
জালাল উদ্দিন আহমেদ
রাজনীতি ও রাষ্ট্রযন্ত্র এক নয়
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১৬ মার্চ,রবিবার,২০২৫ | আপডেট: ০১:১৬ এএম, ১ মে,বৃহস্পতিবার,২০২৫

একটা প্রবাদ আমার এক সহকর্মী প্রায়শই উচ্চারন করতেন। বিশেষ করে আমার দিকে লক্ষ্য করেই তার সেই উচ্চারনটা হোত বলেই আমি ওসব শুনতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম। সম্ভবতঃ তিনি ইসলামের ইতিহাস পড়া একজন মাস্টার্স। তাও আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। তবে চেতনার ফেরিওয়ালা হলেও ক্ষমতার উদগ্রতা বা অন্ধ ভক্তির যুক্তিহীন আচরনের উগ্রতা তার মধ্যে ছিলনা। এখানে রক্ত পরম্পরার মানবতা ও নৈতিকতা এবং পারস্পারিক শ্রদ্ধাবোধের একটা ছটা তার মধ্যে লক্ষ্য করেছি। বয়সে ছোট বলেই তিনি আমকে জেবি বা জালাল ভাই বলেই সম্বোধন করতেন।
আমার কথা একটু বলা দরকার। পঁষট্টির পাক-ভারত যুদ্ধ পরবর্তীতে আমার সেজভাই ছেষট্টি সালে সোজা পুর্ব পাকিস্তানের রাজধানী ঢাকায় চলে আসেন। ঊনিশ'শো সাতষট্টি সালে বড় ভাইয়া যিনি একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের চাকুরী ছেড়ে সেখানকার নামকরা একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা সাহিত্যে এমএ পরীক্ষায় প্রথম শ্রেনীতে প্রথম স্থান অর্জন করেও সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হতে না পেরে সোজা ঢাকায় চলে আসেন। এসব আসার কাহিনী ধর্মীয় আবরনেই মোড়ানো ছিল। তবে জোর করে ঠেলে পাঠানো নয়। কোন দাঙ্গা ফ্যাসাদেও না। স্রেফ ভাগ্যান্বেষনের তাগিদ। যেমন করে এই বঙ্গের বাঙালদের সিংহ ভাগ অংশ নিজেদের সেফ হোম মনে করে পশ্চিমে ধাবিত হয়ে সেখানে ইনিয়ে বিনিয়ে অত্যাচার নির্যাতন ইত্যাদির গল্প ফেঁদে আপন ব্যক্তি স্বাতন্ত্রের সুবিধা প্রাপ্তির লক্ষ্য বানাতে গিয়ে বরঞ্চ নিজেদের অস্তিত্বের অধঃপতন ঘটায় এবং একটা সাম্প্রদায়িক সহানুভূতির আমেজ তৈরী করে। ফলে জন্ম থেকে জ্বলছির সাযুজ্যে তাদের প্রান্ত বদলের বিষয়টিও একটি দুর্বিসহ আবর্তেই ঘুরপাক খেতে থাকে। ধর্ম বিভেদের যুযুধানে নিজেরাই জ্বলেপুড়ে মরে। জীবন ও জীবিকার উন্নত পরিমন্ডলে বিচরনের স্বপ্ন অলীকই থেকে যায়। সত্তর সালে স্কুল ফাইনাল(এসএসসি) দিয়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে আমি ইউনিভার্সিটি এনট্রান্সের ছাত্র। মোটামুটি মেডিক্যালে পড়ার উচ্চাকাঙ্খা নিয়েই এগোচ্ছিলাম। এদিকে ঢাকার নামকরা একটি কলেজের অধ্যাপক বড় ভাই তখন নিজের বাপের বাড়িতেই শরণার্থী হয়েই অবস্থান করছেন। আর সেজভাইয়া রণাঙ্গনের দুই নম্বর সেক্টরে সম্মুখ সমরের মুক্তিযোদ্ধা। দেশ স্বাধীন হোল। ভাইয়েরা ঢাকায় ফিরে গেলেন। বাহাত্তরে ইউনিভার্সিটি এনট্রান্স ফাইনাল পরীক্ষার সময় বাবা বার্ধক্যজনিত অসুখে শয্যাশায়ী হলেন। ভাইয়েরা ঢাকা থেকে বাবাকে দেখতে এলেন। পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে আমি সর্ব কনিষ্ঠ। শয্যাশায়ী অসুস্থ্য বাবা দুই ভাইয়ের হাতে তার ছোট ছেলে অর্থাৎ আমাকে তুলে দিয়ে বাংলাদেশে নিয়ে ভবিষ্যত গড়তে আদেশ দিলেন। অর্থাৎ বাংলাদেশের বাঙালী হওয়ার আকাংখায় আমি বাংলাদেশী হলাম। আমার এই কথাগুলি আজকে নতুন বলছি না। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এসব কথা বলেই এবং নিজের যোগ্যতা প্রমান করেই আমি বাংলাদেশী হয়েছি এবং লেখাপড়া শেষ করে বাংলাদেশ প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হয়েছি।
প্রাসঙ্গিকতায় না পড়লেও রাজনীতি গণতন্ত্র এবং চেতনা অনুশীলনের ছিটেফোঁটা পারিপার্শ্বিকতা ছিল বলেই এসব বলার সৎসাহস দেখাতে কুন্ঠাবোধ হোলনা। মানবিক মূল্যবোধের নৈতিকতায় সমৃদ্ধ ছিলাম বলেই দেশে ব্যক্তি বিকাশের গণতন্ত্র চাউর হতে শুরু করলে তখন থেকেই নিজেকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে নিয়ে মুক্ত চিন্তায় কথা বলা শুরু করলাম। কালোকে কাল আর সাদাকে সাদা বলতেই স্বাচ্ছন্দ বোধ করলাম। এতে করে চেতনার ফেরিতে সাঁতার কাটা সহপাঠী, সহকর্মী এমনকি পরিপাশ কেমন যেন গুটিয়ে গেল। তো, এই পারিপার্শ্বিকতা নিয়েই বড় হয়েছি এবং বড় হওয়ার উচ্চাকাংখায় নিজের বিবেক এবং নৈতিকতাকে সামনে রেখে একলা চলোর নীতিতে পা ফেলেছি। শত ঝড় ঝঞ্জা এলেও তাকে নিজ কৌশলে মোকাবিলা করার মন্ত্রে এগিয়েছি। তাছাড়া সরকারী চাকরী করতে গেলে তখন রাজনীতির হৈহুল্লোড়ের প্রয়োজনীয়তা এমনিতেই বিসর্জন দিতে হয়। বিশেষ করে সরকারী মেকানিজমের চাকর হতে গেলে কিছু নিয়ম কানুন মেনেই সেখানে পা ফেলতে হয়। অঙ্গীকার নামাও দিতে হয়। রাজনীতি করা যাবে কিনা বা তা নিয়ে তাফালিং করা যাবে কিনা - ওইসব কথাবার্তা অঙ্গীকারে ছিল কিনা তা আমার মনে আসছে না। তাছাড়া এক যুগের উপর হোল আমি অবসরের আদম। সেক্ষেত্রে ওইসব নিয়ম কানুনের অনেক কিছুই আমার স্মরনে আসছে না। তবে চাকুরী জীবনের শেষকালে অমুক পরিষদ তমুক পরিষদ নাম নিয়ে সরকারী কর্মচারী ও কর্মকর্তারা যেভাবে লম্ফঝম্ফ করা শুরু করেছিল তাতে করে আমরা যে আদৌও রাষ্ট্র যন্ত্রের এক একটি উপাদান তা যেন সবাই ভুলেই গেছিলাম বলে মনে পড়ে। অথচ চাকরীর শপথ ও বন্ড দিয়ে শুরু করা একজন কার্মচারীর নৈতিক শর্তই হচ্ছে তিনি রাষ্ট্রের বিদ্যমান বিধিব্যবস্থার একজন বেতন ভুক সেবক।
রাজনীতি ভাল জিনিস। এর চর্চায় থাকা সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা সব সময় একটা ভাল দিক নির্দেশনা নিয়েই জনকল্যানে ব্যপৃত থাকে। সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা একটি সুচারু ও সুষম কাঠামোয় দাঁড়িয়ে জনপদে স্বস্তি বয়ে আনে। তবে সেই রাজনীতির মূল স্টেক হোল্ডাররা যদি প্রত্যন্ত তৃণমূল হতে উপরতলার নাগরিক পর্যায়ে একই গতিতে সমধারা ও সমবন্টনের নীতি নৈতিকতায় বিরাজমান থাকে তবেই তার সুফল কার্যকরী হবে। আর এই বিষয়টিকে রাষ্ট্র যন্ত্রের সেবক ভেবে একজন সরকারী কর্মচারী যখন তার কর্মজীবনের আমলনামায় অনুশীলন করে এগিয়ে যাবেন তখনই সরকার তার কাংখিত লক্ষ্য পুরনে কামিয়াব হবেন। জানিনা এই অমুক পরিষদ তমুক পরিষদ আমাদের সরকারী প্রশাসন যন্ত্রের গতি ও কার্য ক্ষমতা বাড়িয়েছে কিনা, তবে গোষ্ঠীতন্ত্রের জোশ ও জৌলুশ যে বাড়িয়েছে তা দিব্য চক্ষেই দেখা যায়। পদ না থাকলেও পদোন্নতি হয়, ইচ্ছামাফিক নতুন নতুন পদ তৈরী করে প্রশাসনের মাথা মোটা করানো হয়, অডিট ঝামেলা এড়ানোর জন্য একই পদে দু তিনজন করে পোস্টিং দেয়া হয়। এমন কি রাজনীতির পকেটকে শক্ত পোক্ত করার মানসে বাংলা ইতিহাস ভুগোলের মানুষজনদের পেশাজীবি (যেমন চীফ ইঞ্জিনিয়ার, প্রধান হিসাব রক্ষন কর্মকর্তা, বিষয় বিশেষজ্ঞ বা প্রধান নক্সাবিদ) পদে বসানো হয়। অপরপক্ষে গ্রাম গঞ্জ ও নাগরিক ব্যবস্থায় জনসেবা, স্বাস্থসেবা, শিক্ষা সেবা কার্যক্রমে ওইসব অতি সুবিধাভোগীদের কাজে লাগানোর কোন দৃষ্টিগ্রাহ্য কর্মসূচি চোখে পড়ে না। নগরের বস্তি উন্নয়নে, গঞ্জের ঘাট উন্নয়নে কিংবা গ্রামের ভূমিহীন জনপদের বস্তুগত ও মানসিক উন্নয়নে তাদের কাজে না লাগিয়ে সচিবালয় ও দপ্তর সমূহের উঁচু উঁচু অট্টালিকায় সরকারী খাই-খরচায় সাজানো গুছানো চেয়ার টেবিলে শোভিত করা হয় তাদের। বাড়তি খরচের বোঝা বাড়িয়ে সোভাগ্যবান নিষ্কর্মা ওইসব প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা উইপোঁকার ঢিপি হয়ে সরকারের প্রশাসন ব্যবস্থায় একটি ক্যায়োটিক সিচুয়েশন (chaotic situation) তৈরী ছাড়া আর কি করেন সেটাই বোধে আসে না।
সে যাই হোক, আমি আমার বিবেক বিবেচনা, নৈতিক স্বচ্ছ্বতায় সরকারী কর্মচারী হয়ে পথ চলার চেষ্টা করছি। রাজনীতির প্রকাশ্য বালখিল্যে সরকারী চাকুরের পদমর্যাদায় কালি লাগতে দিই নি। এখানেই নিহিত রয়েছে খনার বচনখ্যাত সহকর্মী উচ্চারিত, “মুখে মধু অন্তরে বিষ” নামক সেই তীক্ষ্ণ তীর বর্ষনের উপাখ্যান। জনতার মঞ্চের হানিফ নামায় নাম লেখাতে ব্যর্থ হওয়ায় জামাত শিবিরের তকমাও জুটলো কপালে। সরকারী মেকানিজমে রাজনীতির এই অনুপ্রবেশে রাষ্ট্র কি পেল জানিনা, তবে গণকর্মচারীদের হেঁসেলে জয়-জিন্দাবাদের অবারিত চলাচলে কর্মচারীদের সততা, নিষ্ঠা, নিয়মানুবর্তিতা ও পারস্পারিক সহমর্মিতায় ঘাট পড়লো। সেক্ষেত্রে সরকার ও রাজনীতি পরিপুরক হলেও রাষ্ট্রযন্ত্রের অন্দরে রাজনীতি গুলিয়ে ফেলে আজকে দেশের যে টালমাটাল অবস্থা তা কি অংক কষে বলে দিতে হবে? কাকের মাংস কাকে খায় না এটা বহুল প্রচলিত এবং সর্বমহলে মান্যতা পাওয়া একটি প্রবাদ। সরকারী মেকানিজমে যখন রাজনীতির প্রকাশ্য পদচারনায় যোগ্যতার মান নির্ধারনের মাপকাঠি যাঁচিত হয় তখন এই পাটাতনে বিচরনকারী অব্জেক্টগুলির যোগ্যতা দক্ষতার যাঁচাই বাছাইয়ের অবশিষ্ট কিছু থাকে কি! রাষ্ট্র সস্কারের কুশীলবরা এসব নিয়ে ভাববেন বৈকি!

‘২২৭ জনকে হত্যার লাইসেন্স পেয়েছি’ অডিও বক্তব্যটি শেখ হাসিনারই

চিন্ময় দাসের জামিন স্থগিত

কমলো জ্বালানি তেলের দাম

অযোদ্ধায় নতুন বাবরি মসজিদ বানাবে পাকিস্তানি সেনারা

হামাসকে নিরস্ত্র করলেও থামবে না ইসরায়েলের গণহত্যা

অভিনেতা সিদ্দিকের নামে গুলশান থানায় দুই হত্যা মামলা

কূটনৈতিক পাসপোর্টকে রাতারাতি অর্ডিনারি বানিয়ে দেওয়া পরিচালক বরখাস্ত

পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধের উত্তেজনা, পরীক্ষার মুখে ভারতের সামরিক শক্তি

নিহতরা সাধারণ কোনো পর্যটক নয়, কাশ্মীরে হামলাকারীদের দাবি

সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে আদালত চত্বরে ‘চড়-থাপ্পড়’

জুমার নামাজে খুতবা দিয়ে প্রশংসায় ভাসছেন ইউএনও

শপথ নিলে কতদিন মেয়র পদে থাকতে পারবেন ইশরাক?

ভারতের গোয়েন্দা ড্রোন ভূপাতিত করল পাকিস্তান সেনাবাহিনী

অনলাইন জুয়া চলছেই, নিঃস্ব হচ্ছেন তরুণ-তরুণীরা

চলন্ত প্রাইভেটকার থেকে ভ্যানিটিব্যাগে টান, হিঁচড়ে টেনে নিয়ে গেল নারীকে

দুনিয়ার সবচেয়ে আজব সেতু বাংলাদেশে!

গাছের সঙ্গে বাঁধা সাত শিশু কাওছারের জীবন!

কারাগারে পরিকল্পনা, তিন মাসেই কোটিপতি ২ যুবক

সিডনিতে দুই বাংলাদেশীর আকস্মিক মৃত্যু

সিডনিতে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত তরুনী খুন

অক্সফোর্ডের করোনার ভ্যাকসিন বিরোধীতায় অস্ট্রেলিয়ার ইমাম ও আর্চবিশপ

অস্ট্রেলিয়ার কারাগারেই আরেক বন্দিকে কোপালেন সেই বাংলাদেশি ছাত্রী সোমা

কিশোরীর সাথে যৌন সম্পর্কের চেষ্টাঃ সিডনিতে বাংলাদেশী ছাত্র গ্রেপ্তার

মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়ার সেরা ৪-এ বাংলাদেশি-অস্ট্রেলিয়ান কিশোয়ার

হুইপপুত্রের গোপন ব্যবসার বলি তরুণ ব্যাংকার

খোলা চুলে সিগারেট হাতে এবার নতুন বার্তা দিলেন পরীমণি

কুইন্সল্যান্ডে বারবিকিউ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককের আকস্মিক মৃত্যু

মাছ ধরতে গিয়ে পানিতে পড়ে সিডনির দুই বাংলাদেশীর মৃত্যু

হাটে কচুর লতি বিক্রি নিয়ে মুখ খুললেন বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক
