মহান বিজয় দিবস আজ
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১৬ ডিসেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৫ | আপডেট: ০৯:৪১ পিএম, ১৬ ডিসেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৫
আজ মহান বিজয় দিবস। বাঙালি জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে গৌরবোজ্জ্বল ও অহংকারের দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের অবসান ঘটে এবং বিশ্বের মানচিত্রে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের নাম স্থায়ীভাবে যুক্ত হয়। কুয়াশাচ্ছন্ন বাংলার আকাশে সেদিন উদিত হয়েছিল স্বাধীনতার সূর্য, উড়েছিল চিরগৌরবের লাল-সবুজ পতাকা, আর লাখো কণ্ঠে ধ্বনিত হয়েছিল—“আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।”
মহান মুক্তিযুদ্ধের সূচনা হয়েছিল ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্মম গণহত্যার মধ্য দিয়ে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর নেতৃত্বে স্বাধীনতার চূড়ান্ত লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে বাঙালি জাতি। একই সময় চট্টগ্রামের কালুরঘাট থেকে মেজর জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন। শুরু হয় দীর্ঘ নয় মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ। ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ ও দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর কমান্ডার জেনারেল নিয়াজি ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে ৯৩ হাজার সৈন্যসহ যৌথ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে।
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রীয়ভাবে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। প্রত্যুষে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা হয়। সূর্যোদয়ের পর রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ-এ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত ও বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিদেশি কূটনীতিক, রাজনৈতিক-সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের মানুষ শ্রদ্ধা জানান।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টা এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান পৃথক বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে গণতন্ত্র ও জাতীয় ঐক্যের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, এবারের বিজয় দিবস হোক জাতীয় জীবনে নতুন করে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার দিন এবং জনগণের প্রকৃত ক্ষমতায়নের পথে এগিয়ে যাওয়ার শপথ নেওয়ার দিন।
বিজয় দিবসকে ঘিরে রাজধানীসহ সারাদেশে সরকারি-বেসরকারি ভবন, সড়কদ্বীপ ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় আলোকসজ্জা করা হয়েছে। সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে বিশেষ ক্রোড়পত্র, টেলিভিশন ও বেতারে প্রচারিত হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিশেষ অনুষ্ঠানমালা। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, বাংলাদেশ শিশু একাডেমিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আয়োজন করেছে আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শিশুদের চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতা।
মসজিদ, মন্দির, গির্জা ও প্যাগোডাসহ সব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে দেশের শান্তি, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি কামনায় বিশেষ দোয়া ও প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে। এতিমখানা, হাসপাতাল, জেলখানা ও সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠানে পরিবেশন করা হচ্ছে উন্নতমানের খাবার। বিদেশে বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশনগুলোও দিনটির তাৎপর্য তুলে ধরে নানা কর্মসূচি পালন করছে।
আজ সরকারি ছুটি। ঘরে ঘরে, অফিস-আদালত, যানবাহন ও সড়কের মোড়ে মোড়ে উড়ছে লাল-সবুজ পতাকা। মুক্তির গান আর বিজয়ের উল্লাসে মুখর পুরো দেশ। পরম শ্রদ্ধা ও গভীর কৃতজ্ঞতায় জাতি আজ স্মরণ করছে সেইসব বীর সন্তানদের, যাদের ত্যাগে এসেছে আমাদের স্বাধীনতা।





