স্বতন্ত্র হিসেবে উত্থান, স্বতন্ত্রের কাছেই পতন
                                    
                                    
                                        
                                            ডেস্ক রিপোর্ট
                                        
                                    
                                   
                                     প্রকাশ:  ১২:০০ এএম,  ৮ জানুয়ারী,সোমবার,২০২৪ | আপডেট:  ১০:০৬ পিএম,  ৪ নভেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৫
                                
                        
                    দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যশোর-৫ (মনিরামপুর) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী এসএম ইয়াকুব আলীর কাছে ৫ হাজার ১৩৬ ভোটে হেরে গেছেন পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য। আওয়ামী লীগের এ প্রার্থী নৌকায় পেয়েছেন ৭২ হাজার ৩৩২ ভোট। বিপরীতে ঈগল প্রতীকে ৭৭ হাজার ৪৬৮ ভোট পেয়েছেন জেলা কৃষক লীগের সহসভাপতি ইয়াকুব আলী। প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্যের হার নিয়ে এলাকায় নানা আলোচনা চলছে।
এলাকার বাসিন্দা ও দলের নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁর পরাজয়ের পেছনে তিনটি কারণ প্রধান ভূমিকা রেখেছে। এগুলো হলো– বিভিন্ন বিভাগে নিয়োগ ও ঘুস-বাণিজ্য, ছেলে-ভাগনের নেতৃত্বাধীন কথিত সিন্ডিকেটের নানা অপকর্ম এবং দলের ভেতর স্বপন ভট্টাচার্যের একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টা।
জানা গেছে, ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী খান টিপু সুলতানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হিসেবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে জয়লাভ করেন স্বপন ভট্টাচার্য। এর মধ্য দিয়ে তাঁর রাজনৈতিক উত্থান হয়। এবার নৌকার প্রার্থী হয়ে একই দলের নেতা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ইয়াকুব আলীর কাছে হেরে তাঁর রাজনৈতিক পতনের দ্বার উন্মোচন হলো বলে স্থানীয় রাজনীতিসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ভাষ্য।
স্বপন ভট্টাচার্য জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক কোষাধ্যক্ষ। ২০০৯ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। সে সময় তাঁর ভাবমূর্তি ছিল পরিচ্ছন্ন। ফলে জনপ্রিয়তার শীর্ষে উঠতে তাঁর বেশি সময় লাগেনি। ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এ আসনে মনোনয়ন দেয় বীর মুক্তিযোদ্ধা খান টিপু সুলতানকে। বিদ্রোহী হিসেবে স্বতন্ত্র প্রার্থী (কলস প্রতীক) হন স্বপন ভট্টাচার্য। জনশ্রুতি রয়েছে, বিরোধী রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সমঝোতা করে তিনি নির্বাচিত হন। এ জন্য তাঁকে দল থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। ফলে দলের ভেতর কোণঠাসা হয়ে পড়েন। ২০১৭ সালে সাবেক সংসদ সদস্য খান টিপু সুলতানের মৃত্যুর পর শীর্ষ নেতৃত্ব স্বপন ভট্টাচার্যের বরখাস্ত আদেশ প্রত্যাহার করে। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হন।
২০০৯ সালে উপজেলা চেয়ারম্যান ও ২০১৪ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবার পরও জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছিলেন স্বপন ভট্টাচার্য। ২০১৮ সালে জয়ী হওয়ার পর সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হন। এর পর থেকেই তাঁর জনপ্রিয়তায় ধস নামতে শুরু করে। দলের এক নেতার ভাষ্য, উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের নামে কালো টাকার পাহাড় গড়তে তিনি স্বজনপ্রীতি, অনিয়মসহ নানা দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। নামে-বেনামে অঢেল সম্পত্তির মালিকও হন। এ ছাড়া দলের ভেতর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে ত্যাগী নেতাকর্মীকে অবমূল্যায়ন করেন। অনেকের বিরুদ্ধে মামলা দেন, নানাভাবে তাদের হয়রানির করে কোণঠাসা করতে থাকেন।
কয়েকটি প্রকল্পের দশ শতাংশ কমিশন বাবদ সাড়ে তিন কোটি টাকা ঘুস দাবি নিয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আব্দুল্লাহ বায়েজিদের সঙ্গে স্বপন ভট্টাচার্য্যের ছেলে সুপ্রিয় ভট্টাচার্য্য শুভর কথোপথক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ভাইরাল হয়। এ তথ্য জানিয়ে ঝাপা ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শামছুল হক মন্টু বলেন, স্বপন ভট্টাচার্য্য উন্নয়নের নামে টিআর, কাবিখা, কাবিটা, এডিবিসহ বিভিন্ন প্রকল্প থেকে অতিমাত্রায় কমিশন নিয়েছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন দপ্তরে নিয়োগে বেপরোয়া বাণিজ্য করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
অনৈতিক সুবিধা আদায়ের জন্য স্বপন ভট্টাচার্য্য প্রতি ইউনিয়নে অযোগ্য ও সুযোগসন্ধানী লোক পুষেছেন বলে মন্তব্য করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মিকাইল হোসেন।
প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দলের ভেতর বলয় সৃষ্টির অভিযোগ করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পদাক প্রভাষক ফারুক হোসেন। তাঁর ভাষ্য, দলের কর্তৃত্ব নিতে তিনি (স্বপন ভট্টাচার্য্য) ত্যাগী নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করিয়েছেন। নানাভাবে হয়রানি করেছেন। বিপরীতে সুবিধাবাদীদের পদে এনেছেন।
ফারুক হোসেন আরও বলেন, প্রতিমন্ত্রীর ছেরে সুপ্রিয় ভট্টাচার্য্য শুভ ও ভাগনে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান উত্তম চক্রবর্তী বাচ্চুর নেতৃত্বে প্রতি এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছে অপকর্মের সিন্ডিকেট। এদের মাধ্যমে নিয়োগ বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব বজায় রেখেছেন। এসব অপকর্মের কারণে দলের কর্মী-সমর্থক ছাড়াও সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। ফলে তাঁর কাছ থেকে সবাই এবার মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। এর ফলে স্বপন ভট্টাচার্য্য ভরাডুবি ঠেকাতে পারেননি।
সংসদ সদস্য পদে জয়ী কৃষক লীগ নেতা এসএম ইয়াকুব আলীর ভাষ্য, মনিরামপুরের জনগণ অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে তাদের রায়েই তাঁর জয় এসেছে। এসব বিষয়ে মন্তব্য জানতে সুপ্রিয় ভট্টাচার্য্য শুভ ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান উত্তম চক্রবর্তী বাচ্চুর ফোন নম্বরে কল দিয়ে বন্ধ পাওয়া গেছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ কাজী মাহমুদুল হাসান প্রতিমন্ত্রীর বলয়ের নেতৃত্বে রয়েছেন। তাঁর ভাষ্য, দলের অভ্যন্তরীণ রেষারেষির কারণে এসব অভিযোগ তোলা হচ্ছে। আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।
প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘সারা জীবন আমি মনিরামপুরবাসীর ভাগ্যোন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছি।’ পরাজয়ের বিষয়টিকেও স্বাভাবিক হিসেবে দেখছেন তিনি। তাঁর মন্তব্য, ‘আমি সব সময় জনগণের মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে থাকি। তারা যেটা ভালো বুজেছেন, সেটাই করেছে। জনগণের রায়কে শ্রদ্ধা করি।’
আরও পড়ুন
এই বিভাগের আরো খবর
                                    মনোনয়ন বঞ্চিতদের দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নেয়ার আহ্বান তারেক রহমানের
                                    ভাইরাল এই ছবিটি শেখ হাসিনার নয়
                                    আসিফ নজরুল প্রধান উপদেষ্টা হতে চেয়েছিলেন, এখন বল তার কোর্টে: নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী
                                    ভারত স্বৈরাচারকে আশ্রয় দিয়ে বিরাগভাজন হলে কিছু করার নেই: তারেক রহমান
                                    




