avertisements 2

বেতন ৩৫ হাজার সাব রেজিস্ট্রারের মাসে গাড়িভাড়া ৭০ হাজার, বাড়িভাড়া ১৮!

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৭ অক্টোবর,শনিবার,২০২৩ | আপডেট: ০৪:০৩ পিএম, ৩ মে,শুক্রবার,২০২৪

Text

বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার সাব রেজিস্ট্রার নুসরাত জাহান একজন নন ক্যাডার কর্মকর্তা। তার বেতন ৯ম গ্রেড অনুযায়ী ৩৪ হাজার ৯৯০ টাকা। প্রতিদিন প্রাইভেটকার ভাড়া নিয়ে বগুড়া শহর থেকে সোনাতলা অফিসে যান তিনি। মাসে তাকে শুধু গাড়ি ভাড়াই গুনতে হয় ৭০ হাজার টাকা।

নুসরাত জাহান যে গাড়িটি ব্যবহার করছেন তার নম্বর চট্র মেট্রো-গ-১২-০৭৩৪। ঢাকার নবাবগঞ্জ হাতিয়া এলাকার বখতিয়ার রহমান রানার নামে গাড়িটি নিবন্ধন করা। গাড়িটির চালক আল-আমিন। কর্মদিবসের দিন শহরের জলেশ্বরীতলায় ভাড়া বাসা থেকে নুসরাত জাহান এ গাড়িতে করেই অফিসে যাতায়াত করেন। এছাড়া এ কর্মকর্তার বাসা ভাড়া বাবদ খরচ মাসে ১৮ হাজার টাকা।

সাব রেজিস্ট্রার নুসরাত জাহানের বিরুদ্ধে ঘুস নেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন ভুক্তভোগী ও অফিসের স্টাফরা। ঘুস নিতে এজলাসে না বসে খাস কামরায় বসেন তিনি। খাস কামরায় করেন দলিল সম্পাদন।

ভুক্তভোগী ও অফিসের স্টাফদের অভিযোগ, অফিসের মহুরি জহুরুল ইসলামে দুলুর মাধ্যমে ঘুসের টাকা টাকা লেনদেন করেন সাব রেজিস্ট্রার।

সোনাতলা উপজেলায় ১৩০ জন দলিল লেখক কাজ করেন। তাদের মধ্যে কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাগো নিউজকে জানান, প্রতিটি দলিলের জন্য সাব রেজিস্ট্রার কমপক্ষে এক হাজার টাকা করে বাড়তি নেন। আর অহেতুক ভুল বের করে বাড়তি নেন আরও এক থেকে দুই হাজার টাকা। বড় দলিলের জন্য নেন কমপক্ষে ১০ হাজার টাকা। এসব টাকা লেনদেন করেন জহুরুল ইসলাম নামের এক মহুরির মাধ্যমে। মাসে ওই অফিসে দলিল রেজিস্ট্রি হয় গড়ে ৩৫০টি। সে হিসেবে মাসে সাব রেজিস্ট্রার ঘুস নেন কমপক্ষে পাঁচ লাখ টাকা।

সোনাতলা উপজেলার মহিষেরপাড়ার বাসিন্দা লতিফুল ইসলাম। তিনি ২৪ শতক জমি বিক্রি করেন স্থানীয় পলাশ নামের এক ব্যক্তির কাছে। পৈতৃক সূত্রে পাওয়া জমিটি রেজিস্ট্রি করার জন্য গেলে উত্তরাধিকার সনদের কথা বলা হয়। পাঁচমাস আগের সনদ দিতে গেলে দলিল আটকে দেন সাব রেজিস্ট্রার। বলা হয় হালনাগাদ সনদ লাগবে, তবেই রেজিস্ট্রি করা যাবে।

পরে খাস কামরায় ডেকে নিয়ে এর জন্য তিন হাজার টাকা দাবি করেন সাব রেজিস্ট্রার। একপর্যায়ে সেখানকার এক মহুরির মাধ্যমে দুই হাজার টাকা ঘুস দিয়ে দলিল রেজিস্ট্রি করে নিতে বাধ্য হন বলে লতিফুল ইসলাম।

উপজেলার রাধাকান্তপুরের মাহফুজার রহমান ১৫ শতক জমি কিনেছেন স্থানীয় কৃষক আব্দুর রহিমের কাছ থেকে। জমির নামজারিতে নামের বানানে আ-কার বাদ পড়ায় ভুল বের করেন সাব রেজিস্ট্রার। এজন্য গুনতে হয় দেড় হাজার টাকা।

মাহফুজার রহমান বলেন, নামজারি করার সময় ভুলক্রমে এনআইডি কার্ডের সঙ্গে আব্দুর রহিমের নামের ‘আ’ এর জায়গায় ‘অ’ হয়েছিল। পরে আব্দুর রহিম নাম দিয়েই জমির দলিল লেখা হয়। এজন্য গুনতে হয় দেড় হাজার টাকা।

কাবিলপুর এলাকার বাসিন্দা নুরুল ইসলাম বলেন, তিনি দলিল রেজিস্ট্রি করার পর দলিল নেওয়ার জন্য যে স্লিপ দেয় সেবাবদ দিতে হয়েছে ৫২০ টাকা। অথচ এজন্য সরকারি ফি মাত্র ২০ টাকা।

তিনি আরও বলেন, দলিলের জাবেদা নকল তুলতেও লাগে দেড় থেকে দুই হাজার টাকা। অথচ অন্য উপজেলায় দলিলের স্লিপ ১০০ টাকা এবং জাবেদা তুলতে ৬০০ টাকার ওপর লাগে না।

শুধু এসব খাতেই নয়, নানা ধরনের ছোট ভুল বের করে বাড়তি টাকা আদায় করা ছাড়াও প্রতিটি দলিলের পেছনে সরকারি ফি ছাড়াও নিম্নে এক হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুস নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে সাব রেজিস্ট্রার নুসরাত জাহানের বিরুদ্ধে।

এ বিষয়ে সোনাতলা সাব রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের মহুরি জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি এসবের সঙ্গে জড়িত না। আর এখানে কোনো প্রকার বাড়তি লেনদেন হয়না। যা দলিল খরচ তা দিয়ে দলিল পার হয়ে যায়।’

ঘুস নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে সাব রেজিস্ট্রার বলেন, ‘কিছু লোক অহেতুক সুযোগ-সুবিধা চান। না দিলেই ক্ষুব্ধ হয়ে অপপ্রচার করেন। দলিল রেজিস্ট্রি করতে হলে সব খুঁটিনাটি বিষয় দেখতে হয়। তা নাহলে ক্রেতা-বিক্রেতারা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন।’

গাড়ি ভাড়া করে অফিস করার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘জেলা শহর থেকে সোনাতলা উপজেলার দূরত্ব বেশি তাই মাঝে মধ্যে গাড়িভাড়া করে যাতায়াত করতে হয়।’

খাস কামড়ায় বসে দলিল রেজিস্ট্রি করার বিষয়টি এড়িয়ে যান সাব রেজিস্ট্রার। তবে সরকারি ফির চেয়ে কোনো ক্ষেত্রেই বাড়তি টাকা নেওয়া হয় না বলে তার দাবি। জেলা রেজিস্ট্রার রফিকুল ইসলাম বলেন, এসব বিষয় আমার জানা নেই। খোঁজখবর নিয়ে জানানো যাবে।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2