avertisements 2

বিনা চিকিৎসায় ১৩ বছর যাবৎ শিকল বন্ধী সোহেল

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০২:৫৬ পিএম, ১২ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২০ | আপডেট: ০৭:৪৫ এএম, ২৩ এপ্রিল,মঙ্গলবার,২০২৪

Text

জামালপুর জেলার মেলান্দহ উপজেলায় ঘোষেরপাড়া ইউনিয়নের বেলতৈল খাঁয়েরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মৃত আবু বক্কর সিদ্দিকীর ছেলে সোহেল অর্থের অভাবে বিনা চিকিৎসায় প্রায় ১৩ বৎসর যাবৎ শিকল বন্ধী হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, মেলান্দহ উপজেলার ঘোষেরপাড়া ইউনিয়নের বেলতৈল খাঁয়েরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মৃত আবু বক্কর সিদ্দিকের ছোট ছেলে মানসিক ভারসাম্যহীন সোহেলকে (২৫) অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে না পেরে ১৩ বছর যাবৎ একটি আর সিসি পিলারের সাথে শিকলে বেঁধে রাখা হয়েছে। কখনও হাসে, কখনো কাঁদে আবার কখনও উত্তেজিত সুরে চিল্লা চিল্লি করে। তার চিকিৎসার জন্য আকুতি জানিয়েছেন তার মা বৃদ্ধা বিধবা জাহানারা বেগম।

মানসিক ভারসাম্যহীন সোহেলের অসহায় বৃদ্ধা মা জাহানারা বেগমের জানান, তার ভাল ছেলে লেখা পড়া করতো। সাত বছর বয়সে সোহেল টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হলে চিকিৎসায় পর জ্বর ভালো হয়।কিন্তু কিছুদিন পর সে হঠাৎ স্কুলে গিয়ে বন্ধুদের সাথে মারামারি পাগলামি শুরু করে। পরে ধীরে ধীরে সে পুরোপুরি মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। ওই সময় সোহেলকে জামালপুরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে নিয়ে মানসিক চিকিৎসক দিয়ে সেখানে সুস্থ না হলে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান। কিন্তু ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩মাস চিকিৎসা দেয়ার পর অর্থ সঙ্কটে ছেলের চিকিৎসা দিতে পারেননি। শিকল পড়া পাগল ছেলের চিন্তায় আর ঋনের চাপে সোহেলের বাবা ইতোমধ্যে মারা যান। এদিকে বৃদ্ধা মা জাহানারা বেগম পাগল ছেলে নিয়ে চরম বিপাকে রয়েছেন। বড় ছেলে রুবেল বাবা মারা যাওয়ার পর অর্থ সঙ্কটে পড়ে তার পড়ালেখা ছেড়ে দিয়ে সংসারের হাল ধরতে এক বছর আগে ঋন করে বিদেশে গেছেন। বর্তমানে করোনা মহামারিতে বিদেশ থেকে পাঠানো টাকায় সংসার চালিয়ে এখনো ঋণ শেষ করতে পারেনি। তাই পাগল ছেলে নিয়ে অসহায় হয়ে পড়ে রয়েছেন বিধবা বৃদ্ধা মাতা জাহান্নারা বেগম। বর্তমানে তিনি বয়সের ভারে প্রায় মৃত্যুর পথ যাত্রী।

প্রতিবেশি বিল্লাল হোসেন জানান, টাকার অভাবে সোহেলকে চিকিৎসা করতে পারছে না তার পরিবার। ছেড়ে দিলে সোহেল মানুষকে মারধর করে ক্ষতি করে, ধরে রাখা যায় না। তাই গত ১৩ বছর যাবৎ তাকে শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেছে তার পরিবার।

মা জাহানারা বেগম বলেন, ছেলেটাকে নিয়ে দুঃচিন্তায় আছি। ওর খাওয়া-দাওয়া দেয়াই খুব কষ্টকর হয়ে পড়েছে। আমার তো চিকিৎসা করানো সামর্থ্য নেই।

তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাগল ছেলের চিকিৎসার জোর আকুতি জানিয়ে বলেন, মরার আগে যদি ছেলেটাকে সুস্থ দেখে যেতে পারতাম। তাহলে মরে গিয়েও শান্তি পেতাম।

ঘোষেরপাড়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. শাহজাহান আলী বলেন, ছেলেটার বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে তার মা তাকে নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। তাকে চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য নেই তার মায়ের। তাকে উন্নত চিকিৎসা করাতে পারলে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠতে পারে।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2