avertisements 2

মা কিডনি দিয়ে বাঁচালেন সন্তানের জীবন

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৬ ফেব্রুয়ারী,রবিবার,২০২২ | আপডেট: ০৭:০২ পিএম, ১৪ মে,মঙ্গলবার,২০২৪

Text

ছেলে  (বায়ে) ও মা 

মায়ের দেওয়া কিডনিতে মৃত্যুর মুখ থেকে বেঁচে ফিরলেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) বাংলা বিভাগের অষ্টম ব্যাচের শিক্ষার্থী জাহিদ হাসান। মা বুলি বেগমের কিডনি দানের মাধ্যমে পিতৃহীন জাহিদ এবার স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করবেন। বিসিএস ক্যাডার হয়ে মায়ের স্বপ্ন পূরণের পর ধরবেন পরিবারের হাল।

এরই মধ্যে ঢাকার একটি হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা শেষে মা-ছেলে ফিরেছেন পঞ্চগড়ের গ্রামের বাড়িতে। শরীরে ব্যথা ও দুর্বলতাসহ শারীরিক জটিলতা থাকলেও হাসিমুখে দিন কাটাচ্ছেন তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০৪ সালে ১৮ বছর বয়সে এক বোনের ব্লাড ক্যানসারে মৃত্যু হয়। আবার একই বছরের নভেম্বর মাসে ঘুমের মধ্যে জাহিদের বাবার হঠাৎ মৃত্যু হয়। সেদিন থেকেই নিজের স্বপ্ন যেন মরে গিয়েছিল জাহিদের। সেই ছোট্টবেলা থেকেই জীবন নামের এক মহাযুদ্ধ অতিক্রম করার পর গত বছরের ১৭ অক্টোবর জাহিদ জানতে পারেন, তার দুটি কিডনিই কাজ করছে না।

এর আগে ২০১৯ সালেও একবার জাহিদের শারীরিক অবস্থা খারাপ হয়েছিল। তখন রংপুরে যে চিকিৎসককে দেখিয়েছিলেন, তিনি বিষয়টি স্পষ্ট করে বলেননি বা অন্য কোথাও রেফার করেননি। ২০২১ সালে যখন জাহিদের শরীর খারাপ হতে থাকে, তখন একেবারে শেষ ধাপে আর করার তেমন কিছু ছিল না। ওই বছরের ১৭ অক্টোবরের পর ১৫ দিন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন জাহিদ। রংপুরের একটি স্থানীয় ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে গেলে তাও বিফল হয়।

এর আগে ক্যাথেটারের মাধ্যমে চারটি ডায়ালাইসিস করা হয়েছিল। জাহিদের জ্বর ছিল। খাবার খেলেই বমি করে দিতেন।

এ অসুস্থতার মধ্যেই গত বছরের নভেম্বরে জাহিদের স্নাতকের ফল প্রকাশ হয়। জাহিদ কৃতিত্বের সঙ্গে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন। স্নাতক পাস করার পর তার পরিবার নতুন করে যখন স্বপ্ন দেখা শুরু করেছিল ঠিক তখনই জাহিদের অসুস্থতা ধরা পড়লো। তার সহপাঠীরা যখন স্নাতকোত্তরের জন্য শ্রেণিকক্ষে ক্লাস করছেন তখন তিনি জানতে পারলেন তার দুটি কিডনি বিকল হয়ে গেছে। কিন্তু কিডনি কে দেবে এ নিয়ে পড়তে হলো দুশ্চিন্তায়।

প্রথমে জাহিদের মা বুলি বেগম আর বোন নূর নাহার কিডনি দেওয়ার জন্য শরীরের সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। শেষ পর্যন্ত ১০ মাস ১০ দিন পেটে ধরা নারী ছেঁড়া ধনকে নিজের কিডনি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন জাহিদের মা।

রংপুর ও ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসার পর গত বছরের ৩ নভেম্বর থেকে রাজধানীর শ্যামলীতে সেন্টার ফর কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতালে (সিকেডি) ভর্তি হন জাহিদ। কিডনি প্রতিস্থাপনের আইনি বিষয় সুরাহার জন্য পুলিশ ভেরিফিকেশনসহ সব প্রক্রিয়া শেষে গত ২২ জানুয়ারি রাতে মা ও ছেলের অস্ত্রোপচার হয়। অস্ত্রোপচারের সাত দিনের মাথায় বুলি বেগম হাসপাতাল ছাড়লেও জাহিদ হাসপাতাল ছেড়েছেন ১০ দিনের মাথায়।

কিডনি দানের পর বুলি বেগম বলেন, কিডনি দান করতে এত কষ্ট হবে তা আগে জানা ছিল না। তবে এ কষ্টের কথা আগে জানলেও আমি আমার ছেলেকে কিডনি দিতাম। মায়ের কাছে সন্তানের জীবনই আগে। সন্তানের জীবন বাঁচানো মায়ের কর্তব্য।

জাহিদের বড় বোন নূর নাহার বলেন, হাসপাতাল থেকে বাসায় ফেরার পর জাহিদের সঙ্গে যখন দেখা হলো তখন মায়ের চেহারা দেখে মনে হলো তিনি প্রাণ ফিরে পেয়েছেন। স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেয়েছেন। জাহিদও হাসপাতালে থাকা অবস্থায় বারবার জানতে চাচ্ছিল মা ভালো আছেন কি না।

তিনি আরও বলেন, আমার ভাই হাসপাতাল থেকে বাসায় ফেরার পর তাদের যে আনন্দ হয়েছে, তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। প্রথমে ভেবেছিলাম, ভাইকে বাঁচানো যাবে না। এখন আমি আমার ভাইকে স্পর্শ করতে পারছি। ভাই চোখের সামনে সুস্থ জীবনের পথে হাঁটছে, তার যে অনুভূতি তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না।

নূর নাহার বলেন, সিকেডি হাসপাতালের প্যাকেজে মা ও ভাইয়ের অস্ত্রোপচার এবং ১১ দিন হাসপাতালে থাকা বাবদ খরচ হয়েছে ২ লাখ ১০ হাজার টাকা। তবে বিভিন্ন পরীক্ষা ও ওষুধ বাবদ এ পর্যন্ত হাসপাতালে খরচ হয়েছে প্রায় ৭ লাখ টাকা। এসব টাকা জোগাড়ের জন্য আমাদের ১০ শতাংশ জমি এবং আমাদের পৈত্রিক ভিটা কম মূল্যে বিক্রি করতে হয়েছে।

এদিকে জাহিদের অসুস্থতা নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর দেশ-বিদেশের অনেকেই জাহিদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন। জাহিদ ও তাদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন নূর নাহার।

তিনি বলেন, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এখন প্রতি মাসে জাহিদের শুধু ওষুধের পেছনে খরচ হবে ৩০ হাজার টাকা। জাহিদ ও মায়ের ফলোআপ, খাওয়া-দাওয়াসহ বেশ মোটা অঙ্কের টাকা খরচ হবে। তবে এ মুহূর্তে আমাদের হাতে যে টাকা আছে, তা দিয়ে কয়েক মাস চালাতে পারবো।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2