avertisements 2

ঢাকা থেকে যশোর গৃহকর্মীকে বাসে দাড়িয়ে নিলেন জাবি অধ্যাপিকা

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৪:০১ এএম, ২৪ অক্টোবর,শনিবার,২০২০ | আপডেট: ১১:০৬ এএম, ১১ মার্চ,সোমবার,২০২৪

Text

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের এক নারী অধ্যাপিকার বিরুদ্ধে শিশু গৃহকর্মীর সঙ্গে ‘অমানবিক আচরণ’ করার অভিযোগ উঠেছে। ওই নারী অধ্যাপক বিভাগটির বর্তমান সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।

শিশু গৃহকর্মীর জন্য আলাদা টিকেট না কেটে বাসে ঢাকা থেকে যশোর ৩০০ কিলোমিটার পুরোটা দাঁড় করিয়ে নিয়েছেন, এমন একটি ছবি ও ভিডিও ফেইসবুকে আপলোড দিয়ে এ অভিযোগ তোলেন সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলম পান্না।

যদিও সরকার ও রাজনীতি বিভাগের বর্তমান সভাপতি অধ্যাপক নাসরীন সুলতানা এ অভিযোগটি মনগড়া ও কুৎসামূলক বলে দাবি করেছেন।

বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমকর্মী মঞ্জুরুল আলম পান্না ফেইসবুকে তার টাইমলাইনে প্রথমে একটি ছবি ও পরে ২০ সেকেন্ডের একটি ভিডিও আপলোড দেন। তাতে দেখা যায় ওই নারী অধ্যাপকের সামনে সাত থেকে আট বছসর বয়সী একটি মেয়ে শিশু দাঁড়িয়ে আছে।

পান্না তার ফেইসবুক স্ট্যাটাসে অভিযোগ তোলেন, অধ্যাপিকা তার ছেলেমেয়েদের জন্য বাসের টিকেট নিলেও সাত থেকে আট বছসর বয়সী কাজের মেয়ের জন্য আলাদা কোনো সিট নেননি। প্রায় ৩০০ কিলোমিটার যাত্রাপথর সেই মেয়েকে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়।

পান্নার ভাষ্যে, করোনা সিম্পটম থাকায় নাকি তাকে আলাদা রাখা হয়েছে বলে দাবি করেছেন অভিযুক্ত অধ্যাপিকা। স্ট্যাটাসটি ছড়িয়ে পড়লে ওই শিক্ষিকাকে নিয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন পরিমন্ডলে ব্যাপক সমালোচনার সূত্রপাত হয়। সাবেক ও বর্তমান শির্ক্ষাথীদের নিন্দা জানিয়ে বিভিন্ন মন্তব্য করতে দেখা যায়।

অভিযোগ অস্বীকার করে অধ্যাপিকা নাসরীন সুলতানা সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা তিনজন দুইটা সিটে বসি। পথের মধ্যে মেয়েটি আমাদের সঙ্গে বসেই আসে। ফেরিতে ওঠার মুহূর্তে প্রায় আধাঘণ্টা মতো বাসে অপেক্ষা করতে হয়। সে সময় মেয়েটি ও আমার ছোট ছেলে উঠে দাঁড়িয়ে জানালা দিয়ে পাশের ফেরি চলাচল দেখে। পরবর্তীতে নদী পার হলে আবার দুজনেই আমার সঙ্গে বসে’।

তিনি বলেন, ‘কিছুদূর আসার পর রাস্তায় গাছ কাটছিলো বলে একটু জ্যাম বাঁধে। জ্যামের সময়ও মেয়েটি দাঁড়িয়ে জানালা দিয়ে তাকিয়ে বাইরে দেখছিল। পড়ে যেতে পারে দেখে আমি তার হাত ধরে রাখি। এ ছাড়া দুই-এক জায়গায় আমার ছেলেও উঠে দাঁড়িয়ে বাইরে দেখছিল আর মাঝে মাঝে ঐ মেয়েটিও। এই সময়ের মধ্যেই ঐ ব্যক্তি ছবিটি তুলেছে।’

করোনা সিম্পটমের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘মেয়েটির করোনার সিম্পটম ছিল এ ধরনের কথা আমি কখনও বলিনি। তিনি মনগড়া কথা লিখেছেন। যদি করোনার সিম্পটম থাকত তবে পাব্লিক ট্রান্সপোর্টে করে তাকে কেন নিয়ে আসব? কেন ই বা তাকে আমার পাশে ও কোলে বসিয়ে নিয়ে আসব?’

তিনি আরো বলেন, ‘মেয়েটি আমার সঙ্গে তিন বছর আছে। আমাকে ফুফু বলে ডাকে। মাঝে মাঝে মা বলেও ডাকে। মেয়েটিকে আমি আমার নিজের মেয়ের মতো দেখি। তাকে আমি এত পথ দাঁড় করিয়ে কেমনে নিয়ে আসব! মেয়েটি কোনো অভিযোগ করেনি। তারপরও আমার বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কুৎসা রটানো হচ্ছে।’

আলাদা সিট না নেয়ার ব্যাখ্যা হিসেবে তিনি বলেন, আমার বড় ছেলে যশোর যাওয়ার কথা ছিল না। ফলে মেয়েটিসহ আমি তিনজনের জন্য সিট নিয়েছিলাম। কিন্তু আগের রাতে বড় ছেলে বায়না ধরে সেও যাবে। আমি ভাবলাম কাউন্টারে গিয়ে আরেকটা সিট নিয়ে নিব। কিন্তু কাউন্টার থেকে ওরা জানাল সিট হবে একেবারে পেছনের দিকে। তাই আমি আর সিট নিইনি, পেছনে মেয়েটি বা আমার ছেলেদের একজনকে একা ছাড়তে চাইনি বলে। আমার পাশে বসিয়েই তাকে নিয়ে যাই।

এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে মঞ্জুরুল আলম পান্নার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি পুরো পথই ওই শিশুকে সিটে বসানো ছাড়া নিতে দেখেছি। ওই শিশুকে দাঁড়িয়ে থাকতে এবং কখনো কখনো বাসের মেঝেতে ওই শিক্ষকের পায়ের সামনে যে খালি জায়গাটা রয়েছে তাতে বসতেও দেখেছি। তবে তাকে সিটে বসানো হয়নি। এটা সহ্য করতে না পেরে আমি প্রতিবাদ করি। পুলিশের সহযোগিতাও চেয়েছিলাম, হটলাইনে যোগাযোগ করলে সহযোগিতা করা হলেও স্থানীয় কন্ট্রোল রুম আশাব্যঞ্জক সহযোগিতা করেনি।

সিটের ব্যাখ্যার বিষয়ে পান্না বলেন, ওই বাসে ওইদিন মাঝের দিকেও সিট ফাঁকা ছিল। চাইলে কাউন্টারে এসেও আরেকটা সিট তিনি কাটতে পারতেন। এ ব্যাপারে বাস কাউন্টারে যোগাযোগ করলেই বিষয়টা জানা যাবে।

এদিকে অধ্যাপক নাসরীন সুলতানাও ফেইসবুকে একটি ভিডিও আপলোড করেন যেখানে দেখা যায় যাত্রাপথে মেয়েটি জানালার পাশের সিটে তার সঙ্গে বসেই ভ্রমণ করছেন।

ওই ভিডিও পাঠিয়ে পান্নার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা তো বুঝাই যাচ্ছে যে এটা পরে ইচ্ছা করে করা ভিডিও। যারা যশোর অঞ্চলের তাদের কাছে বাসের বাইরের দৃশ‍্যগুলো খুবই পরিচিত। এমন যে কাউকে জিজ্ঞেস করলে বলে দেবেন, ওই ভিডিও কোন এলাকার কাছাকাছি করা। যেহেতু তিনি যশোর নামবেন এবং আমার সরাসরি প্রতিবাদাও ছিল মাগুরা পার হওয়ার পর।

মঞ্জুরুল আলম পান্না মনে করছেন তার সঙ্গে বাগবিগণ্ডা হওয়ার পরই ভিডিওটি সাজিয়ে ধারণ করেন ওই শিক্ষক।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2