৩২ বছর পর মায়ের সঙ্গে দেখা সন্তানের!
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১৮ মে,বৃহস্পতিবার,২০২৩ | আপডেট: ০৮:২৬ এএম, ২৯ এপ্রিল,মঙ্গলবার,২০২৫

মায়ের সঙ্গে সৌদি তরুণ তুর্কি খালেদ আল-সুনাইদ। ছবি : সংগৃহীত
মাত্র চার বছর বয়সে হারিয়েছেন মায়ের স্নিগ্ধ সাহচর্য। এরপর নানা ঘটনায় কেটে যায় দীর্ঘ তিন দশক। এ সময় ক্ষণিকের জন্যও পাননি মায়ের মমতার পরশ। তবে মাতৃস্নেহ লাভের আশা মন থেকে একেবারে হারিয়ে যায়নি। সম্ভাব্য সবখানে খুঁজে ফিরতেন মায়ের আঁচল। অবশেষে ফিকে হওয়া জীবন হয়ে ওঠে বর্ণিল। সব দুঃখ ও বিষাদ কাটিয়ে তারুণ্যের শেষ প্রহরে ফিরে আসে আনন্দ ও উচ্ছ্বাস। দীর্ঘ তিন দশক পর মায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ ঘটে সন্তানের।
এমনই নাটকীয় ঘটনার সাক্ষী হয়েছে মিসরে অবস্থিত সৌদি আরবের দূতাবাস। দূতাবাসের সহায়তায় সৌদি তরুণ তুর্কি খালেদ আল-সুনাইদের সঙ্গে তাঁর মায়ের সাক্ষাৎ মেলে। দীর্ঘ ৩২ বছরের বেশি সময় পর উভয়ের পুনর্মিলনে তৈরি হয় আবেগঘর মুহূর্ত। সম্প্রতি তাঁদের প্রথম সাক্ষাতের কথা তুলে ধরে সৌদি টিভি চ্যানেল আল-আরাবিয়া।
তুর্কি খালেদ আল-সুনাইদের বয়স যখন চার বছর, তখনই এই হৃদয়বিদারক ঘটনার সূত্রপাত ঘটে। তখন তাঁর মা নিজের আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে দেখা করতে মিসরের কায়রো যান। কিন্তু সেই সময় তাঁর বাবা ও মায়ের মধ্যে মনোমালিন্য ঘটে এবং তাদের বৈবাহিক সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এরপর আল-সুনাইদের বাবা শুধু তাকে নিয়ে সৌদি আরবে ফিরে যান। আর তাঁর মা মিসরেই থেকে যান।
এদিকে আল-সুনাইদ তাঁর দাদির কাছে বসবাস করতে থাকেন। আর তাঁর মাকে জানানো হয় যে তাঁর সন্তান মারা গেছে। মাত্র ১৬ বছর বয়সে আল-সুনাইদের দাদি মারা যান। এরপর থেকে তিনি এক আত্মীয়ের সঙ্গে বসবাস শুরু করেন। ২৮ বছর বয়সে তাঁর বিয়ে হয়। কিন্তু দীর্ঘ এই সময় আল-সুনাইদ সাধ্যমতো মায়ের অনুসন্ধান করেন। রিয়াদের মিসরীয় দূতাবাসের মাধ্যমে অনেক খোঁজ করলেও কোনো লাভ হয়নি। এরপর মায়ের খোঁজে আল-সুনাইদ নিজেই মিসর যান এবং কায়রোস্থ সৌদি দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
সেখানকার ফাইনের বিশাল স্তূপের মধ্যে বাবা ও মায়ের কাগজ ও নথিপত্র সর্বোচ্চ চেষ্টা দিয়ে খোঁজ করেন। এরপর মিসরীয় কর্তৃপক্ষ তাঁর অনুসন্ধান শুরু করে। অবশেষে অনেক জায়গায় খোঁজার পর এক ঠিকানায় তাঁর মাকে খুঁজে পায় এবং তাঁকে তাঁর সন্তান আল-সুনাইদ সম্পর্কে অবহিত করে। অতঃপর কিছু আলোচনার পর তাঁদের উভয়ের মধ্যে পুনর্মিলন হয়।
আল-সুনাইদের মায়ের নাম আবির হানাফির বসবাস মিসরের আলেকজান্দ্রিয়ায়। আল-আরাবিয়া টিভির সঙ্গে আলাপকালে আবির হানাফি জানান, তিনি সব সময় সন্তানকে খোঁজ করার চেষ্টা করতেন। কিন্তু তাঁর পরিবার তাঁকে বলত, তাঁর সন্তান মারা গেছে এবং তাঁর সঙ্গে কথা বলার সুযোগ নেই। এ বিষয়ে কিছুই জানতে দেয়নি।
আল-সুনাইদ বলেন, আমি পরিচিত আত্মীয়দের মাধ্যমে মায়ের সন্ধানের অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু কেউ সন্ধান দিতে পারেনি। অবশেষে আমি দূতাবাসের সহযোগিতায় খোঁজা শুরু করি। অনেক চেষ্টার পর তাঁকে খুঁজে পেয়ে প্রথমে আমার কাছে স্বপ্নের মতো অবিশ্বাস্য মনে হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সহযোগিতার জন্য সৌদি দূতাবাসের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। আমি তাঁকে সুখে রাখার যথাসাধ্য চেষ্টা করব। সব সময় মনে হতো যে তাঁর অনুপস্থিতিতে আমার জীবনের অনেক কিছুই শূন্য রয়েছে। কিন্তু এখন তা ঘুচিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করব।
সূত্র : আরব নিউজ