avertisements 2

করোনাকালেও কারি ইন্ডাস্ট্রির স্বীকৃতি দিলো ব্রিটিশ কারি অ্যাওয়ার্ড

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৭:২৪ পিএম, ২১ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২০ | আপডেট: ০৪:১২ পিএম, ২৩ এপ্রিল,মঙ্গলবার,২০২৪

Text

কোভিড-১৯ বাস্তবতায় ১ম বারের মতো ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত হলো ব্রিটিশ কারি অ্যাওয়ার্ডস। বিশ্ব কারি ইন্ডাস্ট্রির অস্কার পুরস্কার হিসেবে খ্যাত ব্রিটিশ এই অ্যাওয়াডের ১৬-তম ব্যতিক্রমী আয়োজনটি এ বছর কোভিড-বিধির সাথে সঙ্গতি রেখে অনুষ্ঠিত হয় গত ১৭ ডিসেম্বর। চিত্তাকর্ষক আয়োজনটির সঞ্চালক হিসেবে ছিলেন খ্যাতিমান কমিডিয়ান রোরি ব্রেমনার।

ব্রিটিশ রানি এবং দেশের প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি বিরোধী দল লেবার পার্টির শীর্ষ পর্যায়ের জাতীয় নেতৃবৃন্দের প্রশংসায় কুড়ায় কোভিডকালের এই আয়োজন। এতে এমপি- মন্ত্রীর ভার্চুয়াল উপন্থিতি ছাড়াও সোসাল ডিসটেনসিং রক্ষা করে অনুষ্ঠানস্থানে উপস্থিত হন সুপার মডেল কাপরিচ, লাভ আইল্যান্ড স্টার এমি হার্ট, বিবিসি-খ্যাত সাংবাদিক রাগি ওমরসহ আরো অনেকে।

অনলাইন এই আয়োজনে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেন, এই কঠিন বাস্তবতা রেস্টুরেন্ট  ইন্ডাস্ট্রির জন্য আরো বেশী চ্যালেঞ্জের। আর ইন্ডাস্ট্রির সেইসব কোভিড হিরোদের স্বীকৃতি দিচ্ছে ব্রিটিশ কারি অ্যাওয়ার্ড। যে রেস্টুরেন্ট এই কঠিন সময়ে আমাদের কেয়ার ওয়ার্কারদের কাছে পৌছে দিয়েছে অতি কাংখিত কারি।

ব্রিটিশ কারি অ্যাওয়াডের ফাউন্ডার এনাম আলি এমবিইর উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানটি ইউটিউবে এবং নিজস্ব ওয়েবসাইট এর মাধ্যমে উপভোগ করেন বিশ্বের লাখো-কোটি মানুষ। অ্যাওয়ার্ড ফাউন্ডার এনাম আলি এমবিই নিজের অনুভ‚তি ব্যক্ত করে বলেন, কোভিডকালের এমন বড় একটি চ্যালেঞ্জের মধ্যেও সহমর্মিতা ও মানবতার অন্য নজির তৈরি করা এমন মানুষগুলোকে স্বীকৃতি দেয়ার এ সুযোগ লাভ করে আমি সত্যিই সম্মানিত বোধ করছি।

লন্ডন মেয়র সাদিক খান বলেন, এই মহামারির সময়ে রেস্টুরেন্ট ইন্ডাস্ট্রি যেভাবে স্থানীয় কমিউনিটির পাশে দাঁড়িয়েছে তা এক দৃষ্টান্ত। লেবার পার্টির ডিপুটি লিডার অ্যাঞ্জেলা রায়নার বলেন, এটা আবারো প্রমাণিত হয়েছে কারি হচ্ছে ব্রিটিশ লাইফের অংশ।

জাস্ট ইটের সহযোগিতায় এই প্রথমবারের মতো এ পুরস্কার কোনো একটি রেস্টুরেন্টের খাদ্যমানের স্বাদ ও গুণাগুণ বিচার করে দেয়ার পরিবর্তে ১৩টি ভিন্ন ভিন্ন ক্যাটাগরিতে তুলে দেয়া হয় বিজয়ীদের হাতে। এতে বেস্ট লন্ডন রেস্টুরেন্ট শাখায় বিজয়ী হন সেলিব্রেটি শেফ অতুল

 কোচার, আউটস্ট্যান্ডিং সার্ভিস টু লোকাল কমুুনিটি ইন দ্য প্যানডেমিক শাখায় বিজয়ী হন জাকির খান (জাইকা রেস্টুরেন্ট রিডিং), ইন্সপায়ারিং পারসন শাখায় বিজয়ী হন শতবর্ষী চ্যারিটি ব্যক্তিত্ব দবিরুল ইসলাম চৌধুরী ওবিই, স্পেশাল রিকগনিশন ফর মিডিয়া কাভারেজ অব দ্য কারি ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড কমিউনিটি ইন দ্য প্যানডেমিক শাখায় বিজয়ী হন চ্যানেল এস এর চিফ রিপোর্টার মুহাম্মদ জুবায়ের, বেস্ট টেকঅ্যাওয়ে অ্যাওয়ার্ড ডিউরিং দ্য প্যানডেমিক শাখায় বিজয়ী হন শাফওয়ান চৌধুরী (ব্রিটিশ রাজ টেকঅ্যাওয়ে), আউটস্ট্যান্ডিং সার্ভিস ডিউরিং দ্য প্যানডেমিক শাখায় বিজয়ী হন হাবিবুর খান (রাধুনি স্কটল্যান্ড). লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড ইন দ্য প্যানডেমিক শাখায় বিজয়ী হন ব্রিটিশ বাংলাদেশ ক্যাটারারস অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট সেলিম চৌধুরী, এন্ট্রেপ্রেনার অ্যাওয়ার্ড শাখায় বিজয়ী হন জালফ আলি (ডাব্বাওয়াল/খাই খাই নিউক্যাসল), আউটস্ট্যান্ডিং সার্ভিস ইন দ্য প্যানডেমিক শাখায় বিজয়ী হন নাজ ইসলাম (স্যাফ্রন রেস্টু রেন্ট নর্দ্যাম্পটন), একই শাখায় আরেক বিজয়ী সুজিত ডি’আলমিডিয়া (আরবান তান্দুরি ব্রিস্টল), আনসাং শেফ অ্যাওয়ার্ড শাখায় বিজয়ী রহমান শাহ (ইস্টলিং), ইন্সপায়ারিং উওমেন শাখায় বিজয়ী পারভিন তোড়িওয়ালা (ক্যাফে স্পাইস নমস্তে) এবং ফ্যামিলি রেস্টুরেন্ট টিম অব দ্য ইয়ার শাখায় বিজয়ী হন গুল আনন্দ (ব্রিলিয়ান্ট রেস্টুরেন্ট সাউথহল)।

অনুষ্ঠানে ডেইল মিররের গবেষণা সূত্রে জানানো হয়, এবারের কোডিভ লকডাউনের শুরুতেই ইউকের বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট থেকে এনএইচএস ওয়ার্কারদের মধ্যে ৫ মিলিয়নের বেশী ফুডপ্যাক বিতরণ করা হয়।  প্রতি প্যাক ৯ পাউন্ড ধরে যার মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ৪৫ মিলিয়ন পাউন্ড। যার মাধ্যমে এক নজির স্থাপন করেছে পুরো রেস্টুরেন্ট ইন্ডাস্ট্রি। জাস্ট ইট এমডি অ্যানড্রু কেনি বলেন, এই কঠিন সময়ের হসপিটালিটি সার্ভিসদাতা হিসেবে আমরা গর্বিত।

ব্রিটিশ কারি অ্যাওয়ার্ড এর আয়োজনটি অনুষ্ঠিত হয় সেন্ট্রাল লন্ডনের একটি সুবিশাল স্টুডিওতে, যদিও প্রতিবারের মতো বিখ্যাত তারকাখচিত জমকালো অতিথি-অভ্যাগতের পরিবর্তে এবারের আয়োজনটি ছিল দর্শকশূন্য। সীমিত সংখ্যক উপস্থিতির মধ্যেও বজায় রাখা হয় কঠোর স্বাস্থ্যবিধি। যদিও এ আয়োজনটি ইউটিউব, ফেসবুক, জুম, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার ও লিংকডইন নেটওয়ার্কে লাইভ স¤প্রচারের মাধ্যমেই পৌঁছে যায় বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তে।

২০০৫ সালে ব্রিটিশ কারি অ্যাওয়ার্ডের যাত্রা শুরু। এর উদ্যোক্তারা ব্রিটেন ও আয়ারল্যান্ডে ১২ হাজারের বেশি রেস্টুরেন্ট-এর প্রতিনিধিত্ব করেন যার ৮৫ শতাংশের মালিক প্রবাসী বাংলাদেশিরা। প্রতিবছর ব্রিটেনের রাষ্ট্রীয় কোষাগারে পাঁচ বিলিয়ন পাউন্ডের অবদান রাখার পাশাপাশি লক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থান ঘটছে এ শিল্পের মাধ্যমে। ব্রিটিশ রসনার খ্যাতি আজ হয়তো বিশ্ব জুড়ে, যদিও খুব অল্প মানুষই জানে যে, আজকের এ অনন্য সাফল্যের যাত্রা শুরু হয় কিন্তু বিগত শতকের ৬০-৭০ দশকে বাংলাদেশ থেকে ব্রিটেনে পাড়ি জমানো অদম্য একঝাঁক উদ্যমী আর সাহসী মানুষের হাত ধরেই।
 

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2