avertisements 2

বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারে এক কেজি গরুর মাংসের দাম ১৬০০ টাকা!

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২১ জুন,সোমবার,২০২১ | আপডেট: ০৮:৫২ এএম, ২৩ এপ্রিল,মঙ্গলবার,২০২৪

Text

বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগার পরিণত হয়েছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। এখানে এক কেজি গরুর মাংস কিনতে খরচ হয় ১১০০ টাকা। এছাড়া রান্না খরচ ২০০ এবং মসলার জন্য দিতে হয় আরো ৩০০ টাকা। অর্থাৎ এক কেজি গরুর মাংস খেতে সেখানে গুণতে হয় সব মিলিয়ে ১৬০০ টাকা। এটা বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারের অলিখিত নিয়মে পরিণত হয়েছে।

শুধুর খাবার বিক্রি করেই কয়েদিদের কাছ থেকে বছরে কোটি টাকা আয় করছে কারা কর্তৃপক্ষ। আর এ আয়ের সবচেয়ে বড় অংশ পাচ্ছেন জেলার ও জেল সুপার। মোট আয়ের ৪০ শতাংশ দিতে হয় এ দুই কর্মকর্তাকে।

এ তো গেল শুধু গরুর মাংসের কথা। বাইরে যে ব্রাশ পাওয়া যায় ২০ টাকায় সেই ব্রাশ কারাগারের ভেতর থেকে কিনতে হয় ১০০ টাকায়। এছাড়া এক হালি ডিমের দাম ৮০ টাকা, ছোট রুই মাছের কেজি ৬০০ টাকা, ব্রয়লার মুরগির কেজি ৩০০ টাকা। এভাবেই দিনদিন টাকার খনি হয়ে উঠছে বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগার।

শুধু খাবারেই নয়, কারাগারের ভেতরে পদে পদে চলছে দুর্নীতি। এসব দুর্নীতি ও অনিয়মের মূল নায়ক কারাগারের জেলার শাহ আলম। অবৈধ আয়ের পাশাপাশি বিনা কারণে কয়েদিদের ওপর নির্মম নির্যাতন চালান তিনি।

নয়ন নামে এক কয়েদি জানান, পাঁচ বছর ধরে একটি ডাকাতি মামলায় হাজতবাস করছেন তিনি। ২৫ রমজান এক প্লেট ভাতের জন্য জেলার শাহ আলমের নির্দেশে প্রচণ্ড মারধর করা হয় তাকে। হাতকড়া-ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে গামছা দিয়ে চোখ বেঁধে নয়নকে মারধর করেন জেলার। এ নিয়ে কারাগারে উত্তেজনা দেখা দিলে শেষ পর্যন্ত ক্ষমা চাইতে হয় তাকে।

একটি চেক প্রত্যারণা মামলায় কয়েক মাস ধরে কারাগারে আছেন লিটন সরকার। কারাগারের ভেতরে ভালো থাকার জন্য তার কাছে টাকা চান জেলার শাহ আলম। টাকা না দেওয়ায় তার ওপরও চালানো হয় অমানবিক নির্যাতন। মারধর সহ্য করতে না পেরে ১০ জুন আত্মহত্যার চেষ্টা করেন লিটন সরকার।

একাধিক কয়েদি জানান, হাসপাতালের ভেতর বাড়তি সুবিধার জন্য মাসে সাড়ে চার হাজার টাকা দিতে হয়। এই টাকায় সেখানে একটি খাট, টিভিসহ আরো অনেক সুবিধা পাওয়া যায়। টাকা দিলেই সুস্থ্য কয়েদিরা এসব সুবিধা ভোগ করতে পারে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বরিশালের জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দীন হায়দার কারাগার পরিদর্শনকালে ২২টি এলইডি টিভি দিয়েছিলেন। এরমধ্যে ৮টি টিভির কোনো হদিশ নেই। অভিযোগ রয়েছে টিভিগুলো বাইরে বিক্রি করে দিয়েছেন জেলার। শুধু তাই নয়, প্রত্যেক কয়েদির কাছ থেকে টিভি দেখার জন্য ওয়ার্ড ভিত্তিক এক হাজার টাকা করে নেন তিনি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া একজন জানান, মেডিকেল চৌকিতে রোগীদের জন্য রান্না করা হয়। রান্নার জন্য কয়েদিদের কাজ পাস করা হয়। এ জন্য ছয় হাজার টাকা করে নেওয়া হয়। ২-৩ মাস এ চৌকিতে কাজ করেন ধোপা খোকন, কালা সেলিম নামে দুইজন। কাজ নিয়ে তারা চৌকির দুধ, মাছ, মাংস, তেল চুরি করে অন্যত্র বিক্রি করেন। জেলারের হুকুম মোতাবেক গুদাম থেকে সয়াবিন তেলের ব্যারেল, আলু, মসুরের ডাল কারা ক্যান্টিনে বিক্রি দেন কারাগারের কেরানি। যার কোনো বৈধতা নেই।

আরেকজন জানান, কেস টেবিলে (যেখানে আসামিদের বিচার বৈঠক হয়) নতুন আসামিদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তাদেরর পছন্দমতো ফাইল কেটে দেন চিফ রাইটার ইব্রাহিম বকস্‌। এ টাকার ৫০ শতাংশ যায় জেলারের পকেটে। কোনো কয়েদি জামিন পেলে তাকে আদালতের গেট থেকেই ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর তার জামিন পেপারে ভুল আছে উল্লেখ করে টাকা আদায় করা হয়। এই টাকা সংগ্রহ করেন কয়েদি শাখার কারারক্ষী বাদল। বাদল ও ইব্রাহিম বকস্‌ জেলার শাহ আলমের অঘোষিত ম্যানেজার।

বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার শাহ আলম বলেন, কারাগারে কারো ওপর নির্যাতন করা হয় না। কারো কাছ থেকে বাড়তি টাকাও নেয়া হয় না। এ ধরনের অভিযোগ থাকলে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তদন্ত করে ব্যবস্থা নিক। কারাগার সম্পূর্ণ নিয়মতান্ত্রিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2