avertisements 2

ভয়ঙ্কর ফেমডম সেশন, মিস্ট্রেস অ্যান্ড স্লেভের অন্দরমহল

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৪ মে,রবিবার,২০২৫ | আপডেট: ০২:১৯ পিএম, ৪ মে,রবিবার,২০২৫

Text

হাত, মুখ ও পা বাঁধা এক যুবক। শরীরের গোপনাঙ্গ ছাড়া আর কোথাও কোনো কাপড় নাই। মুখে মাস্ক, পার্টি ড্রেস ও পার্টি জুতা পায়ে দিয়ে চাবুক দিয়ে পেটাচ্ছে এক নারী। চাবুকের আঘাতে শরীরের বিভিন্ন স্থান থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। তবুও ওই পুরুষ নারীকে বলছেন আরও জোরে মারেন। ওই নারীও তখন আরও জোরে চাবুক মারছেন। কখনো পার্টি জুতা দিয়ে পেটে-পিঠে লাথি মারছেন। কিন্তু ওই পুরুষ না কেঁদে কেঁদে আনন্দ নিচ্ছেন। আবার কখনো ওই পুরুষ নারীর পায়ে মুখ লাগিয়ে চেটে দিচ্ছেন। আবার এসব দৃশ্যর ভিডিও ধারণ করা হচ্ছে মোবাইলে। যিনি মার খাচ্ছেন আর পা চেটে দিচ্ছেন তাকে বলা হচ্ছে স্লেভ। আর যিনি মারছেন তাকে বলা হয় মিস্ট্রেস। অর্থাৎ মিস্ট্রেস পানিশড দ্য স্লেভ। প্রথম দেখায় মনে হবে ওই নারী পুরুষের ওপর ভয়ঙ্কর অত্যাচার করছেন। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। যাকে বলা হচ্ছে ভয়ঙ্কর বিকৃত যৌনাচার। অনেকে এটাকে মনিব ও দাসের আচরণের সঙ্গে তুলনা করেছেন। টাকা দিয়ে পুরুষেরা (স্লেভ) নারীদের (মিস্ট্রেস) কাছে গিয়ে বিকৃত যৌনাচারের নামে নির্যাতিত হচ্ছেন। এখানে অভিযোগকারীও নেই। এটাকে পশ্চিমা দুনিয়ায় বলে ফেমডম সেশন বা বিডিএসএম। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এমন বিকৃত যৌনাচার বহু আগে থেকে চালু থাকলেও বাংলাদেশে কয়েক বছর ধরে অনেকটা আড়ালে আবডালে কয়েকটি গ্রুপ এমন কার্যক্রম চালিয়ে টাকা কামাচ্ছিল। এ ধরনের ঘটনার খবর পেয়ে এবং এক ভুক্তভোগীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে দু’জন নারীকে গ্রেপ্তার করেছে ভাটারা থানা পুলিশ। আব্দুল্লাহ নামের এক ব্যক্তির অভিযোগের প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- শিখা আক্তার ওরফে ফারহানা মিলি (২৫) ও সুইটি আক্তার জারা (২৫)। দীর্ঘদিন ধরে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে তারা এ ধরনের কর্মকাণ্ড করে আসছিলেন। মিস্ট্রেস ফারহানা মিলি ফ্রিডম লাইফস্টাইল ও মিস্ট্রেস মিলি এন্ড জারা ফ্রিডম লাইফ স্টাইল নামে দুটি পেজের মাধ্যমে তারা এসব করতো। 


তথ্যমতে, ফেমডম সেশন বা বিডিএসএম দ্বারা একজাতীয় যৌন উদ্দীপক আচরণ বোঝানো হয় যেখানে কেউ যৌন আনন্দ লাভের জন্য সঙ্গীকে বেঁধে রাখে অথবা বিভিন্ন শারীরিক প্রতিবন্ধকতা (চোখ বাঁধা, মুখে কাপড় দিয়ে কথা বলা রোধ করা ইত্যাদি) আরোপ করে। সাধারণত এসব কাজে দড়ি, হ্যান্ডকাফ, শিকল, টেপ, চাবুক, চামড়ার বেল্ট ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়। বন্ডেজ বিডিএসএম এর অন্তর্ভুক্ত একটি ক্রিয়া। বিডিএসএম বিভিন্ন রকমের অনেকগুলো কর্মকাণ্ড নিয়ে গঠিত। এর সঙ্গে আন্তঃব্যক্তিগত সম্পর্ক, এবং বিভিন্ন উপসংস্কৃতিও জড়িত। এটি মূলত একপ্রকার যৌনচর্চা, যদিও তা স্বাভাবিক বিচারে সুস্থ ধারা হয় না। 

বিডিএসএম-এর ক্ষেত্রে অংশগ্রহণকারীদের দুইটি প্রকার আছে। প্রথমত, ডোমিন্যান্ট বা যিনি প্রভাব বিস্তার করেন, বা খাটান, বা শাসন করেন এবং দ্বিতীয়ত, যিনি প্রভাবান্বিত হন বা শাসিত হন। এই দুই প্রকারের অংশগ্রহণকারী থাকলেও অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা দুই বা ততধিক হতে পারে। বিডিএসএম যৌনবিকৃতি হিসেবে স্বীকৃত। 

বসুন্ধরার ওই ঘটনায় যে মামলা হয়েছে তার তদন্ত কর্মকর্তা হচ্ছেন ভাটারা থানার এসআই ইকবাল হোসেন। তিনি মানবজমিনের কাছে ফেমডম সেশন বা বিডিএসএম এবং ওই দুই নারীর বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেছেন। বলেছেন, যিনি মামলার বাদী তিনি আমাদেরকে ভুল তথ্য দিয়েছিল। তিনি বলেছিলেন, বসুন্ধরার একটি ফ্ল্যাটে পুরুষদের আটক রেখে ভয়ঙ্করভাবে নির্যাতন করে টাকা আদায় করা হয়। নির্যাতন করতে করতে মেরেও ফেলা হয়। নির্যাতনের বেশ কয়েকটি ভিডিও আমাকে দেখায়। সেগুলো দেখে আমি ওই ফ্ল্যাটে অভিযান চালাই। তখন আমি ওই নারীদের জিজ্ঞাস করলাম মানুষকে এভাবে নির্যাতন করেন কেন? তখন তারা আমাকে জানায় পুরুষরা নিজেরাই টাকা দিয়ে আমাদের কাছে মার খেতে আসে। আমরা তো বিকৃত মস্তিষ্কের না। যারা আসে তারাই বিকৃত মস্তিষ্কের। তখন আমি এটা নিয়ে তদন্ত শুরু করি। ওই নারীদের সঙ্গে কথা বলি। তারা মূলত একটি থিওরি নিয়ে কাজ করে। সেটি হলো- মিস্ট্রেস আর সেলভ (মনিব আর চাকর বা দাস)। মূলত বিকৃত যৌনাচারের পুরুষরা ওই নারীদের কাছে টাকার বিনিময়ে নানা ধরনের বিকৃত যৌনাচার করে থাকে। কিন্তু তারা শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে না। নারীদের পা-চাটা থেকে শুরু করে থুথু খাওয়া, চাবুকের মার খাওয়াসহ নানা ধরনের বিকৃত যৌনাচার করে আনন্দ পায়। তারা আবার এসব ভিডিও করে রাখে। তখন সত্যতা যাচাইয়ের জন্য আমরা তাদের মোবাইল ফোন ঘাঁটাঘাঁটি করি। সেখানে দেখতে পাই গ্রেপ্তার মিস্ট্রেস ফারহানা মিলির টেলিগ্রাম একটা গ্রুপ আছে। সেখানে শত শত ছেলেরা তাকে একটা সেশন দেয়ার জন্য অনুরোধ করছে। সেশনের মধ্যে একটি হলো পা-চাটা সেশন। আরেকটি হলো হার্ড সেশন চাবুকের মার খাওয়া। হার্ড সেশনে স্লেভরা যতক্ষণ মার সহ্য করতে পারে ততক্ষণ মার খাবে। তারপর কিছুক্ষণ পর বলবে আরও মারেন। এভাবে মার খেতে খেতে রক্তাক্ত হয়ে যায়। মিস্ট্রেসরা যদি মার দিয়ে সন্তুষ্ট করতে না পারে তবে সে আর না আসার হুমকি দিয়ে বলে অন্য মিস্ট্রেসের কাছে যাবে। তখন মিস্ট্রেসরা আরও বেশি করে মারে। 

গ্রেপ্তারকৃত মিস্ট্রেস জেরি জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, মিস্ট্রেস মিলি তাকে এই আইডিয়া দিয়েছে। মিলির দেয়া আইডিয়ার পর সে চিন্তা করে দেখে এখানে সেক্সুয়াল কিছু করতে হয় না। শুধু স্লেভদের চাবুক দিয়ে মারতে হবে। এ ছাড়া স্লেভরা তার পা চেটে দিবে, থুথু খাবে এমনভাবে ইনকাম করলে ভালোই হয়। তাদের পরিকল্পনা ছিল বড় ধরনের টাকা জমিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য করার জন্য। তারা আবার ভিডিও ধারণ করে সেগুলো এ ধরনের বিকৃত মন মানসিকতার ব্যক্তিদের কাছে বিক্রি করে দেয়। এজন্য তারা তাদের গ্রুপে বিজ্ঞাপন দেয়- টু মিস্ট্রেস পানিসড ওয়ান স্লেভ টুয়েন্টি মিনিটস- এসব বিজ্ঞাপন দেখে তাদেরকে আবার অনেকে নক করে বলে এই ভিডিও তাদের লাগবে। তখন তারা অগ্রিম টাকা নিয়ে ভিডিও বিক্রি করে। যারা কিনে তারা এসব ভিডিও দেখে মজা পেয়ে তারাও টাকা দিয়ে সেশন নিতে চায়। এই কালচারটা পশ্চিমা দুনিয়াসহ বিভিন্ন দেশে আছে। তবে বেশিদিন হয়নি বাংলাদেশে চালু হয়েছে। বাংলাদেশে এরকম আরও কয়েকটি চক্র এমনটি করে। তবে সেটা খুব কম। 

ইকবাল বলেন, ওই নারীরা জানিয়েছে, মামলার বাদীও তাদের কাছ থেকে তিন চার মাস আগে পা চাটার একটি সেশন নিয়েছে। যেদিন সে মামলা করে ওইদিনও অগ্রিম টাকা দিয়ে সেশন নিয়ে থানায় এসে অভিযোগ করে। 
ওই ফ্ল্যাটে যারা স্লেভ হয়ে যেতো তাদের বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, সব শ্রেণি-পেশার লোকজন সেখানে যেতো। সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা যান। তবে বেশির ভাগই উচ্চবিত্তরা সেখানে যাওয়া-আসা করতো। 

ইকবাল বলেন, মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে মিলি ও জারা দু’জনই ডিভোর্সি। বয়স ২৫ বছরের মধ্যে। মিলির বাড়ি ময়মনসিংহ আর জারার বাড়ি ঝিনাইদহ। জারা কয়েক মাস ধরে এই কাজ শুরু করেছে। আর মিলি দুই বছর আগে আরেকজনের সঙ্গে করতো। এখন নিজেই জারাকে নিয়ে শুরু করেছে। ৩২ হাজার টাকার ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে তারা বসুন্ধরা এলাকায় থাকতো। যে ফ্ল্যাটে তারা থাকতো সেখানেই স্লেভরা যাওয়া-আসা করতো। কিন্তু আশপাশের কেউ টের পেতো না। আর স্লেভরাও চাবুকের আঘাত খেয়ে সাউন্ড করতো না। কারণ তারা নিজেরাই টাকা দিয়ে মার খাচ্ছে। তাই তারা কোনো সাউন্ড করতো না। তাদেরকে পর্নোগ্রাফি আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2