avertisements 2

চুপ থাকলে চলবে না, চাপ সৃষ্টি করতে হবে

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১৯ অক্টোবর, বুধবার,২০২২ | আপডেট: ০৮:৩৮ পিএম, ১১ মে,শনিবার,২০২৪

Text

দুই হাজার বিশ সাল নিয়ে নানাজনে নানা কথা বলেছেন। প্যান্ডামিকের কারণে ভয়ভীতি এমনভাবে মানবজাতির মধ্যে ঢুকেছিল যে কারো দুশ্চিন্তার শেষ ছিলো না। 

সবাই ভাবতে শুরু করেছিল স্রষ্টার ক্ষমতাকে। বছর ঘুরতেই ভ্যাকসিনের আভাস পাওয়া গেল, মানুষজাতি অন্ধকার থেকে নতুন করে আলোর সন্ধান পেতে শুরু করল। ঠিক তেমন একটি সময় পুতিন একতা এবং বিশ্বস্ততা ভেঙ্গে ইউক্রেনের উপর হামলা শুরু করতেই বিশ্ব নানা জোট তৈরি করল।

সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাবার পর ভার্সোভা প্যাক্টের অবসান ঘটেছে। তা সত্ত্বেও অ্যামেরিকা ন্যাটো জোটকে জোরালো করতে ইউরোপের অনেক দেশের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে তাদের ন্যাটো জোটে ঢুকিয়ে রাশিয়াকে বিধ্বস্ত করতে উঠেপড়ে লেগে গেল।

ফলস্বরূপ কী দাঁড়ালো? গোটা বিশ্বে অস্বস্তিকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। অর্থনৈতিকভাবে সাধারণ মানুষ বিশাল ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করেছে। জানমালের ক্ষতি থেকে শুরু করে মানুষের জীবনকে ধ্বংস করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে মূলত কিছু সংখক মানুষ নামের দানবেরা যার শেষ কোথায় জানা মুশকিল।

তবে মানবজাতির সামনে এক ভয়াবহ সময় আসতে শুরু করেছে সে বিষয় কম বেশি অনেকেই অবগত। রাশিয়ার হিংসাত্মক ব্যবহার নিঃসন্দেহে ঘৃণাজনক। অন্যদিকে আমেরিকার কু-কূটনৈতিক রাজনৈতিক চাল বর্তমানের ইউরোপকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে জেনেও কোথাও কেউ কিছু করছে না বা বলছে না। 

সবাই কেন যেন নিঃস্তব্ধ নীরব! রাশিয়াকে একঘরে করা মানে গোটা বিশ্বকে শাস্তি দেওয়া এই অপ্রিয় সত্য কথাটিই অনেকে এখনও বুঝতে পারছে না। আমি ব্যক্তিগতভাবে হতভম্ব, মর্মাহত, নিপীড়িত, নির্যাতিত হতভাগা যার উপর পড়েছে বিশাল আকারে অর্থনৈতিক চাপ, জানিনে সে চাপ কাটিয়ে উঠতে পারব কিনা!

আমরা বাংলাদেশি জনগণ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একনিষ্ঠ সমর্থক, ভক্ত, অনুসারী। আমাদের নানাভাবে উস্কানি দেওয়া হচ্ছে যেমন- বলা হচ্ছে বর্তমান সরকার জাতির পিতার হত্যার প্রতিশোধ গোটা জাতির ওপর চাপিয়ে, দেশের মেহনতি মানুষের জীবনের ওপর ঝড়ের দাপট, স্রোতের প্লাবন চাপিয়ে দিয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিশোধ নিতে উঠে পড়ে লেগেছে। 

যুদ্ধাপরাধী বা জাতির পিতার খুনিদের আত্মীয়স্বজন এবং দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া অর্থপাচারের সাথে জড়িত নানা
অপরাধীরা রয়েছে এই অপপ্রচারের নেপথ্যে।

শুনেছি সোশ্যাল মিডিয়ায় যারা অপপ্রচার চালাচ্ছে, তাদের বেশির ভাগকেই অপকর্মে জড়িত থাকার জন্য চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে বা অপরাধ করে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে সরকার এবং বাংলাদেশ সম্পর্কে মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য দিয়ে অন্যদের সবক দিচ্ছেন এমন ব্যক্তিদের চরিত্র ও অপকর্ম জনসমক্ষে তুলে ধরতে হবে। সত্য না জেনে কোনো কথায় কর্ণপাত না করাই ভালো।

তবে যেটা সত্য এবং যেটা অন্যায় তার প্রতিবাদ করতেই হবে। একই সঙ্গে আমাদের উন্নয়নকে জনগণ তথা বিশ্বে তুলে ধরতে হবে। বর্তমান বিশ্বে লক্ষণীয় বড় বড় নেতারা অত্যন্ত অপরিপক্ব আচরণ করছে। যেমন- বাইডেন পুতিনকে হেয়প্রতিপন্ন করতে কোটি কোটি মানুষের জীবননাশ থেকে শুরু করে ইউরোপের মেরুদণ্ড ভেঙে দিতে উঠেপড়ে লেগেছে। 

সারাজীবন শিখে এসেছি প্রতিবেশীর সঙ্গে মিলেমিশে থাকতে হবে, বিপদে আপদে সাহায্যের হাত বাড়াতে হবে। অথচ করছে বিশ্ব সম্পূর্ণ উল্টো। আজ রাশিয়া তার ব্যক্তিস্বার্থের কারণে নিজ প্রতিবেশি এক অন্নভুক্ত, একই সভ্যতা, ভাষা, বর্ণ, সমাজব্যবস্থা গোত্রের মানুষ তাদের উপর হামলা করেছে। 

অন্যদিকে রাশিয়ার চারপাশের প্রতিবেশি দেশগুলো ভয়ে আতঙ্কে সাত সাগর আর তের নদী পারে বসবাস সেই আমেরিকার শরণাপন্ন হয়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। রাশিয়াকে একঘরে করে ভেবেছিল পরাজিত করবে কিন্তু হিতে সবকিছু বিপরীত হয়েছে।

এখন নিজেরাই গভীর জলে হাবুডুবু খেয়ে মরছে। বলতে গেলে পুরো ইউরোপ (রাশিয়া ছাড়া) অচল জ্বালানি তৈল এবং বিদ্যুৎ ছাড়া, কীভাবে সেই ইউরোপ এতবড় একটা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হলো? একবারও ভাবল না কী হবে অভাগা জাতির! রক্ত ছাড়া শরীর আর জ্বালানি তৈল এবং বিদ্যুৎ ছাড়া ইউরোপ ভাবা যায়? হয়ত এশিয়া, আফ্রিকা বলবে আজীবন গোটা বিশ্ব লুটপাট করে ইউরোপ তার নিজের অস্তিত্ব, নিজের সাম্রাজ্যের কথা ভেবেছে, এখন সুদে-মূলে সেসব ঋণ শোধ দেবার পালা। কিন্তু ইউরোপ তো এখন শুধু সাম্রাজ্যবাদীদের নয়, ইউরোপ তথা গোটা বিশ্ব এখন আমাদের সবার।

আমরা না চাইলেও বা আমাদের কেউ স্বীকার না করতে চাইলেও আমরা এখন একই সংগঠনে জড়িত। প্রযুক্তির যুগে বিশ্বায়নে কেউ আর এখন একা নই। সামান্য একটি কাঠপেন্সিল তৈরির পেছনে কমপক্ষে পাঁচটি কন্টিনেন্ট জড়িত এবং তার ব্যবহারিক দিকটা গোটা বিশ্ব, সেখানে কি মানায় এযুগে জুলুম করে একনায়কতন্ত্র চালু করা!

হাঁটিতে পারে না শিশু না খেয়ে আছাড়, অথবা- না কানলে মা তার নিজ সন্তানকেও বুকের দুধ দেয় না। তাহলে চুপচাপ বসে থাকলে চলবে কি? বিশ্বে যার যা খুশি করছে, করবে আর আমরা বসে বসে বুড়ো আঙ্গুল চুষবো, তাতো হতে পারেনা! পৃথিবী বদলে গেছে, পৃথিবী আগের মতো নেই। 

ভাবুন এই বাংলাদেশে কাপড় তৈরি হয় আর সেই কাপড় ব্যবহার করে গোটা বিশ্বের মানুষ। তাহলে আমাদের দায়ভার কি সীমাবদ্ধ? আমাদের বিশ্বে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। আমার কথায় ধরুন, প্রায় চল্লিশ বছর ধরে নিজের ভরণপোষণ জোগাড় করা থেকে শুরু করে পরিবার দেশ তথা গোটা বিশ্বের মানুষের উপকারে নিজেকে শতভাগ নিযুক্ত করে রেখেছি অথচ যার যা খুশি করবে কিছু বলবো না, তাতো হতে পারে না? নিজের শরীরে যখন রোগ আক্রমণ করে, কই আমরা কি চুপচাপ বসে থাকি? 

না তার প্রতিরোধ করতে ডাক্তারের সাহায্য নিই রোগমুক্ত হই, ঠিক সমাজ, দেশ তথা বিশ্বে যদি মহামারি দেখা দেয়, ন্যাচারাল দুর্যোগ আসে বা কেউ হঠাৎ অন্য কেউকে আক্রমণ করে তখন প্রতিবাদ করতে হবে, এটা তো অত্যন্ত সাধারণ ব্যাপার।

আমরা স্রষ্টার শ্রেষ্ঠ জীব; আমাদের পরিচয় মহানুভবতার মধ্য দিয়েই হবে। বাইডেন বা পুতিনের ওপর দোষ চাপিয়ে বসে থাকলে চলবে না। আমাদের নিজ নিজ জায়গা থেকে চাপ সৃষ্টি করতে হবে। উচ্চস্বরে বলতে হবে এটা অন্যায়, আমরা মানি না, মানব না।

প্রতিবাদ করতে হবে একসঙ্গে। এ যুদ্ধের অবসান ঘটাতে হবে। ভুলে গেলে চলবে না যে, আমাদের একটিই পরিচয়, সেটা হলো আমরা মানুষ, আমরা দানব নই।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2