avertisements 2

তারেক রহমানের নিরাপত্তা নিশ্চিতের আহ্বান

সিডনিতে ‘বাংলাদেশ ডেমোক্রেসি সামিট ২০২৫’: গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার ডাক

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১০ ডিসেম্বর, বুধবার,২০২৫ | আপডেট: ০৩:৫৬ পিএম, ১০ ডিসেম্বর, বুধবার,২০২৫

Text

 বাংলাদেশে দ্রুত নির্বাচন তফসিল ঘোষণা এবং একটি সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন করা জরুরি বলে মনে করেন অস্ট্রেলিয়ার সিনেটর ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা। অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে  ‘বাংলাদেশ ডেমোক্রেসি সামিট ২০২৫’ : গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার ডাক শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তরা এমন দাবি করেন।

 শনিবার (৬ ডিসেম্বের) বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক এবং বাংলাদেশ কমিউনিটি কাউন্সিলের সভাপতি মোহাম্মদ রাশেদুল হকের সর্বিক  তত্ত্বাবোধানে সন্ধ্যায় সিডনির ল্যাকাম্বা লাইব্রেরি মিলনায়তনে সেমিনারে বক্তারা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিএনপি নেতা তারেক রহমানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে দেশে ফিরে আসার সুযোগ তৈরি করতে হবে, যাতে তিনি রাজনৈতিক নেতৃত্বে অংশ নিতে পারেন।

সভায় বাংলাদেশের গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিরা জোর দিয়ে বলেন, গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক মনিটরিং, মানবাধিকার সুরক্ষা এবং রাজনৈতিক দলের নিরাপত্তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।


অনুষ্ঠানে সাবেক সিনেটর লি রিহানানকে বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াইয়ে বিশেষ অবদানের জন্য স্বীকৃতি স্বরূপ বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয়।


অভ্যর্থনা পেয়ে ধন্যবাদ জানিয়ে লি রিহানান বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের সংগ্রাম অত্যন্ত জরুরি এবং আসন্ন নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কয়েকদিন পরেই জাতিসংঘের মানবাধিকার দিবস, যা গণতন্ত্র এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। মানবাধিকারের প্রতি সম্মান এবং তার প্রচার ও কার্যকর নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।


‘গত ১৪-১৬ মাস বাংলাদেশি কমিউনিটির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। বিশেষ করে ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে যে উত্তেজনা ও পরিবর্তন এসেছিল, যখন দীর্ঘদিনের এক স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটে। কিন্তু এর জন্য অনেক চড়া মূল্য দিতে হয়েছে—প্রায় ১৪০০ মানুষ, যাদের অধিকাংশই তরুণ, নির্মমভাবে নিহত হয়েছে এবং হাজার হাজার মানুষ আহত হয়েছে। এটি এখন ইতিহাসের অংশ, কিন্তু এই আত্মত্যাগ আমাদের মনে রাখতে হবে। এখন গণতন্ত্র পুনর্গঠনের জন্য কাজ করতে হবে।’

অস্ট্রেলিয়ান গ্রিনস দলের সিনেটর ডেভিড শোবারিজ বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে যে এখন থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে (নির্বাচনের সময়) কী ঘটছে। তারা অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসনের কাছে সর্বোচ্চ মানদণ্ড দাবি করছে।


এমন একটি সময়ে, যখন সংবিধান পরিবর্তনের কথার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এবং মৌলিক অধিকার নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে, তখন পরিবর্তন আনতে জনগণের সম্মিলিত শক্তিকে কখনোই অবমূল্যায়ন করা উচিত নয়। কারণ এখনকার একটি ছোট পদক্ষেপ আগামী দশকগুলোর জন্য উল্লেখযোগ্য এবং বড় সংস্কার ও সুবিধা বয়ে আনতে পারে।’


‘আমি আমার পক্ষ থেকে যা করা সম্ভব করব, যাতে অস্ট্রেলিয়া  অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ওপর একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য  তাগিদ দেয়।’

‘আপনারা জেনে খুশি হবেন যে, ফেডারেল পার্লামেন্ট সম্প্রতি নিষেধাজ্ঞা বা স্যাংশন বিষয়ক আইন পরিবর্তন করেছে। এর ফলে অস্ট্রেলিয়া এখন শুধু অপরাধ করা ব্যক্তি বা বেসরকারি সংস্থাকেই নয়, বরং সরকারের কোনো সংস্থাকেও নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনতে পারবে। এটি অত্যন্ত চমৎকার একটি পদক্ষেপ।’

'এই পরিবর্তনের ফলে অস্ট্রেলিয়ান সরকার ইরানের 'ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস'-এর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে সক্ষম হয়েছে এবং এখানকার ইরানি প্রবাসীদের দাবির প্রেক্ষিতে তা কার্যকর করা হচ্ছে বলে এই প্রভাবশালী সিনেটর মন্তব্য করেন।


বাংলাদেশের র্যা বের নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারের সোচ্ছ্বার ডেভিড শোবারিজ। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘‘আরেকটি সরকারি সংস্থা আছে যার রাজনৈতিক গুম, সহিংসতা এবং ভীতি প্রদর্শনের দীর্ঘ ও জঘন্য ইতিহাস রয়েছে—আর সেটি হলো রেপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (RAB)। গত তিন বছর ধরে আমি অস্ট্রেলিয়ান সরকারের কাছে RAB এবং এর নেতৃত্বের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়ে আসছি।’


অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস পার্লামেন্টের সদস্য এবিগেইল বয়েড  অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে না পারলেও এক ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘আমি আপনাদের সাথে সংহতি  জানাতে পেরে গর্বিত। বাংলাদেশের পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনের আর মাত্র দুই মাস বাকি। এটি অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয় যে, বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনর্গঠনের পথে এখনো ব্যাপক অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে।’

তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘দেশটি এখনো অস্থিরতা, সহিংসতা এবং প্রাতিষ্ঠানিক ব্যর্থতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের প্রভাবমুক্ত না হলে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। যারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ী, তাদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত একটি ন্যায়সঙ্গত গণতান্ত্রিক পরিবর্তন হতে পারে না।’


তিনি আরও বলেন, ‘সম্প্রতি আমি নিউ সাউথ ওয়েলস পার্লামেন্টে একটি প্রস্তাব পাস করেছি, যেখানে অস্ট্রেলিয়ান সরকারকে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে চিঠি লেখার আহ্বান জানানো হয়েছে। এর উদ্দেশ্য হলো—অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যেন একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন নিশ্চিত করে এবং নির্বাচনের আগে প্রার্থীদের নিরাপত্তা ও চলাচলের স্বাধীনতা নিশ্চিত করে।’

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2