avertisements 2

প্রতি টন চালে ২ হাজার টাকা করে ঘুস নিতেন সেই মাসুদ!

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৩০ জানুয়ারী,রবিবার,২০২২ | আপডেট: ০৯:১০ এএম, ৭ মে,মঙ্গলবার,২০২৪

Text

খাদ্য গুদামে চাল সরবরাহের সময় খোরশেদ আলম মাসুদকে প্রতি টন চালে দুই হাজার টাকা করে ঘুস দিতে হতো। ঘুস না দিলে তিনি চাল গুদামে নিতেন না। বাধ্য হয়ে ঘুস দিতে হতো। এ ব্যাপারে দুদকের কাছে চাল মালিকরা লিখিত অভিযোগও করেছেন। কিন্তু দুদক তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে না নেওয়ায় মাসুদ ছিলেন বরাবরই বেপরোয়া।

সাংবাদিক এমদাদুল হক খানের ওপর হামলাকারী যুবলীগ ঢাকা দক্ষিণের সাবেক সহ-সভাপতি ও খাদ্য পরিদর্শক মো. খোরশেদ আলম বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। একই সঙ্গে মাসুদের বিরুদ্ধে কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলায় ঘুস দুর্নীতিসহ নানা অপকীর্তির তথ্য পাওয়া গেছে।

সূত্র জানায়, গ্রেফতার ওই খাদ্য পরিদর্শক খোরশেদ আলম মাসুদ ২০১৭ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভৈরব খাদ্য গুদামে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে টাঙ্গাইলের ঘাটাইল খাদ্য গুদামে কর্মরত। তার বাসা ঢাকায়। তিনি ভৈরব খাদ্য গুদামে কর্মরত থাকা অবস্থায় নানা কেলেংকারীসহ ঘুস দুর্নীতির অভিযোগে তদন্ত কমিটি হয়। তার বিরুদ্ধে খাদ্য অধিদপ্তরে বিভাগীয় মামলাও হয়েছে।

এর আগে শুক্রবার সন্ধ্যায় তাকে সেগুনবাগিচার বাসা থেকে গ্রেফতার করে হাতিরঝিল থানা পুলিশ।

বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) সাবেক অর্থ সম্পাদক এমদাদুল হক খানের বাসায় ঢুকে বুধবার রাতে স্ত্রী সন্তানের সামনে তার ওপর হামলা চালানো হয়। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার এমদাদ হাতিরঝিল থানায় মামলা করেন। মামলায় খোরশেদ আলম মাসুদ (৪০) ও অজ্ঞাত ২-৩ জনকে আসামি করা হয়।

জানা যায়, ২০১৮ সালের ৬ নভেম্বর ভৈরবের অটোরাইস মিল মালিক তারিক আহমেদ খাদ্যমন্ত্রীর কাছে লিখিত অভিযোগ করেন, খোরশেদ আলম তার কাছ থেকে চাল সরবরাহ বাবদ ২২ লাখ টাকা ঘুস নিয়েছেন।

একই বছরে  স্থানীয় আরেক অটোরাইস মিল মালিক আবদুল্লাহ আল মামুন দুদক চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন, তার কাছ থেকে চাল সরবরাহ বাবদ ২৫ লাখ টাকা ঘুস নিয়েছেন। এ দুজনের অভিযোগ খাদ্য অধিদপ্তর থেকে তদন্তে প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়।

এসব ঘটনায় একাধিক নিউজ করা হলে এই খাদ্য কর্মকর্তা বিভিন্নভাবে হুমকি প্রদান করেন এবং ফেসবুকে অশালীন বাক্য ব্যবহার করে আসাদুজ্জামান ফারুককে হুমকি দেন। পরে তার বিরুদ্ধে থানায় জিডিসহ খাদ্যমন্ত্রীর কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। এ অভিযোগটি গত বছরের ৭ নভেম্বর তদন্ত হয়।

দুর্নীতিটি লুটপাট করার অভিযোগে তাকে গত বছর দুদক কার্যালয় থেকে চিঠি দেয়া হয়। ভৈরব খাদ্য গুদামে কর্মরত থাকার সময় অফিসে নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে যা তদন্তে প্রমাণও মিলেছে বলে তদন্ত কর্মকর্তারা  জানিয়েছেন।

মাসুদের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ রয়েছে, খোরশেদ আলম মাসুদ ভৈরবে কর্মরত অবস্থায় ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগের সহ- সভাপতি ছিলেন। দলীয় কর্মকাণ্ড মিছিল-সমাবেশে অংশগ্রহণের নানা ছবি তিনি ফেসবুকে পোস্ট দিতেন। যদিও তিনি এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

তবে তার দাবি চাকরির আগে তিনি যুবলীগের সহ- সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি ভৈরবে কর্মরত অবস্থায় চাল মিল মালিকদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা ঘুস নিয়েছেন। দুজনে ঘুসের অভিযোগ করলেও অন্যদের মধ্য অনেক রাইস মিল মালিক অভিযোগ করতে সাহস পায়নি।

এ বিষয়ে ভৈরব অটোরাইস মিল মালিক আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, খাদ্য গুদামে আমি চাল সরবরাহের সময় খোরশেদ আলম মাসুদ প্রতি টনে দুই হাজার টাকা করে ঘুস নিত। আমি এককালীন ২৫ লাখ টাকা ঘুস দিয়েছি তাকে। ঘুস না দিলে সে চাল গুদামে নিত না। বাধ্য হয়েছি ঘুস দিতে।

তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমি দুদকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েও ফল পাইনি। আরেক রাইস মিল মালিক তারিক আহমেদ জানান, গুদামে চাল সরবরাহ দিতে গিয়ে আমি মোট ২২ লাখ টাকা ঘুস দিয়েছি। এবিষয়ে আমি খাদ্যমন্ত্রীর কাছে লিখিত অভিযোগ করেছি। খোরশেদ আলম একজন দুর্নীতিবাজ, ঘুসখোর কর্মকর্তা।

কিশোরগঞ্জের সাবেক জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক তানভির আহমেদ  মোবাইল ফোনে জানান, খোরশেদ আলমের সব অভিযোগ তদন্ত হয়েছে। এবিষয়ে খাদ্য অধিদপ্তর বিভাগীয় মামলাও করেছে। পরে আমি বদলী হয়ে অন্যত্র চলে আসি। তারপর তদন্তের বিষয়ে কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা আমি জানি না।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2