প্রথম বিক্রি বাকিতে না করা! ইসলাম কী বলে?
                                    
                                    
                                        
                                            ডেস্ক রিপোর্ট
                                        
                                    
                                   
                                     প্রকাশ:  ১২:০০ এএম,  ২৭ ডিসেম্বর,মঙ্গলবার,২০২২ | আপডেট:  ১২:০৩ পিএম,  ৪ নভেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৫
                                
                        
                    আমাদের ব্যবসায়ীদের মাঝে একটি ধারণা ও বিশ্বাস ব্যাপকভাবে প্রচলিত যে, দোকান খোলার পর প্রথম বিক্রি বাকিতে হতে পারবে না এবং বিক্রীত মাল ফেরতও নেওয়া যাবে না।
অনেকেই মনে করেন, এতে সারাদিন ব্যবসা মন্দা যাবে এবং এটি একটি অলক্ষুণে বিষয়। ঠিক তেমনি দোকান বন্ধ করার সময় হলেও বাকিতে বিক্রি করা যাবে না এবং বিক্রিত মাল ফেরত নেওয়া যাবে না।
এটি একটি ভুল ধারণা ও ভিত্তিহীন বিশ্বাস। ইসলাম তা সমর্থন করে না। কারণ ব্যবসায় লাভ-লোকসান হওয়া বান্দার এখতিয়ারে নয়। বরং আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাকে লাভবান করেন আর যার লোকসান চান তার লোকসান হয়।
কোন ব্যবসায়ী আল্লাহর দেওয়া বিধান মতে ব্যবসা পরিচালনা করলে বাহ্যিকভাবে তার কাছে কিছুটা লোকসান হয়েছে মনে হলেও পরিণাম তার ভালো হয়। তার ব্যবসায় বরকত হয়।
তাই কোন কাস্টমার যদি বাস্তবে অভাবগ্রস্ত হয়, আর পণ্যটি তার খুবই প্রয়োজন হয় এবং সে ধোঁকাবাজ না হয়, বরং টাকা হাতে আসলে পাওনা পরিশোধ করবে বলে বিক্রেতার দৃঢ়বিশ্বাস হয় তাহলে এমন কাস্টমারকে বাকিতে বিক্রি করলে ব্যবসায় মন্দা হবে না। বরং ওই ব্যবসায়ীর প্রতি আল্লাহ সন্তুষ্ট হয়ে যাবেন। এতে তার ব্যবসায়ও বরকত হবে।
পাশাপাশি সে পাওনাদারকে পাওনা পরিশোধের অবকাশ দেওয়ায় সদকার সওয়াব পাবে এবং মুসলমান ভাইকে সহযোগিতা করার সওয়াবও লাভ করবে।
মহান আল্লাহ বলেন, যদি (দেনাদার) অভাবগ্রস্ত হয় তবে সচ্ছলতা পর্যন্ত তাকে অবকাশ দেওয়া বিধেয়। আর যদি তোমরা ছেড়ে দাও তবে তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর, যদি তোমরা জানতে। (সূরা বাকারা-২৮০)।
প্রিয় নবীজী (সা.) ইরশাদ করেন, যে পাওনাদারকে পাওনা আদায়ের অবকাশ দিবে সে প্রতি দিনের বিনিময়ে একেকটি সদকার সওয়াব লাভ করবে। (মুসনাদে আহমাদ-১৯৯৭৭)।
তিনি আরও বলেন, যে ব্যক্তি চায় যে, আল্লাহ তাকে কেয়ামতের দিবসের ভয়াবহতা থেকে নিষ্কৃতি দান করুক (তাকে আরশের ছায়ায় স্থান দান করুক) সে যেন দেনাদারকে অবকাশ দেয় অথবা দেনা মাফ করে দেয়। (সহীহ মুসলিম- ১৫৬৩)
হযরত আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, নবীজী (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি কোন মুসলমান থেকে দুনিয়ার কোন বিপদ দূর করবে আল্লাহ তাআলা তার থেকে পরকালের বড় বিপদ দূর করে দিবেন। আর যে ব্যক্তি মুসলমানের দোষ গোপন রাখবে আল্লাহ দুনিয়া ও আখিরাতে তার দোষ গোপন রাখবেন। আল্লাহ বান্দার সাহায্য করেন যতক্ষণ বান্দা তার ভাইয়ের সাহায্য করে। (সহীহ মুসলিম-২৬৯৯)।
এমনিভাবে বিক্রীত মাল ফেরত নিলে ব্যবসায় মন্দা হবে না বরং এতে মুনাফা আরও বৃদ্ধি পাবে। কারণ তার প্রতি কাস্টমারের ভক্তি ও ভালোবাসা সৃষ্টি হবে। তার জন্য দিল থেকে দোয়া আসবে এবং সে একথা আরো ১০ জন কাস্টমারকে জানাবে।
এভাবে ক্রমান্বয়ে সুনাম- সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়বে। ফলে কাস্টমারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।
 
প্রিয় নবীজী (সা.) এমন ব্যবসায়ীর জন্য পরকালে মহাপুরস্কারের ঘোষণা করেছেন। তিনি ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি অনুতপ্ত হয়ে কোন মুসলিম কাস্টমার থেকে তার বিক্রীত মাল ফেরত নিবে, আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিবসে তার ভুল-ভ্রান্তিগুলো ক্ষমা করে দেবেন। (সুনানে আবু দাউদ-৩৪৬০)।
সুতরাং আসুন! দোকান খোলার পর প্রথম বাকি দেওয়া এবং পণ্য ফেরত নেওয়া কিংবা দোকান বন্ধ করার সময় বাকি দেওয়া বা ফেরত নেওয়া কে কুলক্ষণ মনে না করি। আল্লাহর প্রতি অগাধ বিশ্বাস স্থাপন করি এবং তারই নির্দেশিত পথে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করি। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে তওফিক দান করুন। আমীন।


                                    
                                    
                                    
                                    
                                    


