avertisements 2

উপার্জনের একমাত্র উপায় হারানোর ভয়ে তিন প্রজন্মের কান্না

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৯ ফেব্রুয়ারী, বুধবার,২০২২ | আপডেট: ১১:৩৭ পিএম, ১৬ মে,বৃহস্পতিবার,২০২৪

Text

ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলা সদরে গার্লস স্কুলের সামনের সড়কের পাশে দীর্ঘ ৫০ বছর যাবত চুলকাটা বা নরসুন্দরের কাজ করছেন জীবন কুমার শীল। বর্তমানে তার বয়স প্রায় ৮৯ বছর। তার ছয় ছেলে ও নাতিপুতি মিলে ৩৫ সদস্যের পরিবার। একই দোকানে তার ছয় ছেলে ও নাতিরাও করছেন এই নরসুন্দরের কাজই। এই দোকানটিই তাদের আয়ের একমাত্র অবলম্বন।

জীবন কুমারের পৈত্রিক ভিটা ছিল পাশের গ্রাম জগদিয়া বাইলা গ্রামে। পিতার তিন শতক জমির সাথে আরো ১০ দশক জমি কিনে কোনোরকম একটি ভিটে তৈরি করেছেন। ছয় ছেলে ও ৩৫ জন নাতিপুতি নিয়ে সেখানেই বসবাস করছেন। এদিকে হঠাৎই যেন জীবন কুমার শীলের পারিবারিক জীবনে নেমে এলো কালো মেঘের ঘনঘটা। গার্লস স্কুল সংলগ্ন তার দোকানের পেছনে পুকুর ভরাট করে সম্প্রতি বেশ কয়েকটি দোকান ঘর তৈরি করা হয়েছে।

এল প্যাটার্নের ওই বিপনী বিতানে প্রবেশের মূল পথটি গার্লস স্কুলের সড়কের সাথে লাগোয়া। তবে মার্কেটের একেবারে উত্তর-পশ্চিমে একটি বাইপাস পথ তৈরির পরিকল্পনা করেছেন উদ্যোক্তারা। সেজন্য সেখানকার কয়েকজন যুবক জীবন কুমার শীলকে দোকান ছেড়ে দিতে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন।

একেবারেই নিরীহ গোছের এই হিন্দু পরিবারটি এতে নিদারুণ ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন। উপার্জনের একমাত্র অবলম্বনটুকু হারানোর ভয়ে ঘুম হারাম হয়ে গেছে তাদের।

বিষয়টি জানতে সরেজমিনে যান সাংবাদিকেরা। সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন জীবন কুমার শীল, তার পুত্র ও নাতিরা।

সাংবাদিকদের তারা জানান, উপজেলা ভূমি অফিস থেকে ২০ বর্গমিটারের এই জমি প্রতি বছর একসনা বন্দোবস্তের ভিত্তিতে গত প্রায় ৫০ বছর যাবত প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে তারা এখানে নরসুন্দরের দোকান করছেন। এখন তাদেরকে এই দোকান ছেড়ে দিতে হবে বলে বলছে সেখানকার কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি। তারা বলেন, এই দোকানটি হারালে তাদের আয়ের একমাত্র পথটি বন্ধ হয়ে পথে বসতে হবে। তারা এজন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সুদৃষ্টি কামনা করেন।

এ ব্যাপারে নগরকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জ্যোতি প্রুর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এই পরবিারটিকে কোনোভাবেই উচ্ছেদ করার কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই। তবে সেখানে নতুন মার্কেট তৈরির পর জীবন কুমারের দোকানটি দিয়ে একটি বাইপাস পথ তৈরির প্ল্যান রয়েছে। ওই পরিবারটিকে এজন্য দোকান ছাড়তে হবে জেনে আমি নিজে সেখানে গিয়ে তাদের সাথে কথা বলেছি।

তিনি বলেন, প্রথমে আমি তাদেরকে নতুন মার্কেটের একটি পজিশন দিতে চেয়েছি। জীবন কুমারের দোকানের পেছনেই ওই পজিশনটি নিতে তারা প্রথমে রাজিও হয়েছিলেন। একইসাথে ওই পজিশনটি নিতে একজন জনপ্রতিনিধিও আগ্রহী ছিলেন। আমি ওই জনপ্রতিনিধিকে বাদ দিয়ে সেটি জীবন কুমার শীলদের দিতে চেয়েছি। তবে প্রথমে তারা রাজি হলেও এখন রাজি হচ্ছেন না। সমস্যাটি এখানেই হয়েছে। জীবন কুমার শীলের দোকানটির পুরো অংশ জুড়ে বাইপাস পথ তৈরি হলে এই পরিবারটিকে পথে বসতে হবে- এ বিষষটি সাংবাদিকেরা তাকে জানালে তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে।

সাংবাদিকেরা এ সময় এককভাবে জীবন কুমারের দোকান জুড়ে বাইপাস পথ তৈরি না করে আশেপাশের অন্যদের থেকে অল্প অল্প জায়গা নিয়ে একটি চলাচলের সরু গলি তৈরি করার অনুরোধ জানান। এতে কম করে হলেও জীবন কুমারের দোকানটি উচ্ছেদ করতে হবে না। বিষয়টি ভেবে দেখবেন বলে আশ্বাস দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।

নগরকান্দা বাজারের পাশের ভূসিমাল বিক্রেতা বলরাম সাহা বলাই বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে জীবন কুমার শীল এখানে দোকান করছেন। তিনি খুবই নিরীহ প্রকৃতির মানুষ। তার ছেলেরাও বাবার মতো একই পথে জীবিকা উপার্জন করছেন।

তিনি বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে দেশের গৃহহীনদের জমিসহ ঘর দিচ্ছেন। বর্তমানে আমাদের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাও প্রধানমন্ত্রীর এই কর্মসূচি বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। আমরা তাকে যে সময়টুকু পেয়েছি তাতে মনে হয় না তিনি এই অসহায় পরিবারের ক্ষতি হয় এমন কিছু করবেন। আশা করবো তিনি বিষয়টি মানবিক দিক থেকে বিবেচনা করে সুন্দর একটি সমাধান বের করে আনবেন।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2