চলাচলের রাস্তায় নামাজ আদায়, ইসলাম কী বলে?
                                    
                                    
                                        
                                            ডেস্ক রিপোর্ট
                                        
                                    
                                   
                                     প্রকাশ:  ১২:০০ এএম,  ১৫ নভেম্বর,মঙ্গলবার,২০২২ | আপডেট:  ০৭:৫৩ পিএম,  ৪ নভেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৫
                                
                        
                    জীবনে চলার পথে আমরা যেকোনো সমস্যার সম্মুখীনই হই না কেন, ইসলাম তার সুষম সমাধান দিয়েছে। কারণ, ইসলাম পরিপূর্ণ একটি জীবনব্যবস্থা।
এদিকে আমাদের দেশে প্রচুর মসজিদ, তবে বাস্তবতা হলো- মুসলিমদের সংখ্যা বিবেচনায় তা অপ্রতুল। যদি ইসলামি বিধান মেনে সব মুসলমান প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত নামাজ মসজিদে গিয়ে আদায় করতো, তাহলে মসজিদের অপ্রতুলতার বিষয়টি আমরা বুঝতে পারতাম। কিন্তু সত্যি হলো- আমরা এখনও বাস্তবিক মুসলিম হতে পারিনি।
ইসলামে দৈনিক ৫ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হলেও শুক্রবারে জুমার নামাজ মুসলিমদের কাছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। জুমা জামাতে ছাড়া একাকী আদায় সহি হয় না। জোহরের নামাজের বদলে এদিন মুসলমানরা মসজিদে এসে জামাতের সঙ্গে জুমার নামাজ আদায় করেন। আর জুমার দিনই মসজিদের অপ্রতুলতার বিষয়টি টের পাওয়া যায়। কারণ আমাদের দেশের শহরগুলোতে যে মসজিদ আছে, সেগুলোতে মুসল্লিদের জায়গা সংকুলান হয় না। এতে তারা বাধ্য হয়ে মানুষের চলাচলের রাস্তা অথবা মসজিদের আশপাশে খোলা জায়গায় নামাজে দাঁড়িয়ে যায়। অথচ চলাচলের রাস্তা কিংবা মানুষের কষ্টের কারণ হয়– এরকম স্থানে রাসূল (সা.) নামাজ পড়তে নিষেধ করেছেন। হাদিসে এসেছে, ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল (সা.) ৭ জায়গায় নামাজ আদায় করতে নিষেধ করেছেন- ময়লা রাখার স্থানে, কসাইখানায়, কবরস্থানে, চলাচলের রাস্তায়, গোসলখানায়, পশুশালায় এবং বাইতুল্লাহর (কাবা ঘরের) ছাদে। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৪৬)।
এখন প্রশ্ন হলো- তাহলে যে, প্রতি শুক্রবার অসংখ্য মুসল্লি চলাচলের রাস্তায় জুমা আদায় করেন, তাদের নামাজ কী সহি হবে?
এ প্রসঙ্গে ভারতের ঐতিহ্যবাহী ইসলামি বিদ্যাপীঠ নদওয়াতুল উলামার দারুল ইফতা থেকে বলা হয়েছে, হ্যাঁ, তাদের নামাজ সহি হবে। তবে এর আগে মুসল্লিকে জুমার নামাজ পড়তে এমন মসজিদে যেতে হবে, যে মসজিদ যথেষ্ট প্রশস্ত। যদি প্রথম মসজিদে জায়গার সংকুলান না হয়, তাহলে অন্য মসজিদে যাবে। সেখানেও যদি জায়গা না পায়, তাহলে চলাচলের রাস্তায় শুধু জুমার ফরজ ২ রাকাত পড়বে। বাকি সুন্নাত ও দোয়া দরুদ পড়তে হবে ভিন্ন কোনো জায়গায়।
জরুরি প্রয়োজনে রাস্তায় নামাজ আদায় সহি হওয়ার ব্যাপারে একটি হাদিসের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা রাস্তার মাঝে বসা সম্পর্কে সতর্ক হও। সাহাবিরা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল, তাতে না বসে তো আমাদের উপায় নেই। আমরা সেখানে (বসে) আলোচনা করে থাকি। রাসূল (সা.) বলেন, যদি তোমাদের একান্তই বসতে হয়, তাহলে তোমরা রাস্তার হক আদায় করবে। সাহাবিরা প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসূল, রাস্তার হক কী? তিনি বলেন, দৃষ্টি সংযত রাখা, কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকা, সালামের জবাব দেওয়া, সৎকাজের আদেশ দেওয়া এবং অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করা।’ (বুখারি, হাদিস : ৬২২৯)।
এ বিষয়ে করাচির আল ইখলাস দারুল ইফতারের ফতোয়া হলো- এরূপ পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে মুসল্লিরা অন্য মসজিদে যাবে। যদি তা সম্ভব না হয়, তাহলে জুমার নামাজ ত্যাগ করা যাবে না; বরং রাস্তার কিছু অংশে নামাজে দাঁড়াবে এবং কিছু অংশ যাত্রীদের আসা-যাওয়ার জন্য খোলা রাখবে। এটাও যদি সম্ভব না হয়, তাহলে রাস্তায় শুধু জুমার ২ রাকাত ফরজ আদায় করতে হবে। বাকি সুন্নত-নফল আদায় করতে হবে সেখান থেকে সরে অন্য জায়গায়। (আল ইখলাস ওয়েবসাইটের ৩৪৫১ নম্বর ফতোয়া)।
রাস্তায় নামাজ আদায় সম্পর্কে সৌদি আরবের বিখ্যাত ইসলামিক স্কলার শায়খ সালেহ আলমুনাজ্জিদ বলেন, স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে মানুষ চলাচলের রাস্তায় নামাজ আদায় জায়েজ নেই, তবে যদি মসজিদে স্থান সংকুলান না হয়, তখন মসজিদ সংলগ্ন পথের ওপর প্রয়োজনের স্বার্থে নামাজ আদায়ের সুযোগ রয়েছে। (আল ইসলাম সুআল জাওয়াব ওয়েব)।


                                    
                                    
                                    
                                    
                                    


