খাবারের অভাবে জাপানে বাংলাদেশি তরুণের মর্মান্তিক মৃত্যু!
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২ জুলাই,
বুধবার,২০২৫ | আপডেট: ১২:৫৩ পিএম, ৩ জুলাই,বৃহস্পতিবার,২০২৫

মোহাম্মদ আফরিজি বিন আপন নামের ২৬ বছর বয়সী এক তরুণ জাপানে গিয়েছিলেন অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে। তাকে ফিরতে হলো কফিনবন্দি হয়ে সাদা কাফনের চাদর গায়ে জড়িয়ে।
জাপানের মতো উন্নত প্রযুক্তির দেশে এক বাংলাদেশি তরুণ দিনের পর দিন না খেয়ে, এমনকি পানির অভাবেও কেটেছে নিঃসঙ্গ সময়। সে পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ ছিল যে, মৃত্যুকে তিনি বেছে নিয়েছিলেন বেঁচে থাকার চেয়ে সহজ উপায় হিসেবে।
পরিবার ও ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা যায়, আফরিজিএর সমস্যার সূত্রপাত ঘটে কলেজের বকেয়া টিউশন ফি নিয়ে। আর্থিক অনটনের কারণে একে একে বন্ধ হয়ে যায় তার প্রায় সব মৌলিক সেবা—বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি, এমনকি মোবাইল সংযোগও। দিন শেষে, তিনি হয়ে পড়েন কার্যত ঘরবন্দি।
জাপানের একটি ব্যস্ত শহরের ছোট্ট একটি ভাড়া বাসায় নিঃসঙ্গ জীবনযাপন করছিলেন আফরিজি।
হতাশা ও বিষণ্নতায় ডুবে থাকা এই তরুণের মানসিক অবস্থা ছিল শোচনীয়। জানা গেছে, গত বছরের ডিসেম্বর থেকে তিনি গভীর বিষণ্নতায় ভুগছিলেন, তবে তার অবস্থা সম্পর্কে জানলেও কেউ সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেননি।
বাংলাদেশি কমিউনিটির সদস্য হাসান রবিন ফেসবুকে এক পোস্টে লেখেন, আফরিজির প্রতিবেশীরা জানান, টানা ১৫ দিন তাকে বাসা থেকে বের হতে দেখা যায়নি। কেউ কেউ বাইরে থেকে খাবার দিয়ে গেলেও সেগুলো থেকেছে ঠিক আগের জায়গাতেই—কারণ ভেতর থেকে দরজা খোলার শক্তিটুকু পর্যন্ত ছিল না তার।
শেষবার তাকে দেখা যায় রান্নাঘরের একটি ছোট জানালার ফাঁক দিয়ে। মোবাইলের ফ্ল্যাশলাইট জ্বালিয়ে তিনি বলেছিলেন, চোখে কিছুই দেখতে পাচ্ছেন না। সেই সময় তিনি বন্ধুদের জানান, চারদিন ধরে কিছু খাননি।
জাপানে প্রচলিত আইনি নিয়ম অনুযায়ী, অনুমতি ছাড়া কারও বাসার দরজা ভাঙা নিষিদ্ধ। তাই বন্ধু ও পরিচিতরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন আগামী রবিবার পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে দরজা খোলা হবে।
কিন্তু সেই সময় তিনি পাননি—এর আগেই নিঃসঙ্গতা ও ক্ষুধার নির্মম বাস্তবতায় পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নেন আফরিজি।
হাসান রবিন তার পোস্টে আরো জানান, “জীবনে কখনো ভাবিনি আফরিজির এমন মুহূর্ত দেখতে হবে। যখন তার নিথর দেহটি পুলিশ বের করছিল, দেখে মনে হচ্ছিল তার শরীরের ওজন যেন ১০ কেজিও ছিল না। পুলিশ জানায়, মৃত্যুর সময় তার পুরো শরীরটি অত্যন্ত শক্ত হয়ে গিয়েছিল।”