পাঁচ দেশ থেকে আরো ৬ রকমের টিকা আসছে
                                    
                                    
                                        
                                            ডেস্ক রিপোর্ট
                                        
                                    
                                   
                                     প্রকাশ:  ১২:০০ এএম,  ২৭ জুন,রবিবার,২০২১ | আপডেট:  ১১:৩৮ পিএম,  ৩ নভেম্বর,সোমবার,২০২৫
                                
                        
                    চীন, রাশিয়া, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য থেকে দেশে করোনাভাইরাসের টিকা আসার ব্যাপারে বড় সুখবর আসতে পারে এ সপ্তাহেই। সব কিছু ঠিক থাকলে মধ্য জুলাইয়ের মধ্যে এই পাঁচ দেশ থেকে কমপক্ষে ছয় রকম টিকার ৫০ লাখ ডোজ দেশে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। এর মধ্যে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার কিছু টিকা আসতে পারে ভারত ও যুক্তরাজ্য থেকে।
সরকারের টিকা ব্যবস্থাপনায় যুক্ত নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক সূত্র কালের কণ্ঠকে এমনই তথ্য দিয়েছে। এর মধ্যে কোভ্যাক্স থেকে মডার্নার ২৫ লাখ ডোজ টিকা আসার বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও আমেরিকান রাষ্ট্রদূত। পাশাপাশি সরকারের অনুমতি নিয়ে বেসরকারি কয়েকটি মাধ্যমেও দেশে টিকা আনার প্রক্রিয়া চলছে।
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘টিকার বুকিং বা প্রতিশ্রুতিতে আমরা পিছিয়ে নেই। বরং অনেক দেশের আগেই আমরা বুকিং দিয়েছি আবার প্রতিশ্রুতিও পেয়েছি। বিশেষ করে সেরাম ও কোভ্যাক্স থেকেই আমাদের প্রায় ১১ কোটি ডোজ টিকার বুকিং রয়েছে। এর বাইরে সাম্প্রতিক সময়ে চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে আলাদা করে টিকা আনার প্রক্রিয়াও যুক্ত হয়েছে। ওই দুই দেশ থেকে কমপক্ষে তিন কোটি ডোজ টিকা আসবে। এ ছাড়া বেসরকারি মাধ্যমেও টিকা আনার কাজ করছে অনেকেই।’ তিনি বলেন, ‘সমস্যা হচ্ছে টিকা পেতে দেরি হয়ে যাচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে কেউ দিচ্ছে না। কারণ যেসব দেশ থেকে টিকা আসবে, সেখানেও নানা ধরনের সংকট রয়েছে।’
মন্ত্রী আরো বলেন, ‘চুক্তির বাইরে উপহার হিসেবেও আমরা এ পর্যন্ত ৪৩ লাখ ডোজ টিকা পেয়েছি। এটাও কিন্তু বড় ব্যাপার। পাশাপাশি এ বছরের শেষ নাগাদ এবং আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকার বড় একাধিক লট দেশে আসবে বলেও অনেকটা নিশ্চিত হওয়া গেছে।’
মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত কোভ্যাক্স থেকে এসেছে ফাইজারের এক লাখ ৬২০ ডোজ, ভারত উপহার দিয়েছে ৩২ লাখ ডোজ, ভারতের সেরাম থেকে কেনা তিন কোটি টিকার মধ্যে এসেছে ৭০ লাখ ডোজ এবং চীনের দুই দফার উপহার হিসেবে এসেছে ১১ লাখ ডোজ টিকা। সব মিলিয়ে দেশে টিকা এসেছে এ পর্যন্ত এক কোটি ১৪ লাখ ডোজের বেশি।
এ ছাড়া স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক শুক্রবার ও আমেরিকান রাষ্ট্রদূত গতকাল শনিবার আলাদাভাবে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, কোভ্যাক্স গ্রুপের আওতায় প্রতিশ্রুতি দেওয়া টিকার মধ্য থেকে আগামী সাত থেকে ১০ দিনের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের মডার্নার ২৫ লাখ ডোজ টিকা আসবে বাংলাদেশে। একই সঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, দেশে টিকা উৎপাদনের জন্য আলাদা কারখানা তৈরি করা হবে গোপালগঞ্জে। তিনি আরো জানান, চীন থেকে টিকা দ্রুত সময়ের মধ্যেই আসবে, তবে কিছু কারণে দিনক্ষণ এখনই জানাতে চায় না।
মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র জানায়, রাশিয়া ও চীনের টিকা দেশে আসার বিষয়টি একেবারেই চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে।
এদিকে দেশীয় প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো ফার্মার মাধ্যমে ভারতের সেরামের সঙ্গে চুক্তি করে টিকা কিনলেও তা আটকে যাওয়া নিয়ে একই সঙ্গে বাংলাদেশ সরকার ও ভারতের সেরাম বিভিন্ন ধরনের চাপের মুখে পড়েছে। বিষয়টি নিয়ে ভারত সরকারের সঙ্গেও এরই মধ্যে দফায় দফায় আলোচনা ও চিঠি চালাচালি হয়েছে। সর্বশেষ অবস্থা হিসেবে দ্রুত সময়ের মধ্যেই ভারতে প্রতিবেশীদের জন্য টিকা রপ্তানির বিষয়টি উন্মুক্ত হবে বলে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ সে দেশের গণমাধ্যমকে জানিয়েছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারকেও এমনই আশ্বাস দিয়েছে ভারত।
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘আমি নিজেও সেরামের সঙ্গে কথা বলেছি, তারা জানিয়েছে শিগগিরই হয়তো জট খুলতে যাচ্ছে। তবে এখনই দিনক্ষণ ঠিক করার পর্যায়ে আসেনি। সব ঠিক থাকলে সেখান থেকেও টিকা আসবে।’
এদিকে অল্প সময়ের মধ্যেই চীনের আইএমবি ক্যামসের টিকার ট্রায়াল শুরু হবে বলে জানিয়েছে আইসিডিডিআরবি সূত্র। এ জন্য এখন শুধু বাকি ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রক্রিয়াগত অনুমোদন। বিএমআরসির অনুমোদন পাওয়ার পরপরই আইসিডিডিআরবির জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী ড. ফেরদৌসী কাদরী গত বৃহস্পতিবার ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কাছে আবেদন করেছেন, যা এখন প্রক্রিয়াধীন।
আইসিডিডিআরবি সূত্র জানায়, ঔষধ প্রশাসনের অনুমতি পেলেই তারা আইএমবি ক্যামসের বাংলাদেশের পরিবেশকের মাধ্যমে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় উপাদান চীন থেকে দেশে আনার ব্যবস্থা নেবে। এ ক্ষেত্রে মোট আট হাজার ডোজের মধ্যে চার হাজার টিকা আর চার হাজার প্লাসিবো আসবে। যেদিন ট্রায়াল শুরু করবে, সেদিন থেকেই টিকা গ্রহণকারী কারো মধ্যে কোনো ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয় কি না, তা বোঝা যাবে। ১৪ দিন পরই কতটা অ্যান্টিবডি টাইটার তৈরি হয়েছে, সেটাও দেখা যাবে। অর্থাৎ মাত্র দুই সপ্তাহেই এর ফল সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে। এ ক্ষেত্রে ট্রায়াল সফল হলে সহজেই বাংলাদেশ দ্রুত সময়ের মধ্যে সুলভে এই টিকাও বাংলাদেশে আনতে পারবে। এ জন্য চীনের আইএমবি ক্যামসের সব ধরনের প্রস্তুতিও রয়েছে।


                                    
                                    
                                    
                                    
                                    


