avertisements 2

গরুর মাংস কতটুকু খাবেন?

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১১ জুলাই,সোমবার,২০২২ | আপডেট: ১২:৪৩ পিএম, ৪ মে,শনিবার,২০২৪

Text

গরুর মাংসের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সতর্কবার্তা পেতে পেতে আমাদের প্রায় সবার মনে ধারণা জন্মেছে যে, এর কোনো উপকারিতাই নেই। সত্যি কথা হল, গরুর মাংসের অনেক উপকারী দিকও আছে।

পরিমিত পরিমাণে সঠিকভাবে খেলে গরুর মাংস থেকে যেই পরিমাণ পুষ্টি পাওয়া যায় তা সমপরিমাণ অন্য কিছু থেকে পাওয়া কঠিন।

গরুর মাংস খাওয়ার সঠিক পদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন গণস্বাস্থ্য ডায়ালাইসিস সেন্টারের পুষ্টিবিদ সাজেদা কাশেম।

কী পরিমাণ খাওয়া উচিত

দৈনিক গরুর মাংস খাওয়ার নিরাপদ মাত্রা হল, ৩ আউন্স বা ৮৫ গ্রাম। আনুমানিক একটা কম্পিউটারের মাউস বা একটি তাসের বাণ্ডিলের সমান টুকরাতে এই পরিমাণ মাংস পাবেন।

চর্বি ছাড়া মাংস কোথায় পাবেন

গরুর শরীরের ২টি অংশ আছে যাতে পাবেন চর্বি ছাড়া মাংস এবং এই অংশগুলোতে চর্বির পরিমাণ চামড়া ছড়ানো মুরগির থানের মাংসের চেয়েও কম। এই ২টি অংশ হল round এবং loin/sirloin অঞ্চল, এই অংশগুলোতে অভ্যন্তরীণ চর্বির পরিমাণ সর্বনিম্ন ৪.২ গ্রাম থেকে সর্বোচ্চ ৮.২ গ্রাম যেখানে মুরগির থানের মাংসে অভ্যন্তরীণ চর্বির পরিমাণ ৯.২ গ্রাম। তবে হ্যাঁ, এই তুলনাটা হবে যখন আপনি মাংস থেকে দৃশ্যমান চর্বি আলাদা করে কেটে ফেলে দেবেন।

গরুর মাংস মানেই অত্যধিক ক্যালরি নয়

আপনি যদি ৩ আউন্স বা ৮৫ গ্রাম চর্বি ছাড়া গরুর মাংস খান তাহলে এটা থেকে আপনার দৈনিক ক্যালরির চাহিদা মাত্র ১০% ক্যালরি আসবে। ৩ আউন্স মাংসে আছ ২০০ ক্যালরি এবং দৈনিক ক্যালরি চাহিদা ২০০০ ক্যালরি ধরে।

গরুর মাংস কোলেস্টেরলের মাত্রা

৩ আউন্স sirloin অঞ্চলের মাংসে কোলেস্টেরলের মাত্রা ৪৭ মি.গ্রা. এবং ৩ আউন্স round অঞ্চলের মাংসে কোলেস্টেরলের মাত্রা ৫৩ মি.গ্রা.। একজন সুস্থ মানুষের কোলেস্টেরলের দৈনিক নিরাপদ মাত্রা হল ৩০০ মি.গ্রা. এবং হার্টের রোগীর জন্য ২০০ মি.গ্রা.। সুতরাং ৩ আউন্স গরুর মাংসে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিরাপদ সীমার অনেক নিচে। তুলনাটা আরেকটু ভালো করে বুঝিয়ে বলি, একটি ডিমের কুসুমে আছে ২১২ মি.গ্রা কোলেস্টেরল। সুতরাং সব দোষ গরুর মাংসের একার না।

গরুর মাংসে আছে পুষ্টি

আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ৯টি পুষ্টি উপাদান আছে গরুর মাংসে। এগুলো হল প্রোটিন, জিঙ্ক, ভিটামিন বি১২, সেলেনিয়াম, ফসফরাস, নায়াসিন, ভিটামিন বি৬, আয়রন এবং রিবোফ্লেভিন। প্রোটিন শরীরের পেশি গঠনে ভূমিকা রাখে, জিঙ্ক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, ফসফরাস দাঁত ও হাড়ের শক্তি বাড়ায়, আয়রন শরীরের পেশিগুলোতে অক্সিজেন প্রবাহে সহায়তা করেন এবং ভিটামিন বি১২ খাদ্য থেকে শক্তি যোগান দেয়। ৩ আউন্স গরুর মাংস থেকে যেই পরমাণ জিঙ্ক আসে সেই পরিমাণ জিঙ্ক পেতে আপনাকে খেতে হয় ৩ আউন্স ওজনের ১১ টুকরো টুনা মাছ, এই পরিমাণ আয়রনের জন্য খেতে হবে ৩ আউন্স ওজনের ৭ টুকরা মুরগির বুকের মাংস, এই পরিমাণ আয়রনের জন্য খেতে হবে ৩ কাপ স্পিনাচ, এই পরিমাণ রিবোফ্লেভিনের জন্য খেতে হবে ৩ আউন্স ওজনের আড়াই টুকরা মুরগির বুকের মাংস এবং এই পরিমাণ থায়াসিনের জন্য খেতে হবে ৩ আউন্স ওজনের ২ টুকরা মুরগির বুকের মাংস।

বর্ধনশীল বাচ্চাদের জন্য গরুর মাংসের উপকারিতা

বর্ধনশীল বাচ্চা বা টিএনএজারদের সমর্থ ও শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে গরুর মাংসের তুলনা নেই। শুধু শারীরিক বর্ধন নয়, বুদ্ধি-বৃত্তিক গঠন এবং রক্ত বর্ধনেও এটি ভূমিকা রাখে। ৩ আউন্স গরুর মাংসে আছে ৯-১৩ বছর বয়সী বাচ্চার দৈনিক চাহিদার ১২৫% ভিটামিন বি১২, ৯০% প্রোটিন, ৭৪% জিঙ্ক, ৪২% সেলেনিয়াম, ৩২% ভিটামিন বি৬, ৩২% আয়রন, ২৯% নায়াসিন, ২৩% রিবোফ্লেভিন এবং ১৬% ফসফরাস।

Conjugated Linoleic Acid (CLA)

গরুর মাংসে আছে Conjugated Linoleic Acid (CLA), এটি ক্যান্সার প্রতিরোধ, ডায়াবেটিস প্রতিরোধ এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক বলে গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে।

সুতরাং খান তবে রয়েসয়ে

গরুর মাংস খেয়েও ঝুঁকিমুক্ত থাকতে, নিচের ব্যাপারগুলো মেনে চলুন।

* খাওয়ার জন্য বেছে নিন round এবং loin/sirloin অঞ্চলের মাংস।

* দৈনিক ৩ আউন্স বা ৮৫ গ্রামের বেশি খাবেন না, আয়তনের দিক দিয়ে তা একটা কম্পিউটারের মাউস বা একটি তাসের বাণ্ডিলের সমান।

* মাংস কাটার সময় দৃশ্যমান চর্বি আলাদা করে ফেলে দিন।

* বেশি তেল দিয়ে ভুনা করার চেয়ে বারবিকিউ, গ্রিল, কাবাব বা অল্প তেলে ঝোল করে ঝোল এড়িয়ে মাংস খেলে তা বাড়তি তেলে ক্ষতির আশঙ্কা এড়াতে সহায়তা করবে।

রোগাক্রান্ত অবস্থায় রোগীর শারীরিক অবস্থার ওপর ভিত্তি করে তার শারীরিক চাহিদা অনুযায়ী আমিষের পরিমাণ ও খাবার নির্ধারণ করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে একজন দক্ষ ক্লিনিক্যাল পুষ্টিবিদ/ ডায়েটিশিয়ানের কাছ থেকে আপনার পথ্যটি নিশ্চিত করে নিন।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2