
জালাল উদ্দিন আহমেদ
পাঁচ আগষ্ট'২৪ জমে থাকা প্রশ্নগুলি -১
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৪ আগস্ট,সোমবার,২০২৫ | আপডেট: ০৭:১৮ পিএম, ১৭ অক্টোবর,শুক্রবার,২০২৫

ক্ল্যাসথেনিসের নাম কি কেউ শুনেছেন! তিনি একজন গ্রীসের মানুষ। প্লেটো বলুন এরিস্টটল বলুন কিংবা তাদের গুরু সক্রেটিস, সবই তো ওখান থেকেই পয়দা হওয়া মনীষী। রাজনীতি গণতন্ত্র ও শাসনব্যবস্থার ঝুড়িভর্তি টোটকা এইসব মনীষীর মাথা থেকেই এসেছে। এবং প্রাচীনকালের সেই কবিরাজী হেকিমীর রেখে যাওয়া পুরিয়া নেড়েচেড়েই আমাদের আজকের অবস্থান। ভাগ্যিস আমার এই বাংলার মাটি ফুঁড়ে এসব মহামানবদের আবির্ভাব ঘটেনি। নইলে আজকের মির্জা খান আহমেদরা কোন্ মগডালে যে উঠে বসতেন তা সৃষ্টিকর্তাই ভাল জানেন। তবে মাথায় কিছু আছে নইলে এত এত বিদ্যাবুদ্ধির খুচরাপাতি আসে কোত্থেকে? কবে কোন সাহেব বিচারকের উক্তি What Bengal thinks today India thinks tomorrowকে নিয়েই আমরা উদ্ধৃতির ফুলঝুরি ছুটাই। কিন্তু কাহাবতের সেই নোয়াখ্যাল্ল্যা উপমাটা সত্যিই আজ মনে বেশ খোঁচা দিচ্ছে বলে মনে হয়। চল্লিশ হাত মাটির নীচ আর মাটির উপরের সেই প্রচলিত উপমাটি বোধ হয় আমার এই বাংলা(ভাষা)বেষ্টিত ভূখন্ডের পুরোটার জন্যই প্রযোজ্য। বাংলায় সিরাজ ছিল, সুভাস ছিল, ছিল মুজিবও। কিন্তু জগত শেঠ রাজ বল্লভ উমি চাঁদদের উত্তর পুরুষ হিসাবে সেখানে শ্যামা প্রসাদদের মত জাত পাতের মানুষজনও ছিল। আরো অনেক নাম এসে যাবে কিন্তু ইতিহাস সিদ্ধতা পায়নি বলে ওসব নাম এখন মুখে না আনাই ভাল।
১৯৭১ সনের মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সেই নয় মাসে এক রক্তক্ষয়ী মুক্তি সগ্রামের মধ্য দিয়ে কয়েক লক্ষ বাঙালীর জীবন ও এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাঙালী তাদের স্বপ্নের স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের জন্ম দিয়েছে। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের ৫৪তম বর্ষ ছিল গত বছর ২০২৪ ইংরাজী সন। একটি ঐতিহাসিক পটভূমি নিয়ে এই সন বা বছরটি বাংলাদেশী জনমানুষের কাছে অতীব গুরুত্বপুর্ণ। একটি দল ও তার শিরোমনির স্বৈরাচারীর ভূমিকায় থেকে পর্যায়ক্রমে একজন মাফিয়া শাসক হয়ে উঠার কথা বলতে গিয়েই এই রচনা লেখার তাগিদ অনুভব করছি। যতই অন্যায় করুন না কেন, যতই ক্ষমতার দাম্ভিকতায় তাঁর সারা জীবনের গণতান্ত্রিক আচরনের অর্জনকে এক লহমায় কালির এক আঁচড়ে মিটিয়ে দিন না কেন, তবুও তো তিনি সেই বাংলার দামাল ছেলে - আমাদেরই খোকা। সদ্য স্বাধীনতা অর্জনকারী একটি দেশে আপামর জনতার দোয়া ও আশীর্বাদের একমাত্র নেতা হয়ে তিনি যখন ক্ষমতার অপব্যবহারে নিজেকে ছত্রপতি ঘোষনায় একমেবাদ্বিতীয়ম হলেন তখন বাঙালী কোথাও যেন হোঁচট খেল। এবং এভাবেই স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের পথচলা শুরু হয়। বাঙালী স্বাধীনচেতা জাতি বটে, সেক্ষেত্রে রক্ত প্রবাহের ত্রুটি কিনা জানিনা, তবে প্রবাহমান জীবনে অধীনস্ত প্রজা হয়ে বেঁচে থাকার আকুলতাই তাদের কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে সহস্রাব্দের সবচেয়ে মূল্যবান আকাঙ্খা অর্থাৎ স্বাধীনতা প্রাপ্তির পরেও তারা দেশ শাসন, রাজনীতি, গণতন্ত্র ইত্যাদির আমানত দু’টি পরিবারের হেঁসেলে জিম্মি করে রেখেছে। এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় বাঙালীর আশা আকাঙ্খা ও তাদের জীবনাচারের স্বকীয়তা দুটি পরিবার কেন্দ্রিকতায় নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। ফলে দুই মহান ব্যক্তির পরিবার পরম্পরা আজ বাঙালীর স্বাধীন সার্বভৌম উঠানে ছাই ফেলতে ভাঙ্গা কুলোর সুযোগ নিয়ে স্বেচ্ছাচারিতার যাঁতাকলে বাঙালীকে কুরে কুরে খাচ্ছে।
যদিও বাঙালী তার হিসেবের কড়িকাঠে বরাবরই এর প্রতিবাদ করেছে কিন্তু সরল সমীকরনের পরিবর্তে তা রক্ষক্ষয়ী পথে সমাধান করতে হয়েছে। বিগত অর্ধ শতাব্দীর স্বাধীন বাংলায় এটাই যেন একটা অনিয়মের নিয়মাচার। শুধুমাত্র পরম আকাঙ্খার গণতন্ত্রকে ফিরে পেতে এভাবেই বাঙালীকে বার বার রাজপথে রক্ত ঢালতে হয়েছে। কিন্তু স্বৈরাচার সৃষ্টির শেকড়কে পোক্ত করার বেসিক চিন্তায় বাঙালী কখনোই হাত লাগাতে পারেনি। বলছি, বংশ পরম্পরার শাসক তৈরীর চক্র থেকে বাঙালী বেরিয়ে আসতে পারেনি। বাঙালীর এই অতি ভক্তির দৈনতায় দেশে বিভাজনের রাজনীতি পোক্ত শেকড়ের স্থায়িত্ব পেয়েছে। শিয়া সুন্নির চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মত বাংলাদেশ আজ পিতা ঘোষকের দুই মেরুতে বিভক্ত হয়ে ধুকছে। তারই ধারাবাহিকতায় বিগত পনের বছর দেশের শাসন ব্যবস্থায় আওয়ামী লীগ নামের পিতা পরম্পরার উত্তরাধিকার তার ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার মিশনে দেশে বর্গী শাসনের প্রবর্তন করে। শত অন্যায় অবিচার ও লুটতারাজের ঘটনা ঘটিয়ে দেশকে সব দিক দিয়েই অন্তঃসার শূন্য করে ফেললেও প্রতিবাদ করার রাজনৈতিক সমস্ত মত ও পথকে নিশ্চিহ্ন করতে দুর্বার হয় তারা।জাতির সামনে এক পরাক্রমশালী স্বৈরশাসকের রূপ নিয়ে তারা বাংলার মাটিতে পিতৃদেব সৃষ্ট একপক্ষীয় পথেই এগোতে থাকে।
বাংলায় বহুল প্রচলিত “পচা শামুকে পা কাটা”র প্রবচনটাই শেষমেশ এই জগদ্দল পাথরকে খান খান করে দিল। সাধারন ছাত্র সমাজের মেধা মূল্যায়নে সরকার আরোপিত অধিকতর কোটা সংরক্ষনের বোঝা তাদের জীবন গড়ার স্বপ্নকে বাধাগ্রস্ত করছে - এই কোটা ব্যবস্থার বিরোধিতায় তারা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন গড়ে তুলে। কিন্তু স্বৈরাচারী শাসক নিজেদের অপকর্মের বোয়াল মাছটিকে শাক দিয়ে ঢাকতে গিয়ে সর্বক্ষেত্রেই বিরোধী রাজনীতির ভুত দেখতে পায়। ফলে যেকোন বিরোধিতাকেই তারা শাসন ক্ষমতা ও রাজনীতির প্রতিপক্ষ মনে ক’রে তাদের প্রচলিত দমন নীতিতেই এগিয়ে যায়। হয়েছিলও তাই। ২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে গতি পাওয়া ছাত্রদের এই বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনকে তৎসময়ের আওয়ামী সরকার (যারা গত পনের বছর ধরে প্রতিযোগিতাহীন রাজনীতির যুপকাষ্টে বাংলায় স্বৈর শাসন চালিয়েছিল) ছলচাতুরীর আশ্রয়ে কাবু করতে না পেরে অবশেষে বন্দুকের নলের সাহায্যে দমানোর পথ বেছে নেয়। ফলে স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বস্তরের ছাত্রদের সম্মিলিত আন্দোলন ও শেষভাগে দেশের সাধারন জনগনের স্বতঃস্ফুর্ত যোগদানের মাধ্যমে তা গণ অভ্যুত্থানের রূপ নেয়। ছাত্রদের কোটা আন্দোলন অবশেষে ছাত্র-জনতার একদফা স্বৈরাচার হটাওএর গন আন্দোলের রূপ নিয়ে ৫ আগষ্ট,২০২৪ গণ অভ্যুত্থানের পুর্ণতা পায়। ওইদিন স্বৈরাচার হাসিনার দেশত্যাগের মধ্য দিয়ে দেশে স্বৈর শাসনের অবসান ঘটে। দেশের আমজনতা ও ছাত্র সমাজের চাহিদা মোতাবেক বাঙালীর কৃতি সন্তান বিশ্বখ্যাত নোবেল লরিয়েট ডঃ মোহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়।
অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের শপথ হয় আগষ্ট মাসের আট তারিখ। অর্থাৎ স্বৈরশাসনের পতন হওয়ার তিনদিন পর রাষ্ট্র একটি সরকার পায়। সুতরাং আগষ্টের পাঁচ হতে আট পর্যন্ত এই তিন দিনের কিছুটা অধিক সময় এদেশে কোন সরকার ব্যবস্থা ছিলনা। তবে ঠুঁটো জগ্ননাথ প্রেসিডেন্টকে ধরে শুরু করলে প্রশাসন একটা ছিলও বলা যায়। সেক্ষেত্রে ওই সময়টাই যা কিছু হয়েছে এবং যা কিছু ঘটেছে তার পুরোটার দায়িত্বে ছিল দেশের সশত্র বাহিনী যার প্রধান ছিলেন এবং এখনো আছেন জেনারেল ওয়াকারুজ্জামান। তিনি যতটা বিচক্ষণতায় এই বিরূপ পরিস্থিতি সামলেছেন তা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য। কিন্তু বিগত পনের বছরে গড়ে তোলা সরকারী মেকানিজমে যে উইপোঁকার ঢিপিগুলো স্বৈরাচার কর্তৃক সৃষ্টি হয়েছে তার নিকেশ করা চাট্টিখানি ব্যাপার নয়। শক্ত প্রশাসক এবং স্ট্যান্ডবাই অভিজ্ঞ বিকল্প কি আমাদের ছিল বা এখনো আছে? এরই হ-য-ব-র-লয়ে পড়ে বিগত এক বছর ধরে অন্তর্বর্তীর এই সাদা মনের পেশাজীবি মানুষেরা যে পচা প্যাঁক পুকুরের কাতলা মাছের মত খাবি খাচ্ছেন তাতো আমরা খোলা চোখেই দেখতে পাচ্ছি।
*প্রশ্নগুলি না হয় পরের এপিসোডেই বলি!
-চলমান-
লেখকের আরও লেখা

ট্রাম্পকে খুশি রাখতে কূটনীতি ও প্রশংসায় পাকিস্তানের বাজিমাত

আলোচিত সেই ৫০০ ভরি স্বর্ণ চুরির রহস্য উদঘাটন, গ্রেপ্তার ৪

মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি শেখ হাসিনা: দ্য টেলিগ্রাফ

যুক্তিতর্ক শেষ, শেখ হাসিনা ও কামালের মৃত্যুদণ্ডের আবেদন

হামাস চুক্তির শর্ত না মানলে ফের অভিযান চালাবে ইসরায়েল: ট্রাম্প

শিপিং ব্যয় বাড়ার প্রভাব পড়বে ভোক্তাদের ওপর

এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় পাসের হার ৫৮.৮৩ শতাংশ

বাসে ‘গরিবের ডাক্তার’ এজাজুল ইসলামের সাধারণ জীবন দেখে মুগ্ধ যাত্রীরা

স্ত্রীর মরদেহ ফ্রিজে রেখে পালিয়ে যাওয়া সেই স্বামী গ্রেপ্তার

বাংলাদেশের রাজনীতিতে কারা সেফ এক্সিট নিয়েছিলেন?

মধ্যরাতে হঠাৎ নিরাপত্তা বাড়লো ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসে

আবার বিয়ে করেছেন নারী উদ্যোক্তা তনি!

আমাদের আবুলরা

৩ হাজার ৭০০ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দিল ইসরায়েল

শান্তি সম্মেলনে ইতালির প্রধানমন্ত্রীকে ‘সুন্দরী’বলে বিতর্কে ট্রাম্প

দুনিয়ার সবচেয়ে আজব সেতু বাংলাদেশে!

গাছের সঙ্গে বাঁধা সাত শিশু কাওছারের জীবন!

কারাগারে পরিকল্পনা, তিন মাসেই কোটিপতি ২ যুবক

সিডনিতে দুই বাংলাদেশীর আকস্মিক মৃত্যু

সিডনিতে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত তরুনী খুন

অক্সফোর্ডের করোনার ভ্যাকসিন বিরোধীতায় অস্ট্রেলিয়ার ইমাম ও আর্চবিশপ

অস্ট্রেলিয়ার কারাগারেই আরেক বন্দিকে কোপালেন সেই বাংলাদেশি ছাত্রী সোমা

কিশোরীর সাথে যৌন সম্পর্কের চেষ্টাঃ সিডনিতে বাংলাদেশী ছাত্র গ্রেপ্তার

মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়ার সেরা ৪-এ বাংলাদেশি-অস্ট্রেলিয়ান কিশোয়ার

হুইপপুত্রের গোপন ব্যবসার বলি তরুণ ব্যাংকার

খোলা চুলে সিগারেট হাতে এবার নতুন বার্তা দিলেন পরীমণি

প্রণব মুখার্জি আর নেই

কুইন্সল্যান্ডে বারবিকিউ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককের আকস্মিক মৃত্যু

মাছ ধরতে গিয়ে পানিতে পড়ে সিডনির দুই বাংলাদেশীর মৃত্যু
