সেরা ডাক্তাররা কর ফাঁকিতেও চ্যাম্পিয়ন
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২ নভেম্বর,রবিবার,২০২৫ | আপডেট: ০৭:৫৫ পিএম, ২ নভেম্বর,রবিবার,২০২৫
দেশের ১৭ কোটির বেশি মানুষের বাংলাদেশে ডাক্তার আছেন দেড় লাখ। প্রতি এক হাজার ২০০ জনের জন্য ডাক্তার আছেন একজন। ফলে হাসপাতাল আর ডাক্তারের চেম্বারে অবধারিতভাবেই রোগীর লম্বা লাইন। এমন নয় যে রোগী গরিব হলেই ফ্রি চিকিৎসা দেন ডাক্তাররা! বরং ডাক্তারদের ফি এবং কারণে-অকারণে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার খরচও অনেক বেশি।
এমন খবরও গণমাধ্যমে দেখা যায়, দরিদ্র রোগী মারা যাওয়ার পর টাকা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় লাশও ফেরত দিতে গরিমসি করেন অনেক হাসপাতাল কিংবা ডাক্তার। মহৎ এ পেশাটিকে কোনো কোনো ডাক্তার টাকা কামাইয়ের মেশিনে পরিণত করেছেন। অথচ বিপুল অঙ্কের টাকা আয় করেও তাঁদের অনেকে সরকারকে কাঙ্ক্ষিত কর দেন না। বরং আয় ও সম্পদ লুকিয়ে বড় অঙ্কের কর ফাঁকি দিয়ে যাচ্ছেন বছরের পর বছর।
কর বিভাগের কাছে ধরা পড়ার পর কেউ কেউ জরিমানাসহ ফাঁকির টাকা জমা দিচ্ছেন। কিন্তু বেশির ভাগই ধরাছোঁয়ার বাইরে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, দেশে অন্তত ১০ হাজার ডাক্তার রয়েছেন, যাঁরা বেশি আয় করেও বছরে অন্তত ছয় হাজার ২৫০ কোটি টাকার কর ফাঁকি দেন।
তথ্য-উপাত্ত বলছে, চিকিৎসা খাতে দেশের মানুষ বছরে খরচ করে ৭৭ হাজার কোটি টাকা।
এই টাকা যায় হাসপাতাল, ডাক্তার আর ওষুধের পেছনে, যার বেশির ভাগই যায় নামকরা ডাক্তারদের পকেটে। কোটি টাকার বেশি আয় করে তাঁরা কাটান বিলাসী জীবন। অন্যদিকে বিশাল আয়ের বিপরীতে কর দেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁরা যথেষ্টই কৃপণ। আয়ের তথ্য গোপন করে দিচ্ছেন কয়েক হাজার কোটি টাকার কর ফাঁকি। অথচ সরকার কাঙ্ক্ষিত কর পেলে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন কিংবা দেশ পরিচালনার জন্য সরকারকে বিদেশে হাত পাততে হয় না।
সরকারি তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা ও বিশেষ অনুসন্ধানে এসব অনিয়মের চিত্র ধরা পড়েছে।
সেরা ডাক্তাররা কর ফাঁকিতেও চ্যাম্পিয়ন এক মাসের বেশি সময় নিয়ে রাজধানীর দুজন শীর্ষ ডাক্তারকে নিয়ে অনুসন্ধান করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে একজন বাংলাদেশে নিউরো মেডিসিনের অন্যতম পথিকৃৎ বলে পরিচিত প্রফেসর ডা. কাজী দ্বীন মোহাম্মদ। তিনি চেম্বার করেন এসপিআরসি অ্যান্ড নিউরোলজি হাসপাতালে। এ ছাড়া গুরুতর রোগী ভর্তি হলে শমরিতা হাসপাতালে তাদের চিকিৎসা করেন। আরেকজন প্রফেসর ডা. এ কে এম মূসা। তিনি বারডেম জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান। আলোক হেলথকেয়ারে সপ্তাহে ছয় দিন ও ল্যাবএইড হাসপাতালে সপ্তাহে চার দিন চেম্বার করেন তিনি।
ডা. দ্বীন মোহাম্মদ কর অঞ্চল-২৩-এর করদাতা। আয়কর নথি অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ করবর্ষে তাঁর আয় সাত লাখ ৪৮ হাজার টাকা। সম্পদের পরিমাণ ৫৬ লাখ ৯০ হাজার টাকা। ২০২৪-২৫ করবর্ষে আয় সাত লাখ ৫৫ হাজার ৭৩০ টাকা। সম্পদ দেখিয়েছেন ৬২ লাখ ৮৭ হাজার টাকা। অথচ অনুসন্ধানে দেখা গেছে, তাঁর কাছে রোগীর সিরিয়াল পাওয়া অনেকটাই ভাগ্যের ব্যাপার! সিরিয়াল পাওয়া রোগী দেখা শুরু করেন বিকেল ৪টা থেকে। তবে রোগীর চাপ বিবেচনায় অনেক সময় রাত ১টা পর্যন্তও রোগী দেখেন।
এসপিআরসি হাসপাতালে শুক্র-শনিবার বাদে বাকি পাঁচ দিন রোগী দেখেন দ্বীন মোহাম্মদ। এ ছাড়া তাঁর চেম্বার বন্ধ থাকে সরকারি ছুটির দিনে। নাম-যশ ও খ্যাতির কারণে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে থেকেও তাঁর চেম্বারে রোগীর ঢল থাকে। জানা যায়, দিনে কমপক্ষে ৫০ জন রোগী দেখেন তিনি। প্রতি রোগীর জন্য নির্ধারিত ফি এক হাজার ৫০০ টাকা। সে হিসাবে দিনে আয় ৭৫ হাজার টাকা। রোগীর অবস্থা মোটামুটি স্বাভাবিক থাকলে এই হাসপাতালেই চলে চিকিৎসা। তবে গুরুতর রোগী হলে তাঁর অধীনে ভর্তি হন শমরিতা হাসপাতালে। বিভিন্ন টেস্ট, ভর্তির খরচ, ছোটখাটো সার্জারি থেকে অন্যান্য খরচ বাবদ রোগীর পকেট থেকে চলে যায় লাখ টাকা। এই টাকার অন্তত ৬০ শতাংশ পর্যন্ত পান ডাক্তার। শুধু রোগীর ফি বাবদ মাসে ২২ দিন রোগী দেখলে তাঁর মাসিক আয় ১৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা। বিভিন্ন ধরনের উৎসব, ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কাজ বাদ দিয়ে বছরে ২০০ দিন রোগী দেখলে তাঁর আয় এক কোটি ৫০ লাখ টাকা। এর সঙ্গে শমরিতায় ভর্তি হওয়া রোগীর চিকিৎসা, সার্জারি, টেস্টের কমিশন ও ওষুধ কম্পানির টাকা-উপহার যোগ করলে এর পরিমাণ অন্তত দ্বিগুণ হবে। অর্থাৎ বছরে আয় কমপক্ষে তিন কোটি টাকা। সে হিসাবে পুরো তিন কোটি টাকাই তিনি রাখছেন অপ্রদর্শিত। মানে এই টাকার ওপর কর পাচ্ছে না সরকার।
কর ফাঁকির বিষয়ে জানতে ডা. দ্বীন মোহাম্মদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরে হোয়াটসঅ্যাপে আয়ের তথ্য গোপন করে কর ফাঁকির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে খুদেবার্তা পাঠালে তিনি দেখেও এর কোনো জবাব দেননি।
ডা. এ কে এম মূসা কর অঞ্চল-১০-এর করদাতা। তাঁর আয়কর নথি অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ করবর্ষে আয় ৩২ লাখ ৩৫ হাজার ৪৪৬ টাকা। সম্পদের পরিমাণ চার কোটি ১২ লাখ টাকা। ২০২৪-২৫ করবর্ষে আয় ৪৬ লাখ চার হাজার ৪৭০ টাকা। সম্পদ দেখিয়েছেন চার কোটি ৪১ লাখ টাকা। অথচ সরেজমিনে দেখা গেছে, তাঁর কাছে সিরিয়াল নিতে গেলে সরেজমিনে উপস্থিত হতে হয় ভোর সাড়ে ৬টায়। আলোক হেলথকেয়ারে সপ্তাহে ছয় দিন ও ল্যাবএইড হাসপাতালে সপ্তাহে চার দিন চেম্বার করেন তিনি।
আলোকে প্রতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার ছাড়া বাকি ছয় দিন বসেন সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত। রোগী দেখেন গড়ে ৩৫ জন। প্রথম ভিজিটে এক হাজার ২০০ টাকা, এক মাসের মধ্যে দ্বিতীয় ভিজিটে এক হাজার টাকা, রিপোর্ট দেখাতে ৩০০ টাকা চার্জ করেন ডা. মূসা। নতুন-পুরনো রোগীর সমন্বয়ে গড় ফি এক হাজার ১০০ টাকা হিসাব করলে প্রতিদিনের আয় ৩৮ হাজার ৫০০ টাকা। এই টাকার ৭০ শতাংশ ডাক্তারের, বাকি ৩০ শতাংশ হাসপাতালের। সে হিসাবে ডাক্তার পান ২৬ হাজার ৯৫০ টাকা।
অন্যদিকে ল্যাবএইডে প্রথম ভিজিটে এক হাজার ৫০০ টাকা, এক মাসের মধ্যে দ্বিতীয় ভিজিটে ৮০০ টাকা, প্রথম তিন দিনের মধ্যে রিপোর্ট দেখালে ৩০০ টাকা। নতুন-পুরনো রোগীর সমন্বয়ে প্রতিটি রোগীর গড় ফি এক হাজার ১৫০ টাকা হিসাব করলে প্রতিদিন আয় হয় ২৩ হাজার টাকা। এই টাকার ৭০ শতাংশ পান ডাক্তার, বাকি ৩০ শতাংশ পায় হাসপাতাল। সে হিসাবে ডাক্তার পান ১৬ হাজার ১০০ টাকা।
শুধু রোগী দেখে দুই হাসপাতালে চেম্বার থেকে ডা. মূসার আয় ৪৩ হাজার ৫০ টাকা। দুই হাসপাতালে বছরে ৩০০ দিন দেখলে সেই ফি বাবদ তাঁর আয় এক কোটি ২৯ লাখ ১৫ হাজার টাকা। এবার গড়ে ৫৫ জন রোগীর মধ্যে অন্তত ২৫ জন রোগীকে রক্ত পরীক্ষা, আল্ট্রাসাউন্ড, এক্স-রে, সিটিস্ক্যান, এমআরআইসহ বিভিন্ন ধরনের টেস্ট করানোর প্রেসক্রিপশন দেন। এই টেস্টে ক্ষেত্রবিশেষে ২০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমিশন পান ডাক্তার। হাসপাতালভেদে ডাক্তারদের টেস্টের একটি নির্দিষ্ট টার্গেটও থাকে। এ ছাড়া বিভিন্ন ওষুধ কম্পানির কাছ থেকে তাঁদের ব্র্যান্ডের ওষুধ প্রেসক্রিপশনে লিখে দেওয়ার বিনিময়ে থাকে মোটা অঙ্কের টাকা ও উপহার। এসব খাতে আয় রোগী দেখার ফির তুলনায় কয়েক গুণ বেশি।
অথচ ২০২৪-২৫ করবর্ষে দেখানো আয় অনুযায়ী, শুধু রোগীর ফি বাবদ আয় থেকেও তিনি তাঁর আয় কম দেখিয়েছেন অন্তত ৮৩ লাখ ১০ হাজার ৫৩০ টাকা। টেস্টের কমিশন ও ওষুধ কম্পানির টাকা যোগ করলে এই অঙ্ক অন্তত দুই কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। আয়ের তথ্য গোপন করে কর ফাঁকির বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে ডা. এ কে এম মূসার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি পরিচয় নিশ্চিত হয়ে ‘রোগী দেখছি, পরে ফোন দেন’ বলে কেটে দেন। এরপর প্রতিবেদকের নাম্বার ব্লক করে রাখায় টানা কয়েক দিন ফোন দিয়েও তাঁকে পাওয়া যায়নি।
অথচ আয়কর নির্দেশিকা অনুযায়ী, একজন ডাক্তারের নতুন রোগী কিংবা পুরনো রোগী দেখার ফি, বার্ষিক মূল বেতন, বাড়িভাড়া ভাতা, উৎসব ভাতা, চিকিৎসা ভাতাসহ যেকোনো আয় তাঁর করনথিতে উল্লেখ করা বাধ্যতামূলক। তবে দেশের শীর্ষস্থানীয় এই দুই ডাক্তার তাঁদের আয়ের নামমাত্র অর্থই উল্লেখ করেছেন। পৃথক আয়কর রিটার্নে দুজনের আয় কম দেখানো হয়েছে বছরে পাঁচ কোটি টাকা। এই টাকার ওপর ২৫ শতাংশ হারে সরকার কর পেলে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে যোগ হতো এক কোটি ২৫ লাখ টাকা। সে হিসাবে গড়ে কর ফাঁকির পরিমাণ ৬২ লাখ ৫০ টাকা। পাঁচ বছর এই হারে কর ফাঁকি দিলে গড়ে দুজনের এই ফাঁকির পরিমাণ দাঁড়ায় ছয় কোটি ২৫ লাখ টাকা। সঙ্গে জরিমানা যোগ করলে অঙ্কটা আরো বড় হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ বুলেটিনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে নিবন্ধিত ডাক্তারের সংখ্যা এক লাখ ৪১ হাজার ৯৯৯। জনসংখ্যা (১৭ কোটি ১০ লাখ) বিবেচনায় প্রতি হাজার মানুষের জন্য ডাক্তার আছেন শূন্য দশমিক ৮৩ জন।
আয়কর কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে, ডাক্তারদের বেশির ভাগই ঠিকমতো কর পরিশোধ করেন না। তাঁদের মধ্যে কোটি টাকা আয় করা ডাক্তারের সংখ্যা অন্তত ১০ হাজার। তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ ও আয়কর কর্মকর্তাদের দাবি অনুযায়ী, তাঁদের বেশির ভাগই প্রকৃত আয় গোপন করেন। অনুসন্ধানে দুই ডাক্তারের মতো গড়ে ৬২ লাখ ৫০ হাজার টাকা করে কর ফাঁকি দিলে সেই অঙ্ক দাঁড়ায় ছয় হাজার ২৫০ কোটি টাকা। পাঁচ বছর এই টাকা ফাঁকি দিলে তার পরিমাণ দাঁড়ায় ৩১ হাজার ২৫০ কোটি টাকা। দেশের সব ডাক্তারের কর ফাঁকির পরিমাণ নির্ধারণ করা সম্ভব না হলেও তা এই টাকার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি হবে। ডাক্তারদের কর ফাঁকির টাকা দিয়ে নতুন একটি মেট্রো রেল নির্মাণের খরচ জোগাতে পারত সরকার। দেশের একমাত্র মেট্রো রেলের উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত সরকারের ব্যয় নির্ধারণ হয়েছে ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। এর মধ্যে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত নিয়মিত যাত্রীসেবা চলছে।
আয়কর আইন ২০২৩-এর ধারা ৩১২ অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি আয় গোপন করলে কিংবা সম্পত্তি, দায় ও ব্যয়ের মিথ্য তথ্য দিলে ইচ্ছাকৃতভাবে করদায় এড়িয়ে যাওয়া বলে গণ্য হবে। সে ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ছয় মাস থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড, অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আয়কর বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ‘রোগী দেখা থেকে শুরু করে অন্য হাসপাতালে রোগীকে রেফার করা, বিভিন্ন ধরনের টেস্ট, রোগী ভর্তি, কেবিনে নেওয়া, অপারেশন করা, ওষুধ কম্পানির কাছ থেকে সুবিধা পাওয়াসহ ডাক্তারের অনেক ধরনের আয় আছে। তবে এসব তাঁরা ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন করেন না। তাঁরা এসব নগদ টাকায় নেন। কর ফাঁকি দেন জেনেও নানা রকম নির্দেশনা থাকায় তাঁদের ফাইলও অডিট করা যাচ্ছে না। এতে বিপুল রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। বিভিন্ন ব্যাংকে তাঁদের নামে এফডিআর ও আলিশান ফ্ল্যাট থাকলেও তাঁরা সেই তথ্য রিটার্নে উল্লেখ করছেন না।’
কর ফাঁকি প্রতিরোধে এনবিআর কোনো কাজ করছে কি না জানতে চাইলে সংস্থাটির কর প্রশাসন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনার সদস্য জি এম আবুল কালাম কায়কোবাদ বলেন, ‘প্রতিটি রাজস্ব সভায় কর কমিশনারদের এ বিষয়ে কাজ করতে বলা হয়েছে। গোয়েন্দা কার্যক্রম বেগবান করতে প্রতিটি কর অঞ্চলে গোয়েন্দা ও তদন্ত সেল (আইআইসি) স্থাপন করা হয়েছে। যাঁদের বিরুদ্ধে কর ফাঁকির অভিযোগ থাকবে তাঁদের নিয়ে কাজ করবে নিজ নিজ কর অঞ্চলের সংশ্লিষ্ট সেলগুলো।’
সেরা করদাতার আড়ালে কর ফাঁকি : স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত দেশের অন্যতম সেরা চিকিৎসকদের একজন ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত। নাক কান গলা বিভাগে পেশাগত দক্ষতা ও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকায় শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসকও ছিলেন তিনি। বড় অঙ্কের আয় থাকায় করও দিয়েছেন বেশি। টানা আটবার পেয়েছেন সেরা করদাতার খেতাব। তবে সেরা করদাতার আড়ালে তিনি ছিলেন একজন কর ফাঁকিবাজ। সম্প্রতি এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেলের (সিআইসি) অনুসন্ধানে তাঁর করনথিতে এফডিআরের তথ্য গোপনের চিত্র উঠে আসে। কর ফাঁকি প্রমাণিত হওয়ায় প্রাথমিকভাবে কর ফাঁকির এক কোটি ৭২ লাখ টাকা পরিশোধও করেন তিনি। এ বিষয়ে আরো অনুসন্ধান চলছে বলে জানা গেছে। বিরোধী দলের অংশগ্রহণ ছাড়া বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতা ও কারচুপির নির্বাচনে দুবার এমপি হয়েছিলেন প্রাণ গোপাল। চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এনবিআরের সামনে চার লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে আয়কর খাতের লক্ষ্য ধরা হয়েছে এক লাখ ৮২ হাজার কোটি টাকা। সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে আয়কর খাতেই ঘাটতির পরিমাণ ছয় হাজার ৫৪১ কোটি টাকা। এই ঘাটতির পেছনে অনেক কারণের মধ্যে বড় অঙ্কের কর ফাঁকি শীর্ষে।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সিনিয়র গবেষণা সহযোগী তামীম আহমেদ বলেন, ‘শুধু টপ প্রফেশনের না, সাধারণ মানুষ হিসেবে সবারই কর দেওয়ার বিষয়ে দায়িত্বশীল হওয়া উচিত। কর ব্যবস্থায় তদারকি দুর্বল থাকায় অনেকেই এই সুযোগটা নিচ্ছেন। যারা ফাইল দেখছেন ঘুরেফিরে বারবার একই ফাইল দেখছেন। এ ক্ষেত্রে একটা স্ট্রাকচার ফলো করলে কর ফাঁকি দেওয়ার চিন্তা কমে যেত। ইচ্ছাকৃতভাবে প্রকৃত আয় কমিয়ে দেখানো একটি ফৌজদারি অপরাধ। এই দণ্ডবিধির আওতায় কিছু ব্যক্তিকে শাস্তি দিলে তা উদাহরণ হয়ে থাকত। ধরা খাওয়ার ভয়ে কেউ কর ফাঁকি দিত না।’
সৌজন্যে: কালের কণ্ঠ





