avertisements 2

ইউনিয়ন পরিষদকে সৌদি দূতাবাস বানিয়ে প্রতারণা,আটক ৩

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৭ আগস্ট,রবিবার,২০২২ | আপডেট: ১১:৩৬ এএম, ১৪ ফেব্রুয়ারী, বুধবার,২০২৪

Text

হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে প্রতারণার মাধ্যমে একটি ইউনিয়ন পরিষদ অফিসকে সৌদি দূতাবাস বানিয়ে সৌদি যেতে আগ্রহী নারীদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। শনিবার বিকেলে উপজেলার বাউসা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে তাদেরকে আটক করা হয়। ভোটার হালনাগাদ কার্যক্রমের ফাঁকে এই প্রতারণা চালানো হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

আটকরা হলেন- নির্বাচন কমিশনের ভোটার হালনাগাদের প্রজেক্টের কম্পিউটার অপারেটর বানিয়াচং উপজেলার জমশেদ মিয়া (৩০), সুনামগঞ্জ পৌরসভার ইকড়ছই গ্রামের আবু সুফিয়ান (৩৫), মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার ফাহিম চৌধুরী (২৮)।  এ সময় তাদের কাছ থেকে নির্বাচন কমিশনের আঙ্গুলের চাপ গ্রহণ পরবর্তী নতুন ভোটার হওয়ার ৬৫টি স্লিপসহ বিভিন্ন জাতীয় পরিচয়পত্র জব্দ করা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগীরা জানায়- গত ৪ আগস্ট থেকে নবীগঞ্জের বাউসা ইউনিয়নে নতুন ভোটার হালনাগাদ কার্যক্রম চলছিল ।  শনিবার শেষদিনেও নতুন ভোটার হওয়ার ফরমে ঠিকানা জন্মনিবন্ধন নাম্বারসহ প্রয়োজনীয় তথ্য দেয়ার পর আঙ্গুলের চাপ দিচ্ছিলেন ওই ইউনিয়নের নতুন ভোটাররা। এ সময় নির্বাচন কমিশনের ভোটার হালনাগাদের প্রজেক্টের কম্পিউটার অপারেটর জমশেদ মিয়া নতুন ভোটার হওয়ার ফরমে ঠিকানা, জন্ম নিবন্ধন নাম্বারের তথ্য অপূরণ রেখেই সুনামগঞ্জের সুলতানা আক্তার সুমীকে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার বাউসা ইউনিয়নের নতুন ভোটার  করার জন্য আঙ্গুলের চাপ গ্রহণ করেন। এরপর নেত্রকোনার ফাহিমা ও বিশ্বনাথের রিমা বেগমের আঙ্গুলের চাপ দেয়ার সময় অপরিচিত দেখে স্থানীয়দের সন্দেহ হলে তারা আবু সুফিয়ান, ফাহিম চৌধুরী ও তি নারীকে আটক করা হয়। এ সময় মোফাজ্জল নামে এক ব্যক্তি আরও ২২জন নারীসহ পালিয়ে যান। খবর পেয়ে নবীগঞ্জ থানার ওসি ডালিম আহমেদ, উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানসহ একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে সন্ধ্যা ৭টার দিকে জমশেদ মিয়া (৩০), সুনামগঞ্জ পৌরসভার ইকড়ছই গ্রামের আবু সুফিয়ান (৩৫), মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার ফাহিম চৌধুরী (২৮)কে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।

সুনামগঞ্জের সুলতানা আক্তার সুমী জানান- তিনি ৩ বছর সৌদি আরবে থেকে ১ বছর আগে দেশে ফিরেছেন। আবার তাকে সৌদি আরব পাঠানোর কথা বলে চলতি বছরের এপ্রিল মাসে আবু সুফিয়ান নামে এক দালাল ১৫ হাজার টাকাসহ পাসপোর্ট নেয়। সুফিয়ান তাকে জানায় সৌদি যেতে হলে দূতাবাসে আঙ্গুলের চাপ দিতে হবে। তাই সুফিয়ান তার সহযোগী মোফাজ্জল মিয়া ও ফাহিম চৌধুরীর মাধ্যমে সৌদি আরবে যেতে ইচ্ছুক তিনিসহ সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, সিলেটসহ বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ২৫জন নারীকে আঙ্গুলের চাপ দেয়ার জন্য সৌদি দূতাবাসে যাওয়ার কথা বলে দুটি মাইক্রোবাসে করে এখানে নিয়ে এসেছে। সুমী জানান, তিনি আঙ্গুলের চাপও দিয়েছেন।

নেত্রকোনার ফাহিমা আক্তার বলেন- আমি চট্টগ্রামে একটি গার্মেন্টেমে চাকুরি করি। সৌদি আরবে নেওয়ার নাম করে সুফিয়ান নামে এক দালাল আমার কাছ থেকে ১২ হাজার টাকা নেয়। শনিবার সৌদি আরবে যাওয়ার জন্য আঙ্গুলের চাপ দেয়ার শেষদিন বলে চট্টগ্রাম থেকে আমাকে এখানে নিয়ে আসে। ঝামেলার জন্য আমি আঙ্গুলের চাপ দেইনি।

রিমা বেগম জানান- সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, সিলেটসহ বিভিন্ন স্থান থেকে তিনিসহ ২৫ জন নারী সৌদি আরবে যাওয়ার জন্য ৪০-৫০ হাজার টাকা করে কয়েক লাখ টাকা সুফিয়ান এবং তার সহযোগী মোফাজ্জল মিয়া ও ফাহিম চৌধুরীর কাছে দিয়েছেন। আজ ফিঙ্গার দেয়ার জন্য তারা তাদেরকে এখানে নিয়ে এসেছে।

তিনি আরও বলেন, আমরা গ্রামের মানুষ। এটা কিছু বুঝি না। বিদেশের যাওয়ার জন্য ফিঙ্গার দিতে এনে এখানে আমাদের নতুন ভোটার করাচ্ছে।

আজিজুর রহমান নামে স্থানীয় এক যুবক জানান, তিন দিন ধরে নতুন ভোটার হালনাগাদ কার্যক্রম চলছে। আজকে শেষদিনে অন্যান্য জেলার বাসিন্দাদের বাউসা ইউনিয়নের ভোটার করার জন্য নিয়ে আসা হলে প্রতারণার বিষয়টি ধরা পড়ে। বাইরের জেলার কতজন আঙ্গুলের চাপ দিয়ে এই ইউনিয়নের নতুন ভোটার হয়েছেন তা কিভাবে নির্ণয় করবে নির্বাচন কমিশন? এঘটনায় তিনি জড়িতদের শাস্তির দাবি জানান।

বাউসা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাদিকুর রহমান শিশু মিয়া বলেন-  দালাল ও নির্বাচন অফিসের কর্মকর্তাদের যোগসাজসে বিভিন্ন জেলা থেকে তথ্য গোপন করে কয়েকজনকে বাউসা ইউনিয়নে ভোটার করার জন্য নিয়ে আসা হয়। আঙ্গুলের চাপ দেয়ার সময় গ্রাম পুলিশ ও স্থানীয় মানুষ অপরিচিত দেখে তাদেরকে আটক করে।

এ প্রসঙ্গে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, ভোটার হালনাগাদ কার্যক্রমের ফাঁকে অন্যান্য উপজেলার বাসিন্দাদের বাউসা ইউনিয়নে ভোটার করার জন্য নিয়ে আনা হচ্ছে- এমন সংবাদের ভিত্তিতে ঘটনাস্থলে গিয়ে এর প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছি। বাউসা কেন্দ্রের টিম লিডার মতিউর রহমান বাদী হয়ে আটক দালাল চক্র ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। আমাদের কেউ জড়িত থাকলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি বলেন, যারা আজকে ভোটার হয়েছেন তাদের তথ্য অফলাইনে রয়েছে, উদ্ধার হওয়া স্লিপয়ের সিরিয়াল নাম্বার অনুযায়ী তথ্য যাচাই-বাছাই করে এগুলো বাদ দেয়া হবে, কারও দ্বিতীয়বার ভোটার হওয়ার সুযোগ নেই।

নবীগঞ্জ থানার ওসি ডালিম আহমেদ বলেন, সৌদি যাওয়ার জন্য দূতাবাসে আঙ্গুলের চাপ দেওয়ার নাম করে একটি চক্র বিভিন্ন জেলা থেকে নারীদের বাউসা ইউনিয়ন অফিসের চলমান নতুন ভোটার হালনাগাদ কার্যক্রমে নিয়ে আসে। এখানে নতুন ভোটার হওয়ার ফরমে পর্যাপ্ত তথ্য না দিয়েই অন্যান্য জেলার নারীদের আঙ্গুলের চাপ নেওয়া হয়।  ওসি আরও জানান, এ ঘটনায় কম্পিউটার অপারেটরসহ তিন জন প্রতারককে আটক করা হয়েছে, মামলা দায়ের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2