avertisements 2

মিন্নির ‘আধুনিক প্রতিচ্ছবি’ বর্ষা

তুমি না মরলে আমি মাহিরের হতে পারব না

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২২ অক্টোবর, বুধবার,২০২৫ | আপডেট: ০৬:২০ এএম, ২২ অক্টোবর, বুধবার,২০২৫

Text

ভালোবাসা কখনও বাঁচায়, কখনও কাঁদায় আবার কখনও মেরেই ফেলে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ছাত্র জোবায়েদ হোসেনের ক্ষেত্রে তৃতীয়টিই সত্য হলো। যাকে ভালোবেসেছিল, সেই বর্ষাই হয়ে উঠলেন মৃত্যুর সাক্ষী। পুলিশ বলছে, ‘বর্ষা চাইলে হয়তো বাঁচাতে পারতেন জোবায়েদকে।’

মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, বর্ষাকে জিজ্ঞাসাবাদে প্রেম, প্রতারণা ও প্রতিশোধের এক ভয়াবহ গল্প উঠে এসেছে। যেখানে শোনা যাচ্ছে, বরগুনার রিফাত-মিন্নির ঘটনার প্রতিধ্বনি।

তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, ‘ঘটনাটি রিফাত শরীফ হত্যার মতোই এক নারীর দ্বিমুখী সম্পর্ক থেকে জন্ম নেওয়া ট্র্যাজেডি। পার্থক্য শুধু স্থান ও নামের। বর্ষা, মাহির আর জোবায়েদের গল্প যেন সেই পুরোনো মিন্নি-রিফাত-নয়ন বন্ডের ঘটনার আধুনিক প্রতিচ্ছবি।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের একই পরিমণ্ডলে বর্ষা ও জোবায়েদের পরিচয়। ধীরে ধীরে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। কিন্তু একই সময়ে বর্ষা প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন আরেক ছাত্র মাহির হোসেনের সঙ্গে। দুই তরুণের সঙ্গেই বর্ষা সম্পর্ক বজায় রাখছিলেন বলে জানিয়েছে তদন্ত সূত্র। জোবায়েদের সঙ্গে দেখা করতেন, আবার মাহিরের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ ছিলেন তিনি।

একসময় দুই প্রেমিকই জানতে পারেন বর্ষার দ্বিমুখী সম্পর্কের কথা। শুরু হয় টানাপোড়েন, সন্দেহ, ঝগড়া ও ঈর্ষা।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্ষার প্ররোচনায় মাহির ও তার বন্ধু আয়লানসহ তিনজন মিলে জোবায়েদকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। বর্ষা মাহিরকে বলেন, ‘জোবায়েদকে না সরালে আমি তোমার কাছে ফিরতে পারব না।’

২৬ সেপ্টেম্বরের রাতে, বর্ষার কথায় ক্ষুব্ধ মাহির দেখা করতে যান জোবায়েদের সঙ্গে। সেখানে শুরু হয় বাগ্‌বিতণ্ডা। একপর্যায়ে মাহির ও তার সহযোগীরা নতুন কেনা সুইচ গিয়ার দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকেন জোবায়েদকে।

পুলিশের বর্ণনা অনুযায়ী, হামলার পরও তখনো বেঁচে ছিলেন জোবায়েদ। বাঁচার মরিয়া চেষ্টায় তিনি রক্তাক্ত অবস্থায় দোতলা থেকে দৌড়ে উঠে যান তিনতলায়। সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন বর্ষা। মুখোমুখি হতেই তিনি কাঁদো কণ্ঠে বলে, ‘বর্ষা, আমাকে বাঁচাও’। কিন্তু বর্ষার ঠাণ্ডা উত্তর, ‘তুমি না মরলে আমি মাহিরের হবো না’। এ কথা বলেই তিনি ঘুরে চলে যান। পুলিশ কর্মকর্তাদের ভাষায়, বর্ষা তার মৃত্যু নিশ্চিত করে চলে যান। এরপর জোবায়েদ দরজায় কড়া নাড়লেও কেউ দরজা খোলেনি। কিছুক্ষণের মধ্যেই লুটিয়ে পড়ে তার নিথর দেহ।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, ‘ঘটনাটি একেবারেই ত্রিভুজ প্রেমের জটিল পরিণতি। বর্ষা ছিল মূল পরিকল্পনাকারী। মাহির ও আয়লান তার কথাতেই হত্যায় অংশ নেয়। জোবায়েদ তখনো বাঁচার জন্য লড়ছিল, কিন্তু কেউ তাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি।’ 

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2