সামাজিক মাধ্যমে তোলপাড়
সাবেক এসবি মনিরুল গ্রেফতার না হওয়ার নেপথ্যের রহস্য কী?
                                    
                                    
                                        
                                            ডেস্ক রিপোর্ট
                                        
                                    
                                   
                                     প্রকাশ:  ১২:০০ এএম,  ১৬ অক্টোবর,
                                    বুধবার,২০২৪ | আপডেট:  ১২:৪৬ এএম,  ৩১ অক্টোবর,শুক্রবার,২০২৫
                                
 
                        
                    শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর বিতর্কিত সাবেক মন্ত্রী, এমপি ও নেতাদের গ্রেফতার অভিযান চলছে। প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো নেতা ও সাবেক মন্ত্রী গ্রেফতার হচ্ছে। হাসিনা রেজিমে নিষ্ঠুরতা চালিয়েছে শুধু রাজনীতিকরাই নয়, প্রশাসনের আমলা, সেনাবাহিনীর কিছু কর্মকর্তা ও পুলিশ প্রশাসনের কয়েকজন বিতর্কিত কর্মকর্তা। এদের মধ্যে রাজনীতিকদের পাশাপাশি কয়েকজন আমলা, পুলিশের সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তা গ্রেফতার হলেও বিতর্কিতদের অনেকেই রয়ে গেছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। হারুন অর রশিদকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। আর পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (এসবি) মনিরুল ইসলামকে গ্রেফতার দূরের কথা, তিনি ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য দিচ্ছেন গণমাধ্যমে। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালানোর আগে ৩ আগস্ট গণভবন থেকে মনিরুল ইসলাম ২৫ কোটি টাকা নিয়ে আসেন গণহত্যায় অংশ নেয়া পুলিশ সদস্যদের জন্য। এই টাকা নিয়ে গণমাধ্যমে বিস্তর লেখালেখি হয়েছে। অথচ সেই মনিরুলকে চাকরিচ্যুত করা হলেও তাকে গ্রেফতার করা যায়নি। অথচ বিতর্কিত মনিরুল গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়ে বলেছেন, ‘আমি যে কোনো সময় গ্রেফতার হতে পারি।’ জঙ্গী নাটকের হোতা মনিরুল ইসলামকে এখনো কেন গ্রেফতার করা হচ্ছে না তা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিতর্কের ঝড় উঠেছে। মনিরুল ইসলাম ও হারুন আর রশিদকে গ্রেফতার করা কেন হচ্ছে না তা নিয়ে নেটিজেনরা নানান মন্তব্য করেছেন। তারা দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে গ্রেফতার না করাকে রহস্যজনক মনে করছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, প্রভাবশালী নেতা-মন্ত্রীদের নির্বিঘ্নে গ্রেফতার করা হচ্ছে এবং মাসের পর মাস রিমাণ্ডে নেয়া হচ্ছে অথচ হারুন-মনিরুলকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না কেন? তাদের খুঁটির জোর এতো শক্ত?
গতকাল সোমবার যমুনা টেলিভিশনে সাক্ষাৎকার দিয়ে পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (এসবি) মনিরুল ইসলাম যে কোনো সময় গ্রেফতার হতে পারেন বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি যেকোনো সময় গ্রেফতার হতে পারি, এটা আমি ধারণা করছি। সুষ্ঠু তদন্তে যদি সম্পৃক্ততা আসে তাহলে আমি গ্রেফতার হতে রাজি।’ নিজের অবস্থানের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘রোববার রমনার বাসায় ঢুকতে পারলাম না। রাস্তা থেকে শুধু দেখলাম। এ বাসায় অনেকদিন থেকেছি। অথচ বাসাতে ঢুকতে পারলাম না।’
ভারতের দিল্লিতে অবস্থান করছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এমন ছবির বিষয়ে মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘২০২২ সালে মার্চের দিকে মালদ্বীপ গিয়েছিলাম পরে দিল্লিতে দুইদিন অবস্থান করেছিলাম।’
এর আগে গত ৬ অক্টোবর পুলিশের সাবেক কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন উল্লেখ করে প্রবাসী বাংলাদেশি অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইন দুটি ছবি দিয়ে ফেসবুকে এক পোস্ট দেন। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় শুরু হয়।
ওই পোস্টে সাংবাদিক জুলকারনাইন বলেছিলেন, ‘পলাতক এসবি প্রধান (সাবেক) মনিরুল ইসলামের অবস্থান নিশ্চিত করেছে অত্যন্ত বিশ্বস্ত সূত্র। ভারতের রাজধানী দিল্লির কণট প্লেসের একটি গ্রোসারি স্টোরে ৬ অক্টোবর বিকেলে মনিরুল ইসলামকে কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য কেনার সময় ক্যামেরাবন্দি করেন তিনি (জুলকারনাইন)। আরো জানা যায়, ওই এলাকায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পলাতক বাংলাদেশি রাজনীতিবিদ এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা বসবাস করছেন। বন্ধুপ্রতিম দেশ হিসেবে ভারত সরকারের উচিত হবে অনতিবিলম্বে এদের খুঁজে বের করে বাংলাদেশের যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’
এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনের নামে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ২৫ কোটি টাকা আনার অভিযোগ ওঠার পর ফোনে এ কর্মকর্তার গত ১৮ সেপ্টেম্বর সাক্ষাৎকার নেয় ঢাকার একটি অনলাইন গণমাধ্যম। ওই সাক্ষাৎকারে বিতর্কিত পুলিশ কর্তা মনিরুল বলেছিলেন, ‘আমি পালিয়ে যাইনি। পালাবও না। আমি দেশেই ছিলাম, দেশেই আছি। ভবিষ্যতে দেশেই থাকব। তবে নিরাপত্তার স্বার্থে সরকারি বাসায় ফিরিনি।’
সাক্ষাৎকারে ‘পালাব না’ বলেও বর্তমানে ভারতে অবস্থান নিয়ে জানতে চাইলে ৭ অক্টোবর হোয়াটসঅ্যাপে মনিরুল ইসলাম ওই গণমাধ্যমকে জানান, আপনাকে তো সেদিন (১৮ সেপ্টেম্বর) ঠিকই বলেছি, মিথ্যা তো বলি নাই। আপনাকে যেদিন সাক্ষাৎকার দিয়েছিলাম, তখন সেটাই সত্য ছিল। ঢাকাতেই ছিলাম, আত্মগোপনে ছিলাম।
মনিরুল ইসলামকে গ্রেফতার না করা নিয়ে বিতর্কের ঝড় উঠছে। ‘কাক কাকের গোশত খায় না’ প্রবাদের কারণে কি পুলিশ সদস্যরা সাবেক পুলিশ কর্তা মনিরুল ইসলামকে গ্রেফতার করছে না? মনিরুল রাজধানী ঢাকায় অবস্থান করছেন, রাস্তায় ঘোরাঘুরি করছেন, তার পুরনো আবাসস্থলের সামনে যাচ্ছেন অথচ পুলিশ তাকে খুঁজে পাচ্ছে না? অথচ বিগত হাসিনা রেজিমে পুলিশ সদস্যরা মাটির নীচ থেকে হলেও অপরাধীদের গ্রেফতারের হুংকার দিতো। বিএনপি ও জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার আগেই গ্রেফতার করা হতো। মনিরুল ইসলামকে গ্রেফতার না করার নেপথ্যের রহস্য কি? যারা পালাচ্ছেন তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে অথচ যে প্রকাশ্যে গণমাধ্যমে ঘুরে বেড়াচ্ছেন গণমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দিয়ে গ্রেফতার হওয়ার বাসনা প্রকাশ করছেন, পুলিশ তাকে ধরছে না কেন?
 


 
                                     
                                     
                                     
                                     
                                    


