avertisements 2

স্বামীর পর স্ত্রী মিতুও চলে গেলেন না ফেরার দেশে

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২৬ আগস্ট,শনিবার,২০২৩ | আপডেট: ১০:৪৩ পিএম, ৫ মে,রবিবার,২০২৪

Text

মিতু ও পিয়ালের ছবিটা এখন কেবলই স্মৃতি। ছবি: সংগৃহীত 

গত বছরের আগস্ট মাসে পারিবারিকভাবে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন পিয়াল-মিতু। তাদের এক বছরের দাম্পত্যজীবন বেশ সুখের ছিল। কিন্তু আকস্মিক এক সড়ক দুর্ঘটনায় সব কিছু তছনছ হয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই মারা যান পিয়াল।
আহত স্ত্রী মিতু এ হাসপাতাল থেকে ও হাসপাতাল ঘুরে ঘুরে সাত দিন ধরে বাঁচার আপ্রাণ চেষ্টা করেও জীবনযুদ্ধে হেরে যান। স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রী মারা যাওয়ার খবরটি এলাকার মানুষকে ব্যথিত করেছে। এত অল্প বয়সে তাদের এমন পরিণতি কেউ মানতে পারছেন না।

পিয়াল হাসান (৩০) চিলমারী উপজেলার রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের ময়নার খামার গ্রামের সাহালমের ছেলে।
দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে পিয়াল সবার বড়। পড়াশোনা শেষ করে ঢাকায় একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন তিনি।

এদিকে মিম্মা আরা মিতু (২৪) উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের ঘোলদার পাড়ার সাবেক সেনা সদস্য মিজানুর রহমান দুলুর মেয়ে। দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে মিতু সবার বড়।
সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি। স্বামীর চাকরির সুবাদে ঢাকায় বসবাস করতেন তারা।

গত ১৭ আগস্ট ঢাকা থেকে মোটরসাইকেলযোগে পিয়াল ও মিতু কুড়িগ্রামের উদ্দেশে রওনা দেন। বিকেলে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে পৌঁছলে তাদের মোটরসাইকেলটি মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় পতিত হয়। ঘটনাস্থলেই মারা যান পিয়াল।
পরে উপস্থিত লোকজন মিতুকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় গোবিন্দগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন।

মিতুর কয়েকজন স্বজন জানান, রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ১৯ আগস্ট ঢাকা ঢাকা ন্যাশনাল মেডিক্যাল ইনস্টিটিউট হাসপাতাল এবং ২০ আগস্ট ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে নেওয়া হয়। মিতুর অবস্থা ক্রমেই অবনতির দিকে যাওয়ায় ২২ আগস্ট ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে শ্যামলীর ট্রমা সেন্টার এবং অর্থোপেডিক হাসপাতালে রেফার করা হয়। ওই দিন চিকিৎসক তার ডান হাত ও পা কেটে ফেলেন। এর দুই দিন পর গত ২৫ আগস্ট (শুক্রবার) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান মিতু। কয়েকটি হাসপাতালের বিছানায় ঘুরে ঘুরে জীবনের কাছে পরাজয় বরণ করা মিতুর মৃতুর সংবাদটি ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। 

শনিবার (২৬ আগস্ট) সকালে ঢাকা থেকে মিতুর লাশ গ্রামে পৌঁছলে একনজর দেখার জন্য আশপাশের লোকজন ছুটে যায় তার বাড়িতে। এ সময় ওই এলাকা শোকে নিস্তব্ধ হয়ে যায়। পরে তাকে ঘোলদার পাড়া গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

পিয়ালের ছোট ভাই দারুদ রিয়াল আমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গত বছরের ১৮ আগস্ট তাদের বিয়ে হয়। ভাই-বোনদের মধ্যে সবার বড় ছিলেন উনি। কুড়িগ্রাম সরকারি পলিটেকনিক্যাল থেকে পাস করার পর ঢাকায় বিএসসি করেন। এরপর ইবিএস গ্রুপে চাকরি নেন। তারা দুজন (স্বামী-স্ত্রী) ঢাকায় থাকতেন। ওই কম্পানি থেকে ভাইয়া অস্ট্রেলিয়ায় দুই বছর মেয়াদের চাকরির সুযোগ পান। ২৭ আগস্ট তার অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার কথা ছিল। এ জন্য বাড়ি আসছিলেন। কিন্তু আমার ভাই শেষ পর্যন্ত জীবন নিয়ে বাড়িতে পৌঁছতে পারলেন না। ভাইয়াকে হারিয়ে বাবা-মা পাগলপ্রায়। আমি দেশবাসীর কাছে আমার ভাইয়ার জন্য দোয়া চাই, আল্লাহ যেন তাকে জান্নাতবাসী করেন।’

হাতিয়া ইউপি চেয়ারম্যান শায়খুল ইসলাম নয়া বলেন, ‘বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। মিতুর স্বামী মারা যাওয়ার পর সে পঙ্গুত্ব বরণ করেছিল। আপ্রাণ চেষ্টা করেও বাঁচতে পারল না। সবাইকে সচেতন হয়ে মোটরসাইকেল চালানোর দরকার। আমি শোকসন্তপ্ত পরিবার দুটির প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি।’
 

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2