন করেন) দিল্লির বাদশাহ হওয়াতে ১৫৩৯ হতে ১৫৭৬ পর্যন্ত বাংলা তথা ভারতে আফগানী খানদের শাসন কায়েম হয়। পরবর্তীতে দিল্লির পট পরিবর্তন হয়ে পুনরায় মোগলরা দিল্লির অধিকর্তা হন। ফলে ১৫৭৬ হতে ১৭১৭ সাল পর্যন্ত দ্বিতীয় পর্যায়ে মোগল শাসনের আওতায় বাংলায় সুবেদারী প্রথায় দেশ শাসিত হয়। তবে এর ভিতরে কিছু কিছু জমিদার এবং স্বঘোষিত রাজা, মোগলদের বেশ ব্যতিব্যস্ত করে রাখে। ফলে বাংলায় মোগলদের পুর্ন কর্তৃত্ব আনতে বেশ কয়েক বছর ব্যয় হয়। বাংলার ঐসকল আঞ্চলিক শক্তি বা জমিদারদের বাংলার বারো ভুঁইয়া বলা হোত। আমরা ছোটবেলায় ওইসকল বারো ভুঁইয়াদের শক্তিমত্তা ও দৌরাত্মের কাহিনী পড়েছি। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন ইসা খান, মুসা খান, চাঁদ গাজী, সেলিম গাজী, কেদার রায়, শের খান, মাহমুদ খান, আনোয়ার গাজী, মাধব রায়, হাজি সামসুদ্দিন বাগদাদি প্রমুখ। দিল্লির মোগলদের সুবেদারী প্রথায় বাংলা তার নিজস্ব স্বায়ত্ব শাসনে পরিচালিত হয়। সুবেদার হোসেন কুলি হতে শায়েস্তা খান এবং সর্বশেষ সুবেদার দ্বিতীয় মীর জুমলা মতান্তরে মুর্শিদ কুলি খান দিয়ে শেষ হয় সুবেদারী শাসন। এরপর শুরু হয় নিয়াবত আমল বা স্বাধীন শাসন। মুর্শিদ কুলি খান থেকে আরম্ভ করে এই স্বাধীন নিয়াবত বা বাংলার স্বাধীন স্বত্ত্বার শাসন চলে ১৭১৭ হতে ১৭৫৭ সাল পর্যন্ত। লক্ষ্য করা যায় বাংলা শাসনের এই সাড়ে পাঁচ'শ বছরের ইতিহাসে মুসলমানেরাই বস্তুতঃ বাংলার শাসক ছিলেন।
১৭৫৭ হতে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত বাঙালী মূলতঃ পরাধীনতার গ্লানিতে নিমজ্জিত হয়। পুর্ববর্তী ১২০৪ হতে ১৭৫৭ পর্যন্ত এই সাড়ে পাঁচ'শ বছরে বাঙালী বিকিশিত হয়েছে। আপন বৈভবে নিজ উঠানে বাঙালী আত্মোপলব্ধির জায়গায়গুলো ধীরে ধীরে পুনররুদ্ধার করেছে। নিজেদের প্লাটফরমে দাঁড়িয়ে কোমর শক্ত করার উপলক্ষ্য পেয়েছে৷ কারন হিসাবে বলা যায় ধর্মের প্রাধান্য নিয়ে ব্রাহ্মন্য আচরনে বাঙালী যখন নিজেকে অছ্যুৎ অবাঞ্চহিত ভেবেছে তখন ইসলামী শাসনের শান্তি ও সৌহার্দের বানী ও প্রয়োগিক আচরনে বাঙালী তার সামাজিক ভারসাম্যতায় মাথা উঁচু করার জায়গায় পেয়েছে। ইসলামী শাসন ও তার জাগরনে বাঙালী তার ভাষা পেয়েছে। বাংলা সাহিত্য ও কাব্যরীতিতে ভাষার প্রায়োগিক পথে চলার দিশা পেয়েছে। বাংলা সন ও বাংলার নিজস্ব টাকার প্রচলন হয়েছে। যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠি নিয়ে আজকের দিনে এত এত মাথা ব্যথা, সেই রোহিঙ্গা সমন্বয়ে সৃষ্ট আরাকানীয় রেনেসাঁয় বাঙালীর সাহিত্য ও কাব্যরীতির উচ্চারনে নিজেদের আপন অস্তিত্বের কথাগুলি লিপিবদ্ধ করেছে। সেক্ষেত্রে হিন্দুত্ববাদী আচরনের ক্ষাত্রীয় দুর্বিনীত আচরন ও ব্রাহ্মন্যবাদী গোষ্ঠীর বর্নবাদী আচরনের নতুন চারাগাছ রোপন করে এই বঙ্গভূমিতে হিন্দুরা বিভাজনের সুষ্পষ্ট রেখা তৈরী করে চলাফেরায় নিজেদেরকে স্পষ্টিকরন করেছে। বাঙালী মুসলমান ও অধঃস্তন দুটি গোত্রের হিন্দুরা নিজেদের ধর্মীয় জটাজাল ছিন্ন করে বাঙালী হয়ে মুসলিমদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়েছেন। বৃটিশ পরাধীনতার ১৯০ বছরের সেইসব দিনের চালচিত্রে আমরা দেখি কংগ্রেস,আরএসএস এর মুখোশে তারা কিভাবে আর্য সমিতি, গোরক্ষা সমিতি, অনুশীলন ক্লাব, হিন্দুর ভারত হিন্দুর হবে নামক বহুবিধ ধর্মীয় সংগঠনের জন্ম দিয়েছে। এর মাধ্যমে ভারতীয় তথা বাঙালী সমাজে এটা বুঝানোর চেষ্টা করেছে যে বাঙালী মানেই হিন্দু এবং হিন্দু মানেই হিন্দুস্থান। ওইসব সভা সমিতি ও ক্লাবের সদস্যদেরকে উগ্র হিন্দুত্ববাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদেরকে উগ্র ধর্ম বিদ্বেষী বানিয়েছে। সাধারন হিন্দু সমাজকে তারা বুঝাতে সক্ষম হয়েছে এতদিনের মুসলিম শাসনের ভারত পরাধীন ছিল। কিন্তু যে হিন্দু শাসন (যা বার'শ শতাব্দীর আগের কথা) ভারতীয় উপমহাদেশে কতিপয় বর্নবাদী বিচ্ছিন্ন রাজা মহারাজাদের ভোগ বিলাস ও যুদ্ধ বিগ্রহের সমতল ভূমি ছিল, যারা ধর্মের বর্ন অহংকারের দাপটে বহু বর্নের হিন্দুদের প্রভু বা রাজদেবতা ছিলেন তারা কখনোই একখন্ড বৃহৎ ভারতের রুপকার ছিলেন না। তারা এটা কখনই বলে না, ভারত পুনর্গঠনে মোগল শৌর্য বীর্যের করতলে সৃষ্ট যে মহান ভারতের চাবিখানি মুসলমান শাসকেরা ভারতীয়দের হাতে তুলে দিয়েছিল সেটা বেচাকেনা করেই তো আজকের দিনের ভারত আভিজাত্যের বড়াইয়ে দুনিয়া কাঁপাচ্ছে। তাদের ইতিহাসে কখনোই পাওয়া যাবে না সম্রাট অশোকের দুর্বিনীত ও স্বেচ্ছাচারিতার কথা। তাদের ইতিহাসে কখনোই তারা শিবাজীকে সন্ত্রাসী বলে আখ্যায়িত করবেন না। বরং রবীন্দ্র উচ্চারনে তারা “শিবাজি উৎসব” এর দ্বারোদঘাটন করে “যবন” নিধনের যজ্ঞ করবেন। তাদেরকে কখনোই রানা প্রতাপাদিত্য বা অন্যান্য শিখ বা রাজপুত বিদ্রোহীদের গালমন্দ করতে দেখা যাবে না। বরং তারা ভারত বিনির্মানের মহা কারিগর সম্রাট আকবরকে নেশাগ্রস্থ লম্পট বা তার হেরেমের শত শত নারীর ইজ্জত আব্রু হরনের মুখরোচক কাহিনী ইতিহাসে তুলে আনবেন। তারা পীর দরবেশ আচরনের সম্রাট আওরঙ্গজেবকে খুনি পিতৃহন্তা বা ইসলাম প্রচারের সন্ত্রাসী প্রজা পীড়ক মোগল বাদশা বলে ঘৃনা ছড়াবে। আসি বাংলার কথায়। প্রকৃত অর্থে মুল বাংলা ছিল পুর্ববঙ্গ। আজকের যে বাংলাদেশ, সেটাই “বঙ্গ” নামে পরিচিত ছিল যা ফরাসী উচ্চারনে বাঙালা নামে চিহ্নিত হয়।। পশ্চিমের বাংলাকে “সুম্ম” বলা হোত, মতান্তরে গৌড়ও বলা হোত। যে বাংলায় তৎসময়ের পাল ও সেনরা এই বাংলার রাজা হয়েছিলেন তা কিন্তু গৌড় ও রাঢ় কেন্দ্রিক। পুর্ব বঙ্গের অনেক এলাকাই তাদের আওতার বাইরে ছিল। তারা মূলতঃ ইউপি বিহার উড়িষ্যা বাংলার রাঢ় ও গৌড় অর্থাৎ পশ্চিম বাংলা সমন্বয়ে তাদের বাংলা রাষ্ট্র গঠন করে। তারা মূলতঃ উত্তরবঙ্গসহ বর্তমান স্ট্রাকচারের পশ্চিম বঙ্গের প্রাধান্যেই রাজা মহারাজা ছিলেন। পুবের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজা বা জমিদারদের পরাভূত করে তারা প্রকৃত বাংলার সমগ্রতা নিয়ে কখনোই তাদের রাজ কায়েম করতে পারেন নি। তাছাড়া বর্নবাদী একপেশে আচরনে কাদা মাটির এটো ঘেটো নিয়ে বসবাস করা বাঙালী কখনোই তাদের আপনজন হতে পারেনি। বরং বর্নবাদী উঁচু শ্রেনীর হিন্দুরা নিম্ন বর্নের হিন্দুদের দিয়ে হুকুমের আদলে সমাজে সাম্প্রদায়িক ঝগড়া ঝাঁটি লাগিয়ে রেখে নিজেদের আধিপত্য নিরঙ্কুশ করতো। বৃটিশ কোম্পানী আইনের আওতায় বাংলাকে করায়ত্ব করার পিছনে উঁচু শ্রেনীর হিন্দু মাথা ওয়ালাদের প্রচ্ছন্ন মদত ছিল। অথচ ইতিহাসের প্রতিটি পৃষ্টায় তারা মুসলমানদের ঘাড়ে চাপিয়ে কাঁঠাল ভেঙ্গেছে। যেমন করে তারা ভারত ভেঙ্গে পাকিস্থান সৃষ্টিতে মুসলিম নেতাদের ঘাড়ে রেখে বন্দুক চালিয়েছে। বৃটিশ শাসনের কবল হতে ভারতকে স্বাধীন করার জন্য প্রথম স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন একজন মুসলিম আলেম। তাঁর নাম সম্ভবতঃ “ম” দিয়ে শুরু। ভারতের স্বাধীনতা যুদ্ধে সবচেয়ে বেশী জীবন দিয়েছে মুসলমানেরা। তারা সশস্ত্র যুদ্ধ করে ভারত স্বাধীন করতে চেয়েছিল। ভারতের India Gate এ যে তিরানব্বই হাজার হিন্দুস্থানী শহীদের নামে ফলক দেয়া আছে তার মধ্যে পঁয়ষট্টি হাজার ভারতীয়ই হচ্ছে মুসলমান। নিরপেক্ষ ইতিহাস থেকে যা পাওয়া যায় তার সারমর্ম হলো মুসল্মানেরা যেহেতু বৃটিশদের শত্রুপক্ষ ছিল বিধায় সেই সুযোগ নিয়ে উঁচু শ্রেনীর হিন্দু রাজা মহারাজাদের উত্তর পুরুষরা বৃটিশদের সন্তুষ্টি সাপেক্ষে এই মুসলিম নিধনের কর্মযজ্ঞে সহায়ক শক্তি সেজেছিল। ফলে বৃটিশদের Devide and Rule এর রোষানলে ভারতীয় তথা বাঙালী মুসলমানেরা সর্বক্ষেত্রে বৃটিশ শাসন ও বৃটিশদের good book এ থাকা অভিজাত হিন্দু জাতির কাছে প্রকাশ্যে ও অপ্রকাশ্যে নিগৃহীত বা হোঁচট খেয়েছে। এভাবেই নিরবিচ্ছিন্ন হিন্দু উপহাস ও বৃটিশ অবহেলার সন্ধিক্ষনে ইসলামের সাম্য ও সমঝোতার দিক্ষায় যখন ভারত বাংলা বা পাঞ্জাবে ঐক্যের ফল মিললো না তখন মুসলমানেরা তাদের তৌহিদি উচ্চারনে ইসলামী প্ল্যাটফরম বা মুসলিম লীগ গঠনে ভারতীয় তথা বাঙালী মুসলমানদের একাট্টা করার প্রয়াস নিল। তারপরে তো ইতিহাস। সেই ইতিহাসের কড়িকাঠেই জ্বলছি আমরা ভারতীয় হিন্দু ও মুসলমানরা।
কি বৃহৎ ভূখন্ড নিয়ে সিন্ধু সভ্যতার আলোকে ভারতবর্ষ পৃথিবীর বুকে একটি সুখী সমৃদ্ধশালী অঞ্চল ছিল। শুনেছি পৃথিবীর চাহিদার ২৫% খাদ্য শষ্য ভারত যোগান দিত। আবার সমগ্র ভারতের কৃষি পন্যের ৩০%ই নাকি বাংলা হতে সরবরাহ করা হোত। সেই ভারতের খনিজ, বনজ, কৃষিজ ও ব্যবসা বানিজ্যের গতি প্রকৃতি সুদুর ইউরোপ আফ্রিকা এবং দুরপ্রাচ্যে বিশেষভাবে স্থান করে রেখেছিল। ইতিহাস বলে - সিংহল, রেঙ্গুন, ভুটান আফগান, পাকিস্থান বাংলাদেশ নিয়ে বিশাল ভারত সাম্রাজ্য গড়ে উঠেছিল। অবশ্য বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তোলার সিংহভাগ অবদান ছিল মুসলিম শাসনের সাড়ে পাঁচ'শ বছরের কঠোর ও শক্তিশালী অবস্থান। মোগলদের সুশৃংখল ও সাম্যের পথ নির্দেশিকায় গড়ে উঠে মধ্য যুগের মহান ভারত। কিন্তু “ধর্ম” ভারতের সবকিছু অর্জনকে ম্লান করে দিল। সিংহল গেল। বার্মা গেল। পাকিস্থান হলো। পাকিস্থান ভেঙ্গে বঙ্গ অর্থাৎ বাংলা তার নিজ উঠানে গর্বিত বাঙালী হলো। মহান ভারত এভাবেই চিড়েচ্যাপ্টা হলো শুধুমাত্র ধর্মের কুপমন্ডুকতার অন্ধকার অধ্যায় রচনার মধ্য দিয়ে। শোনা যায় ধর্ম ও জাতপাতের সেই নোনা জলে এখনকার দিনে ভারত শাসিত পশ্চিমের বাংলা রাজ্যটি ভাগ হওয়ার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে। প্রাচীন বঙ্গের বা বাঙালার আমরা বাঙালী। মাছে ভাতের বাঙালী। রবীন্দ্রনাথের ভাষায় 'কাদা মাটির চাষা ভুষা বাঙালী'। আমরা বাংলাকে বাঙলায় সমুন্নত করেছি। বাঙালীর শ্রেষ্ঠ সন্তান আজ বাঙালীর চোখের মনি।এস বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা সেই বাঙালী আমাদের জাতির পিতা। বাঙালীর হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী সন্তানকে সামনে রেখে তাইতো আমরা বাঙালীর হাজার বছরকে নিয়ে গর্ব করি।
# ইতিহাস লেখা আমার কাজ নয়। ইতিহাস থেকে প্রাপ্ত খবরের “মুথা”টাকে বিন্যাসিত করে প্রিয় পাঠকদের পাতে দেয়াটাকেই মুখ্য ভেবে এই প্রয়াস নিয়েছি। “মুথা”র ব্যাপারটা জানা আছে তো? সিগারেট বা বিড়ি খাওয়ার শেষ অংশটুকুর যে সুখটানে ধুমপায়ীরা মোহাচ্ছন্ন হন সেটাই মুথার সুখটান তার স্বাদই আলাদা। ইতিহাসের সেই মুথার টানটা দেয়ার ঁঁকচেষ্টায় আপনাদের সময়টুকু চেয়ে নিলাম।
- 0 - -

ভারতে ভয়ানক চাপে নিষিদ্ধ আ. লীগ নেতারা, বড় নেতারা পালাচ্ছেন আমেরিকা-ইউরোপে

বিয়েতে ৫০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি, সরকারি কর্মকর্তা বর আটক

গ্রাম বাংলা

ভারতের আরও একটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে পাকিস্তান

গিরিশৃঙ্গের নীচেই গিরিখাদ

২ উপদেষ্টার সাবেক ব্যক্তিগত কর্মকর্তাসহ ৪ জনকে দুদকে তলব

হাসিনার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা ৬০০, পুলিশ তদন্ত শেষ হয়নি একটিও

মোদি অবশ্যই প্রতিশোধ নেবে, দেশকে সজাগ থাকার আহ্বান: ইমরান খান

করমুক্ত আয়সীমা বেড়ে হতে পারে ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা

আন্দালিব রহমান পার্থের স্ত্রীকে বিদেশ যাত্রায় বাধা

পাকিস্তানের আকাশজয়ী বাজপাখি নারী পাইলট আয়েশা

আ.লীগের খবর প্রকাশ করলে দুই থেকে সাত বছর শাস্তি

মমতাজ সংগীতশিল্পী থেকে যেভাবে হয়ে উঠলেন ফ্যাসিস্টের দোসর

শিশু আছিয়া ধর্ষণ ও হত্যা মামলার রায় ১৭ মে

সাবেক এমপি সংগীতশিল্পী মমতাজ গ্রেফতার

দুনিয়ার সবচেয়ে আজব সেতু বাংলাদেশে!

গাছের সঙ্গে বাঁধা সাত শিশু কাওছারের জীবন!

কারাগারে পরিকল্পনা, তিন মাসেই কোটিপতি ২ যুবক

সিডনিতে দুই বাংলাদেশীর আকস্মিক মৃত্যু

সিডনিতে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত তরুনী খুন

অক্সফোর্ডের করোনার ভ্যাকসিন বিরোধীতায় অস্ট্রেলিয়ার ইমাম ও আর্চবিশপ

অস্ট্রেলিয়ার কারাগারেই আরেক বন্দিকে কোপালেন সেই বাংলাদেশি ছাত্রী সোমা

কিশোরীর সাথে যৌন সম্পর্কের চেষ্টাঃ সিডনিতে বাংলাদেশী ছাত্র গ্রেপ্তার

মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়ার সেরা ৪-এ বাংলাদেশি-অস্ট্রেলিয়ান কিশোয়ার

হুইপপুত্রের গোপন ব্যবসার বলি তরুণ ব্যাংকার

খোলা চুলে সিগারেট হাতে এবার নতুন বার্তা দিলেন পরীমণি

কুইন্সল্যান্ডে বারবিকিউ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককের আকস্মিক মৃত্যু

মাছ ধরতে গিয়ে পানিতে পড়ে সিডনির দুই বাংলাদেশীর মৃত্যু

হাটে কচুর লতি বিক্রি নিয়ে মুখ খুললেন বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক
