ট্রাম্পকে খুশি রাখতে কূটনীতি ও প্রশংসায় পাকিস্তানের বাজিমাত
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১৮ অক্টোবর,শনিবার,২০২৫ | আপডেট: ০১:২১ এএম, ১৯ অক্টোবর,রবিবার,২০২৫

ছবি: সংগৃহীত
গাজায় যুদ্ধবিরতির পর সোমবার বিশ্বনেতাদের সামনে বিজয়োল্লাসে মেতেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেই মুহূর্তে তিনি পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে প্রশংসা করে বললেন, ‘আমার প্রিয় ফিল্ড মার্শাল।’
এরপর ট্রাম্প মঞ্চ ছেড়ে দেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে, যিনি ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে ট্রাম্পের শান্তি উদ্যোগের প্রশংসা করেন এবং সেদিনই ঘোষণা দেন— ট্রাম্পকে আবারও নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন দেবেন।
এক বছর আগেও এমন দৃশ্য অকল্পনীয় ছিল। ওয়াশিংটন বরাবরই পাকিস্তান থেকে দূরত্ব বজায় রেখেছে— রাজনৈতিক অস্থিরতা ও যুক্তরাষ্ট্র নিষিদ্ধ ইসলামপন্থী গোষ্ঠীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার অভিযোগে। তার ওপর চীনের ঘনিষ্ঠ মিত্র হওয়ায় পাকিস্তানের প্রতি মার্কিন আস্থাও ছিল সীমিত।
ট্রাম্পের আগের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নিজের পুরো মেয়াদে কোনো পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রীকেও ফোন করেননি। আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পর তিনি পাকিস্তানকে বলেছিলেন ‘বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক দেশগুলোর একটি’।
কিন্তু ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতি পুরো পাল্টে গেছে। পুরনো বন্ধুত্বে ভাঙন ধরেছে, আর বিরোধীরাও জায়গা পাচ্ছে হোয়াইট হাউসে— যদি তাদের কাছে কিছু মূল্যবান দেওয়ার থাকে।
এই নতুন বাস্তবতায় পাকিস্তান কূটনৈতিকভাবে যেন পাঠ্যপুস্তক তৈরি করেছে। তাদের নেতারা এখন হোয়াইট হাউসের নিয়মিত অতিথি; অন্য দেশের নেতাদের মতো ট্রাম্পের তিরস্কারের শিকার হচ্ছেন না। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি নতুন রেথিয়ন ক্ষেপণাস্ত্রের চালান পাওয়ার অপেক্ষায়, আর দেশটির কূটনীতিকরা প্রতিবেশী ও প্রতিদ্বন্দ্বী ভারতকে আরোপিত কঠোর শুল্কের তুলনায় অনেক কম শুল্কে বাণিজ্য চুক্তি করেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই সাফল্যের পেছনে আছে দুটি বিষয়— চীনের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকা বিরল খনিজে যুক্তরাষ্ট্রকে অগ্রাধিকার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি এবং ট্রাম্পকে প্রশংসায় ভরিয়ে তোলার কৌশল।
এই কূটনৈতিক খেলায় পাকিস্তানের অভ্যন্তরে উচ্ছ্বাস তৈরি হলেও, ক্ষুব্ধ ভারত। কারণ, সস্তা রুশ তেল কেনা চালিয়ে যাওয়ায় ভারতকে এখন উচ্চ শুল্কের মুখে পড়তে হচ্ছে।
পাকিস্তান-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের উষ্ণতার কেন্দ্রবিন্দুতে আছেন ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির— দেশটির শক্তিশালী সেনাবাহিনীর প্রধান, যাদের রাজনৈতিক প্রভাব পাকিস্তানের ইতিহাসে দীর্ঘদিন ধরেই প্রভাবশালী।
৫৭ বছর বয়সী মুনির এক শিক্ষক পরিবারের সন্তান। ২০২২ সালে সেনাপ্রধান হওয়ার আগে তিনি ছিলেন পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের প্রধান। সহকর্মীদের মতে, তিনি অত্যন্ত সংযত ও গোপনপ্রবণ কর্মকর্তা— নিজের জনসম্মুখে ভাবমূর্তি খুব নিখুঁতভাবে নিয়ন্ত্রণ করেন।
তবে চলতি বছরের মে মাসে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে চার দিনব্যাপী সংঘাতে তার নাম আন্তর্জাতিক আলোচনায় আসে। সেই সংঘাতে বহু সৈন্য ও বেসামরিক মানুষ নিহত হন এবং দুই পারমাণবিক প্রতিবেশীর মধ্যে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের আশঙ্কা তৈরি হয়।
পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে ট্রাম্প দুই পক্ষকেই যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান, এবং সংঘাত থামলে দ্রুত দাবি করেন— এই সাফল্যের কৃতিত্ব তার। পাকিস্তান প্রকাশ্যে ট্রাম্পের সেই দাবিকে সমর্থন জানায় এবং পরে তাকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন দেয়— তার দ্বিতীয় মেয়াদে এটি ছিল ট্রাম্পকে মনোনয়ন দেওয়া প্রথম দেশ।
অন্যদিকে ভারত কঠোর ভাষায় জানায়, মার্কিন প্রেসিডেন্টের কোনো ভূমিকাই ছিল না, বিষয়টি পুরোপুরি দ্বিপাক্ষিক।
পাকিস্তান দাবি করে, মে মাসের সংঘাতে তারা ভারতের সাতটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে— যে সংখ্যা ট্রাম্প নিজেও একাধিকবার প্রকাশ্যে বলেছেন। ভারত কখনো এ দাবি স্বীকার করেনি, বরং প্রথমে দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করেছিল।
সংঘাতের কয়েক দিন পর মুনির— যিনি ওই সংকটে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য ফিল্ড মার্শালের পদে উন্নীত হন— ওয়াশিংটনে যান এবং হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজে বসেন। পাকিস্তানের কোনো বেসামরিক কর্মকর্তা ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাওয়া এটাই ছিল প্রথম সেনাপ্রধান।
সূত্র: সিএনএন