গারো পাহাড়ে চলছে হাতি-মানুষের যুদ্ধ
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ০৭:১৫ এএম, ২২ আগস্ট,শুক্রবার,২০২৫

ভারতের কাঁটা তারে আটকে পড়েছে বন্যহাতির পাল সন্ধ্যা হলেই নেমে আসছে হাতির পাল পাহাড়ি অঞ্চলে আমন ধান সাবাড় করছেভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের গারো পাহাড়ি অঞ্চলজুড়ে ভারত অত্যন্ত শক্তিশালি কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করায় বাংলাদেশের গারো পাহাড়ি অঞ্চলে আটকে পড়েছে ভারতীয় শতাধিক বন্য হাতির পাল। হাতির পালটি কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে গোটা সীমান্ত অঞ্চল চষে বেড়ায়। খেয়ে এবং পায়ে পিষে সাবার করছে গোটা পাহাড়ি অঞ্চলের ফসলের মাঠের পর মাঠ।
গোটা গারো পাহাড়জুড়ে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে ১১০১ নং পিলার সংলগ্ন ব্রিজের নিচ দিয়ে প্রবেশ করে গারো পাহাড়ি অঞ্চলের পাকা আমন ধানের ব্যপক ক্ষতি সাধন করে চলেছে। ফলে সীমান্তবর্তী পাহাড়ি অঞ্চলে ফসল রক্ষা করতে না পেরে চরম অসহায় হয়ে পড়েছে কৃষকরা। ভারতীয় বন্য হাতির সাথে যুদ্ধ করেই বেঁচে আছে গারো পাহাড়ের সীমান্তবাসী। আর এ যুদ্ধ এখন কোন না কোন এলাকায় নিত্যদিনের ঘটনা। হাতির পাল দিনের বেলায় গহীন জঙ্গলে অবস্থান করে, সন্ধ্যা নেমে এলেই চলে আসে লোকালয়ে। চালায় অভাবনীয় তাণ্ডব।
হাতির পাল গারো পাহাড়ের ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী ও নালিতাবাড়ী, বক্সিগঞ্জ, হালুয়াঘাটসহ গোটা গারো পাহাড়ি অঞ্চল চষে বেড়াচ্ছে এবং ধ্বংস করে চলেছে অমন ধান ক্ষেত, বাড়িঘর, ফল ও সবজির বাগান। ধ্বংস করছে বাড়ি-ঘর এবং ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে চলেছে মানুষের জান-মালের। পাহাড়ী এলাকার লোকজন ক্ষেতের ফসল রক্ষার্থে ভূগা- মশাল জ্বালিয়ে হাতি তাড়াতে ব্যর্থ হয়ে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে।
গারো পাহাড়ের স্থানীয়দের সাথে আলাপ করে জানা যায়, প্রথমে ৯০ এর দশকে ২-১টি হাতির দেখা মেলে। তার পর ২০০০ সালের শেষের দিকে ভারতীয় হাতি আসতে থাকে পাল বেঁধে। প্রত্যেক পালে কমপক্ষে ৩০-৪০টি করে নেমে এসে সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে হামলা চালিয়ে ক্ষেতের ফসল, ঘর-বাড়ি ও জান-মালের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে চলেছে। এ অবস্থা চলছে বিগত ১৫/২০ বছর যাবত। ফলে গোটা গারো পাহাড়ের মানুষের অর্থনৈকি অবস্থা একেবারেই ভেঙ্গে পড়েছে। বাড়ছে দিনমজুর ও অভাবি মানুষের সংখ্যা।
এ পরিস্থিতি এড়াতে বিভিন্ন সময়ে নেয়া উদ্যেগকোনই কাজে আসেনি। তাছাড়া সাবেক জেলা প্রশাসক মো. নাসিরুজ্জামান সীমান্তে ‘হাতির অভয়াশ্রম নির্মাণের’ যে প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিলেন, তাও শিকেয় ঝুলে আছে। সর্বশেষ কিছু দিন আগেও বক্সিগঞ্জে ১ ব্যাক্তি হাতির আক্রমণে মারা গেছে। দুই-তিন বছর আগেও নালিতাবাড়ী এবং ঝিনাইগাতী উপজেলার সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়ী এলাকায় বন্য হাতির আক্রমণে মারা গেছে ২ ব্যাক্তি। তারা হলেন- নালিতাবাড়ীর মায়াঘাসি গ্রামের জয়নাল আবেদীন ও ঝিনাইগাতীর ছোট গজনীর সোহরাব আলী।
তাছাড়াও বিগত ১৫-২০ বছরে শুধু মাত্র সরকারী হিসেবেই ৪০-৫০ জনের প্রানহানী ঘটেছে ভারতীয় বন্য হাতির পায়ে পিষ্ট হয়ে। তবে স্থানীয় সূত্রে মৃতের সংখ্যা শতাধিক বলে জানা যায়। আর আহত হয়েছে দুই শতাধিক ব্যক্তি। ভারতীয় বন্য হাতির আক্রমনে এ পর্যন্ত ( শুরু থেকে ) ঘর-বাড়ী, ফসল, ফলের বাগান ও গোলার ধানসহ কয়েক কোটি টাকার সম্পদ বিনষ্ট হয়েছে।
জানা যায়, ভারত কাটাতারের বেড়া দেয়ায় হাতিগুলো এ পাড়ে আটকে পড়ায় অবস্থা বেগতিক হয়ে পড়েছে। হাতি এখন ব্রীজের নীচ দিয়ে ব্যতীত ভারতে যেতে পারছে না। তাছাড়া ভারতে হাতির উপদ্রব বেড়ে গেলে বিএসএফ ব্রীজের নীচ দিয়ে হাতিগুলো এ দেশের অভ্যন্তরে ঠেলে দেয়।
ঝিনাইগাতী উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ, হুমায়ুন কবির বলেন, বন্য হাতি আমন ফসলের ক্ষতিসাধন করছে। যাতে ফসলের এবং জানমালের ক্ষতিসাধন করতে না পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি হাতিগুলোকেও বাঁচতে দিতে হবে।
ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ফারুক আল মাসুদ বলেন,এখানে যোগদানের পরই শুনে আসছি বন্য হাতি এই গারো পাহাড়ি অঞ্চলের জন্য এক বিরাট সমস্যা। এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। যাতে ফসল এবং জানমালের কোন ক্ষতি না হয়, পাশাপাশি হাতির ও যাতে কোন ক্ষতি না হয় এমন ব্যবস্থা আবশ্যক।
আরও পড়ুন
এই বিভাগের আরো খবর

কলকাতায় সাবেক এমপি বাহার মেয়েসহ আটক, একরাত পর ছেড়ে দিল পুলিশ!

সংবিধানে পিআর পদ্ধতি সংবিধানে নেই, এর বাইরে যেতে পারি না: সিইসি

ছাগলকাণ্ডের মতিউরের দ্বিতীয় স্ত্রী ও মেয়েকে ফেরাতে ইন্টারপোলে আবেদন

শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রচার করলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেবে সরকার
