avertisements 2

আয়ে তাপসের ধারেকাছেও নেই খোকন-ফয়জুল

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২৩ মে,মঙ্গলবার,২০২৩ | আপডেট: ০৩:২৮ পিএম, ৫ মে,রবিবার,২০২৪

Text

বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে (বিসিসি) ছয় মেয়র প্রার্থী সম্পদের বিবরণসহ হলফনামা জমা দিয়েছেন। হলফনামায় বাৎসরিক আয়ের দিক থেকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা প্রকৌশলী ইকবাল হোসেন তাপস সবাইকে পেছনে ফেলেছেন। আর মেয়র প্রার্থীদের স্ত্রীদের মধ্যে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাতের স্ত্রী লুনা আব্দুল্লাহ রয়েছেন কোটিপতির কাতারে। ইসলামী আন্দোলনের মেয়র প্রার্থী ফয়জুল করিমের স্ত্রী ও নির্ভরশীলদের নেই কোনও অর্থ।

নির্বাচনে ১০ মেয়র প্রার্থীর মধ্যে ছয় জনের মনোনয়ন বৈধতা পেয়েছে। তারা হচ্ছেন– আওয়ামী লীগের খোকন সেরনিয়াবাত, জাতীয় পার্টির ইকবাল হোসেন তাপস, ইসলাম আন্দোলনের ফয়জুল করিম, জাকের পার্টির মিজানুর রহমান বাচ্চু, স্বতন্ত্র কামরুল আহসান রুপন ও স্বতন্ত্র আলী হোসেন হাওলাদার।

প্রকৌশলী তাপস ইওকোহামা লেবেলস্ অ্যান্ড প্রিন্টিং (বিডি) কোম্পানি লিমিটেডের নির্বাহী ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বরিশাল নগরীর সাউথ অ্যাপোলো মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতাল লিমিটেডের পরিচালক, নগরীর সাউথ অ্যাপোলো ডায়াগনস্টিক কমপ্লেক্স (প্রা.) লিমিটেড এবং সাউথ অ্যাপোলো প্রোপার্টিজ লিমিটিডের পরিচালক। ব্যবসা বা পরিচালনা সম্মানী থেকে তার বছরে আয় তিন লাখ ৬০ হাজার টাকা। চাকরি থেকে বেতন পান বছরে ৭৬ লাখ ৯৪ হাজার ৯২৭ টাকা। সবমিলিয়ে বছরে তার আয় ৮০ লাখ টাকার ওপরে।

এ ছাড়া প্রার্থীর নির্ভরশীলদের আয় ২৮ লাখ ২০ হাজার টাকা। অস্থাবর সম্পদের হিসাবে নিজের নগদ ২ কোটি ২৯ লাখ ২৫ হাজার টাকা এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা করা ৬ লাখ ৫৩ হাজার ২২৩ টাকা রয়েছে। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকার ১২৫০টি ডায়াগনস্টিকের শেয়ার, ৩৪ লাখ ৩৪ হাজার টাকার ৩৪৩৪টি মেডিক্যাল কলেজের শেয়ার, ১৫ লাখ টাকার ১৫০০টি প্রোপার্টিজ শেয়ার আছে তাপসের। এ ছাড়া তাপসের রয়েছে ৩৮ লাখ টাকার মোটরগাড়ি, ৬০ তোলা সোনাসহ মূল্যবান ধাতুর অলংকার।

অস্থাবর সম্পত্তিতে স্ত্রীর নামে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা করা ১০ লাখ এবং নির্ভরশীলদের নামে রয়েছে ৭২ হাজার টাকা। স্থাবর সম্পত্তির মধ্যে এই প্রার্থীর ওয়ারিশ সূত্রে পাওয়া জমি এবং পাঁচতলা ভবনের অংশ রয়েছে। এ ছাড়া যৌথ মালিকানায় দুই একরের ওপরে কৃষিজমি রয়েছে। বেসরকারি ব্যাংকের কাছ থেকে ১৪ লাখ ৭৪ হাজার টাকা গৃহ সংস্কার ঋণ নিয়েছেন তাপস।

আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত ইউনিয়ন এন্টারপ্রাইজের অংশীদারী এবং খুলনা ইউনিয়ন এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তার বাৎসরিক আয় সাড়ে ১০ লাখ টাকার ওপরে। অ্যাপার্টমেন্ট থেকে বছরে ৭ লাখ ৮৩ হাজার টাকা এবং ব্যাংক আমানত থেকে ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা আয় রয়েছে তার। প্রার্থীর ওপর নির্ভরশীলদের অ্যাপার্টমেন্ট থেকে বছরে ৭ লাখ ৮৩ হাজার টাকা আয়।

অস্থাবর সম্পদের মধ্যে প্রার্থীর নিজের নগদ ২ কোটি ৫০ লাখ ৮৩ হাজার ৮৭২ টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা করা ২ লাখ ৭৫ হাজার ৫৭২ টাকা, কোম্পানির ২০ লাখ টাকার শেয়ার, ৩২ লাখ মূল্যের একটি মোটরগাড়ি (উপহার হিসেবে প্রাপ্ত), ১০ ভরি স্বর্ণালংকার, ৩ লাখ ২৫ হাজার টাকার ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী, ২ লাখ ৫৪ হাজার টাকার আসবাবপত্র ও লাইসেন্স করা দুটি আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে।

খোকন সেরনিয়াবাতের স্ত্রী লুনা আব্দুল্লাহর রয়েছে নগদ এক কোটি ৩৫ লাখ ৮৪ হাজার টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা করা ১২ হাজার ৩৯৭ টাকা, ৪৯ লাখ মূল্যের একটি মোটরগাড়ি, উপহার হিসেবে প্রাপ্ত ২০ ভরি স্বর্ণালংকার, ৫০ হাজার টাকার ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী এবং আড়াই লাখ টাকার আসবাবপত্র। প্রার্থীর নিজের নামে খুলনায় ৪০ লাখ টাকা মূল্যের চারতলা ভবন, ঢাকার ধানমন্ডিতে ১৮ লাখ ৬০ হাজার টাকা মূল্যের অ্যাপার্টমেন্ট এবং উত্তরায় ১৪ লাখ টাকা মূল্যের ছয়টি অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে।

ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী ফয়জুল করীম মাদ্রাসার শিক্ষকতা পেশা থেকে বছরে আয় ৭ লাখ ৬ হাজার টাকা। অ্যাপার্টমেন্ট থেকে বছরে ৩ লাখ ৬ হাজার টাকা এবং ব্যবসা থেকে ৪ লাখ ৫ হাজার টাকা আয় করেন। বছরে তার আয় ১৪ লাখ টাকার ওপরে। প্রার্থীর অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে নগদ ৪৩ লাখ ৭৪ হাজার ৫১৬ টাকা এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত এক লাখ ২১ হাজার টাকা। স্থাবর সম্পদের মধ্যে একটি বাড়ি, দুটি অ্যাপার্টমেন্ট এবং বেশকিছু কৃষি ও অকৃষি জমি রয়েছে। তবে স্ত্রী ও নির্ভরশীলদের নামে কোনও সম্পদের কথা হলফনামায় উল্লেখ করেননি তিনি।

জাকের পার্টির প্রার্থী মিজানুর রহমান বাচ্চুর বাৎসরিক আয় প্রায় ১৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে রয়েছে– ঘরভাড়া থেকে ৬ লাখ ৬ হাজার টাকা, দোকান ভাড়া থেকে ৬ লাখ ২৩ হাজার টাকা এবং হোটেল ব্যবসা থেকে ২ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। এ ছাড়া প্রার্থীর ওপর নির্ভরশীলদের চাকরি থেকে বছরে আয় ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা।

কামরুল আহসান রুপন নিজেকে ব্যবসায়ী দাবি করে বছরে আয় দেখিয়েছেন ৪ লাখ ৩১ হাজার টাকা এবং ব্যাংক সুদ থেকে আয় এক হাজার ৯৩৬ টাকা। এই প্রার্থীর নিজ নামে অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে– নগদ ও ব্যাংকে ৯ লাখ ৪৯ হাজার ৪০৫ টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা রয়েছে ১২ হাজার ১৬৫ টাকা। এ ছাড়া রিভার আইল্যান্ড ইন্টিগ্রেশন লিমিটেড নামে প্রতিষ্ঠানের এক কোটি টাকা মূল্যের এক লাখ শেয়ার রয়েছে তার। ২৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা মূল্যের একটি মাইক্রোবাস, ৭ লাখ ৮ হাজার ৫৪৫ টাকা ব্যবসায়িক পুঁজি এবং বাবাকে লোন বাবদ ৫০ লাখ টাকা হলফনামায় অস্থাবর সম্পদের হিসেবের কোঠায় দেখানো হয়। আর স্থাবর সম্পদের মধ্যে রিভার আইল্যান্ড ইন্টিগ্রেশন লিমিটেডের ১৬৫৪.৮৮ শতাংশ কৃষিজমির মধ্যে পাঁচ ভাগের এক ভাগ এবং একই প্রতিষ্ঠানের ৬.২৫ শতাংশ অকৃষি জমির মধ্যে পাঁচ ভাগের এক ভাগের মালিক তিনি। তবে তার স্ত্রী ও নির্ভরশীলদের নামে কোনও সম্পদের কথা হলফনামায় উল্লেখ করেননি। এই প্রার্থী মা হোসনে আরা বেগম ও বোন মালিহা সাবরিনের কাছে ২৫ লাখ টাকার দেনা রয়েছেন বলে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন।

আলী হোসেন হাওলাদার বাড়ি ও দোকান ভাড়া থেকে পান ২ লাখ ১০ হাজার টাকা এবং ব্যবসা থেকে পান ৬ লাখ ৩৭ হাজার টাকা। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে প্রার্থীর নিজের নগদ ৫০ হাজার টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত ১৮ লাখ টাকা রয়েছে। এ ছাড়া তার দুটি ট্রাক, একটি মোটরগাড়ি ও দুটি মোটরসাইকেল রয়েছে। ১০ ভরি স্বর্ণালংকারের পাশাপাশি দোকানঘর স্থাপন করার জন্য ৯ লাখ টাকা বিনিয়োগের বিষয়টিও অস্থাবর সম্পদের হিসাবে দেখানো হয়েছে। প্রার্থীর স্ত্রীর ১০ ভরি স্বর্ণালংকার রয়েছে। প্রার্থীর নিজের রয়েছে দোতলা একটি ভবনসহ পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া কৃষি ও অকৃষি আড়াই একরের ওপরে জমি। অপরদিকে এই প্রার্থীর একটি বেসরকারি ব্যাংকের কাছে নিজ প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ৯ কোটি টাকার সিসি লোন নেওয়া রয়েছে।

এ ব্যাপারে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলম বলেন, ‘মেয়র প্রার্থীদের হলফনামায় দেওয়া তথ্য সঠিক কিনা তা যাচাই-বাছাই হওয়া উচিত। আর নির্বাচন কমিশন এ দায়িত্ব পালন করবে। এ ক্ষেত্রে কোনও ধরনের মিথ্যার আশ্রয় নিলে সে ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন তার প্রার্থিতা বাতিল করে আইনের আশ্রয় নেবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘তবে যারা হলফনামা জমা দিয়েছেন তাদের মধ্যে শুদ্ধাচার থাকা বাঞ্ছনীয়। কারণ নির্বাচনের মাঠে যাওয়ার আগেই যদি তিনি মিথ্যাচার করেন তাহলে নাগরিক সেবা কীভাবে দেবেন? নাগরিকদের কাছেই বা তার কী কমিটমেন্ট রইলো।’

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2