avertisements 2

চরম খাদ্যসংকটের মুখে আফগানিস্তান, জাতিসংঘের সতর্কতা

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২৬ অক্টোবর,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ০৪:২১ এএম, ১৮ মে,শনিবার,২০২৪

Text

জাতিসংঘ সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, আগামী এক মাসের মধ্যে খাদ্য সংকটের মধ্যে পড়তে পারে আফগানিস্তান। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে যে, প্রতি তিনজনে একজনকে না খেয়ে দিন পার করতে হতে পারে। ইতোমধ্যেই আফগানিস্তানে অর্ধেকের বেশি শিশু খাদ্যসংকটে রয়েছে। পরের বেলার খাবার সংগ্রহের জন্য তাদের কষ্ট করতে হচ্ছে। খবর আল জাজিরার।

প্রায় দুই সপ্তাহ আগে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নিলেও এখনও পর্যন্ত সরকার গঠন করতে পারেনি তালিবান। এমতাবস্থায় আফগানিস্তানের ভয়াবহ খাদ্য সংকট নিয়ে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করলো জাতিসংঘ।

আফগানিস্তানে নিযুক্ত জাতিসংঘের মানবিক ত্রাণবিষয়ক সমন্বয়কারী রমিজ অলকবারভ স্থানীয় সময় গতকাল বুধবার বলেন, আফগানিস্তানে মানবিক পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হয়ে দাঁড়াচ্ছে। আফগানিস্তানে অর্ধেকের বেশি শিশু খাদ্যসংকটে রয়েছে। পরের বেলার খাবার সংগ্রহের জন্য তাদের কষ্ট করতে হচ্ছে।

তিনি বলেছেন, সরকারি পরিষেবাগুলি কাজ করছে না। সরকারি কর্মীরা তাদের বেতনও পাচ্ছেন না।

আল–জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, সম্প্রতি আফগানিস্তানে খাবারের দাম ৫০ শতাংশ বেড়েছে। আর পেট্রলের দাম বেড়েছে ৭৫ শতাংশ। জাতিসংঘের মানবিক ত্রাণবিষয়ক সমন্বয়কারী রমিজ অলকবারভ বলেন, বেশির ভাগ আন্তর্জাতিক সহায়তা বন্ধ হয়ে গেছে। সরকারি সেবাগুলো অকার্যকর রয়েছে। সরকারি চাকরিজীবীরা বেতন পাচ্ছেন না।

তালিবান এখনো সরকার গঠন করেনি বলে পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। তারা সরকার গঠন করলে এবং সেই সরকার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেলে খাদ্যসাহায্য আসবে।

কাবুলে থেকে কাজ করা অ্যামেরিকার রাজস্ব দফতরের সাবেক কর্মকর্তা অ্যালেক্স জার্ডেন আল জাজিরাকে বলেছেন, পরিস্থিতি একেবারেই ভালো নয়। এই সংকটের আগেও অনেক আফগান দারিদ্র্য রেখার নীচে ছিলেন। এখন পরিস্থিতি আরো অনেকটা খারাপ হয়েছে। তালিবান শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা দখল করেনি। তারা লড়াই করে ক্ষমতা নিয়েছে। তার ফলে পরিস্থিতি মারাত্মক হয়েছে।

সংবাদসংস্থা রয়টার্স জানাচ্ছে, জিনিসের দাম আকাশছোঁয়া আর মানুষ রোজ ব্যাংকের দরজায় ভিড় করছে। হাজি মোহাম্মদ ইদ্রিসকে তালিবান সেন্ট্রাল ব্যাংকের প্রধান করেছে। কিন্তু তিনি কীভাবে পরিস্থিতি সামলাবেন, কী করে ব্যাংকগুলোকে অর্থের জোগান দেবেন, তা জানাননি। তালিবানের নির্দেশে ব্যাংক খুলেছে। কিন্তু তারা টাকা তোলার সীমা বেঁধে দিয়েছে।

পরিস্থিতি এখনো যথেষ্ট টালমাটাল। এই পরিস্থিতিতে জাতিসংঘের সতর্কবার্তায় আন্তর্জাতিক মহল চিন্তিত।

সম্প্রতি আফগানিস্তানে খাবারের দাম ৫০ শতাংশ বেড়েছে। আর পেট্রলের দাম বেড়েছে ৭৫ শতাংশ। জাতিসংঘের মানবিক ত্রাণবিষয়ক সমন্বয়কারী রমিজ অলকবারভ বলেন, বেশির ভাগ আন্তর্জাতিক সহায়তা বন্ধ হয়ে গেছে। সরকারি সেবাগুলো অকার্যকর রয়েছে। সরকারি চাকরিজীবীরা বেতন পাচ্ছেন না।

কাবুলে অর্থনীতির দিকে যেসব সাংবাদিক নজর রাখেন, তাদের মতে জিডিপি এ বছর অন্তত ২০ ভাগ পড়ে যাবে। গত বছর সামরিক অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমারেও এ রকম ঘটেছে।

তালিবানের জন্য এটা বড় এক চ্যালেঞ্জের ইঙ্গিত দিচ্ছে। বন্দুক চালিয়ে ন্যাটো সৈন্যদের তাড়ানোর চেয়ে এই অবস্থার শুশ্রূষা বেশ কঠিন। তবে দীর্ঘ ২০ বছর ছায়া সরকার চালিয়েছে তারা। দেশজুড়ে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার কর আদায় করেছে। অস্ত্র কিনেছে। বাহিনী পুষেছে। সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়েই দেশের প্রকাশ্য অর্থনীতি চালাতে চায় তালিবান এখন। হাজি ইদ্রিসকে গভর্নর করা হয়েছে সে জন্য। তালিবানের এত দিনের ছায়া সরকারের অর্থনীতি তিনিই দেখতেন। বিশ্ব গণমাধ্যম তালিবান আন্দোলনের এই মূল স্তম্ভকে সামান্যই চেনে ও জানে।

হাজি মুহাম্মদ ইদ্রিসের জন্য মূল সমস্যা হলো, দেশটিতে হঠাৎ পুরোনো বিদেশি সহায়তা বন্ধ হয়ে যাওয়া। এই শূন্যতা পূরণ করতে হবে নতুন উৎস থেকে ডলার এনে। কাতার, আরব আমিরাত ও চীনের দিকে তাকিয়ে আছেন তিনি। তবে অন্তর্ভুক্তিমূলক নতুন সরকার গঠনের আগে তার চাওয়া-পাওয়ার ব্যবধান কমবে বলে মনে হয় না। ব্যাংকগুলো খোলার পর আফগানির দর আরও পড়বে। তাতে আমদানি পণ্যের দাম বাড়বে। অনেক আমদানিকারক মুদ্রাবাজারের অস্থিতিশীলতায় পণ্য আর আপাতত আনছেন না। ফলে কাজহীন এবং কাজ হারানো মানুষদের জন্য সামনের দিনগুলোতে পরিবার নিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হবে। অনেকেরই প্রকৃত মজুরি ব্যাপকভাবে কমে গেছে ইতিমধ্যে। সরকারি কর্মচারীদের বেতন দেওয়া, যোদ্ধাদের সংসার চালানো এবং শরণার্থীদের পুনর্বাসন— এই তিন চাওয়ার সমাধান করতে হবে দ্রুত। এর মধ্যে প্রথম দুটির ব্যবস্থা না করলেই নয়। এত দিন নিজেদের প্রত্যেক যোদ্ধাকে মাসে অন্তত ১৫০ ডলার দিতেই হতো। নেতাদের সম্মানী অনিবার্যভাবে আরও বেশি।

বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির তরফ থেকে ইতিমধ্যে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে আফগানিস্তানে প্রায় দেড় কোটি মানুষ খাদ্যসংকটের মুখে পড়তে যাচ্ছে। কিছু এলাকায় খরা যাচ্ছে এখন। সামনে রয়েছে তীব্র শীতের মৌসুম। বাড়তি সমস্যা হিসেবে আছে মহামারির বিস্তার।

সাম্প্রতিক সংঘাত, অর্থনৈতিক পরিস্থিতির অবনতির সঙ্গে কোভিড মহামারি যুক্ত হওয়া এবং ভয়াবহ খরার কারণে পরিস্থিতি খারাপ থেকে আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। দেশটিতে দীর্ঘদিন ধরে চলা সংঘাতের কারণে লাখ লাখ মানুষ বাস্তুহারা হয়ে পড়েছে।

এরইমধ্যে তালিবান আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর দেশ ছাড়ার হিড়িক শুরু হয়েছে আফগানদের মধ্যে। হাজার হাজার আফগান নাগরিক বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছে।

চলতি মাসের শুরুতে রোমভিত্তিক জাতিসংঘের অপর একটি সংস্থা বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি জানিয়েছিল, দেশটির এক কোটি ৪০ লাখ মানুষ অর্থাৎ প্রতি তিনজন আফগান নাগরিকের মধ্যে একজনের খাদ্য সহায়তা প্রয়োজন।

সে সময় ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) জানিয়েছিল, তারা আফগানিস্তানের সহায়তার পরিমান চারগুণ করার পরিকল্পনা করছে এবং মাঠ পর্যায়ে সহায়তার সরবরাহ ও নিরাপত্তার জন্য জাতিসংঘের সঙ্গে সমন্বয় করবে।

তালিবানের হাতে আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ চলে যাওয়ার পর থেকেই দেশটির ভবিষ্যত নিয়ে নানা ধরনের আলোচনা সামনে আসছে। তবে সাধারণ মানুষকে আশ্বাস দিয়ে তালিবান জানিয়েছে, তারা দেশের উন্নয়নে কাজ করবে এবং মানুষের জীবনযাত্রার উন্নয়ন ঘটাবে।

তালিবান আফগানিস্তানের শাসনভার নেওয়ার দুই সপ্তাহ হয়ে গেলেও এখনো অনিশ্চিত ভবিষ্যতে রয়েছে অসংখ্য মানুষ। দারিদ্র্যতা গ্রাস করেছে পুরো আফগানিস্তান। দেশ ছাড়তে মরিয়া সাধারণ আফগানরা ভিড় করেছেন পাকিস্তান সীমান্তে।

আফগানিস্তানের মানবিক সংকট নিয়ে সতর্ক করেছে জাতিসংঘও। দেশটির এক তৃতীয়াংশ মানুষের খাদ্যের অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। আফগানিস্তানের মানবিক সংকট মোকাবিলায় শিগগিরই জরুরি ভিত্তিতে তহবিল গঠনের জন্য ধনী দেশগুলোর কাছে আহ্বান জানানো হবে বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত দেশটির বিশেষ দূত রমিজ অলকবারভ।

এদিকে আফগানিস্তান শাসনে তালিবানকে সমর্থন দেওয়া না দেওয়া নিয়ে হিসাব-নিকাশ শুরু হয়েছে বিশ্বজুড়ে। মার্কিন বাহিনী তালিবানের হাতে আফগানিস্তানের শাসনভার দিয়ে আসলেও গোষ্ঠীটি আগের মতো নির্দয় অবস্থানেই আছে নাকি পরিবর্তন হয়েছে, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন মার্কিন সামরিক বাহিনীর প্রধান জেনারেল মার্ক মিলি।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তালিবানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করলেও এখনি আনুষ্ঠানিকভাবে দেশ চালানোর স্বীকৃতি দেবে না জোটটি। মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা ও বিশেষ কিছু শর্ত মেনে নিলেই তবে স্বীকৃতির বিষয়ে চিন্তাভাবনা করবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2