avertisements 2

সমুদ্র উপকূলে নিষেধাজ্ঞা: গাজাবাসীর শেষ আশ্রয় কেড়ে নিল ইসরায়েল

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১৬ জুলাই, বুধবার,২০২৫ | আপডেট: ০২:৩৪ এএম, ১৭ জুলাই,বৃহস্পতিবার,২০২৫

Text

দুই বছরের কাছাকাছি সময় ধরে যুদ্ধের ভেতর বাস করা গাজার মানুষের কাছে ভূমধ্যসাগরের উপকূল ছিল একমাত্র মুক্তির পথ। খাবার, জীবিকা, বিশ্রামের জায়গা, এমনকি যুদ্ধ ও দখলদারত্ব থেকে কিছু সময়ের জন্য মুক্তি দিয়েছে এই সমুদ্র। কিন্তু সেই শেষ আশ্রয়টুকুও এখন তাদের হাতছাড়া। খবর দ্য ন্যাশনাল।


ইসরায়েলি সেনাবাহিনী সাম্প্রতিক এক সামরিক আদেশে গাজার ফিলিস্তিনিদের জন্য সমুদ্র ব্যবহার পুরোপুরি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। নতুন নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, কেউ যেন সাঁতার কাটতে, মাছ ধরতে বা ডাইভিং করতেও উপকূলে না যায়। গাজা উপকূলে সমুদ্রে প্রবেশ এখন শাস্তিযোগ্য অপরাধ।


সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে এক পোস্টে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র আভিচাই আদ্রায়ি লিখেছেন, ‘আমরা অনুরোধ করছি, জেলে, সাঁতারু ও ডাইভাররা যেন সমুদ্রে না যায়। উপকূল বরাবর সমুদ্রে প্রবেশ করা বিপজ্জনক। এই নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করলে সেনাবাহিনী ব্যবস্থা নেবে।’

গাজার জেলে সম্প্রদায়ের অন্যতম সদস্য, ৫২ বছর বয়সী মুনথির আয়াশ বললেন, ‘আমরা সমুদ্র থেকেই বাঁচি। যদি মাছ ধরা না হয়, তাহলে খাওয়াই জোটে না।’ শৈশব থেকেই মাছ ধরছেন মুনথির। হাজারো গাজাবাসীর মতো তিনিও নিয়মিত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গাজার কাছাকাছি পানিতে মাছ ধরতে যেতেন। ইসরায়েলি বিধিনিষেধ অনুযায়ী, এতদিন তারা কখনোই উপকূল থেকে ৭০০ মিটারের বেশি দূরে যেতে পারেননি। সেই অল্প দূরত্বটুকুও ছিল বিপজ্জনক।

তবে এবার সেই ঝুঁকিপূর্ণ সুযোগটুকুও বাতিল হয়ে গেছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এখন গাজার সমুদ্রসীমাকে পুরোপুরি ‘অফ-লিমিট’ ঘোষণা করেছে। গাজার ফিশারম্যান সিন্ডিকেটের প্রধান জাকারিয়া বাকরের মতে, এই নিষেধাজ্ঞা কোনো নিরাপত্তা-ব্যবস্থা নয়, বরং যুদ্ধের একটি অংশ। তিনি বলেন, ‘এটা কোনো নিরাপত্তার ব্যাপার নয়। এটা অর্থনৈতিক, সামাজিক ও মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ; ধীরে ধীরে শ্বাসরোধ করার এক অস্ত্র।’

যুদ্ধ আর গৃহহীনতার এই সংকটে গাজার লাখো মানুষের জন্য সমুদ্র ছিল একমাত্র মুক্তির জায়গা। ২৬ বছর বয়সী ইব্রাহিম দাওলা, গাজার আল-জাইতুন এলাকা থেকে বিতাড়িত হয়ে এখন উপকূলের ধারে একটি ত্রাণ তাম্বুতে বাস করছেন। সমুদ্র উপকূলই ছিল তার গোসলখানা, বিশ্রাম এমনকি যুদ্ধ থেকে পালানোর জায়গা।

জেলেদের জন্য এই যুদ্ধ শুধু জীবন ও জীবিকাই ধ্বংস করেনি, মুছে দিয়েছে প্রজন্ম ধরে চলে আসা একটি সংস্কৃতি। মুনথির আয়াশ বলেন, ‘আগেও যুদ্ধ হয়েছে, কিন্তু তখনো আমরা কোনো না কোনোভাবে মাছ ধরতে পারতাম। কিন্তু এবার ওরা সব কিছুই শেষ করে দিতে চায়। ওরা আমাদের মুছে ফেলতে চায়।’

তিনি থেমে যান, কিছুক্ষণ চুপ করে থাকেন। তারপর ভেজা চোখে উপকূলের দিকে তাকিয়ে বলেন, ‘কিন্তু সমুদ্রটা আমাদের। এই জমিটাও আমাদের। ওরা যতই চেষ্টা করুক, এটা আমাদেরই থাকবে।’

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2