avertisements 2

ছিনতাইকারীরা চাইলে ছেলে সব দিত প্রাণটা কেন নিল

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৪ অক্টোবর, বুধবার,২০২৩ | আপডেট: ১০:৩৩ পিএম, ৪ মে,শনিবার,২০২৪

Text

নিশাদ আকরাম

কলেজছাত্র নিশাদ আকরামের রক্তের গ্রুপ ‘ও’ নেগেটিভ। এই গ্রুপের রক্তধারী পাওয়া যায় কম। এ কারণে কারও প্রয়োজন হলেই তিনি ছুটে যেতেন। তা ছাড়া অন্য যে কোনো বিপদে ডাকলে তাঁকে পাওয়া যেত। গত ১৬ সেপ্টেম্বর ভোরেও এক রোগীর সেবা করে হাসপাতাল থেকে ছাত্রাবাসে ফিরছিলেন নিশাদ। এ সময় ছিনতাইকারীর হামলায় তিনি গুরুতর আহত হন। এর পর থেকে অচেতন অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের আইসিইউতে ছিলেন। সেখানে ১৭ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর মঙ্গলবার ভোরে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।

রাজশাহী কলেজের পরিসংখ্যান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নিশাদের বাড়ি নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার আড্ডা গ্রামে। দুই ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছোট। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে শোকে হতবিহ্বল খলিলুর রহমান। শিক্ষক, সহপাঠীরাও নিশাদের এমন মৃত্যু মানতে পারছেন না। এ ঘটনায় জড়িতদের কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা। শিক্ষক ও সহপাঠীরা জানান, এক বান্ধবীর পরিচিত অসুস্থ একজনের সেবার জন্য গত ১৫ সেপ্টেম্বর সারারাত হাসপাতালে ছিলেন নিশাদ। পরদিন ভোরে ওই বান্ধবীকে নিয়ে তিনি রিকশায় ফিরছিলেন। শহরের হেতেম খাঁ সবজিপাড়ায় ছাত্রাবাসের কাছাকাছি এলে দুই ছিনতাইকারী রামদা নিয়ে রিকশার গতিরোধ করে। এ সময় নিশাদের জামা ধরে একজন, অন্যজন মাথায় রামদার উল্টো পাশ দিয়ে আঘাত করে।

সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, দুই ছিনতাইকারী রিকশা থামিয়ে আঘাত করলে চালক ভয়ে গতি বাড়িয়ে দেন। এ সময় নিশাদকে এক ছিনতাইকারী ধরে রাখায় তিনি রাস্তায় পড়ে যান। এর পর রিকশায় থাকা মেয়েটি নেমে দৌড়ে নিশাদের দিকে আসেন এবং চিৎকার করতে থাকেন। পরে স্থানীয় কয়েকজন এসে তাঁকে উদ্ধার করে রামেক হাসপাতালে পাঠান। গতকাল দুপুর ১২টার দিকে রামেকের মর্গের সামনে নিশাদের মরদেহ নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলেন বাবা খলিলুর রহমান। এর কিছুক্ষণ আগে তিনি নিশাদের মা ও বড় বোনকে গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। খলিলুর রহমান বলেন, ‘আমার ছেলেটা খুবই ভালো ছিল। তিন মাস পরপর রক্ত দিত। মানুষের বিপদে ছুটে যেত। আমাকে বলত, বিসিএস ক্যাডার হবো। বাবা, তোমাকে ৩০ হাজার দিলেই তো চলবে? বাকিটা গ্রামের অসহায় মানুষকে দেব।’

কথাগুলো বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন খলিলুল রহমান। চোখের পানি মুছে আবার বলেন, ‘আমার একটাই ছেলে। বড় মেয়ের ১২ বছরের ছোট নিশাদ। আমি বাসের টিকিট বিক্রি করি। আয় কম। ছেলেটাকে নিয়েই সব স্বপ্ন ছিল। ছিনতাইকারীরা যদি বলত, যা আছে সব দিয়ে দাও। আমার ছেলে দিয়ে দিত। তার প্রাণটা না নিলেই পারত।’ রাজশাহী কলেজের পরিসংখ্যান বিভাগের প্রভাষক পারভেজ রানা বলেন, ‘নিশাদ খুবই মেধাবী ছিল। খেলাধুলা ছাড়াও নানা রকম সামাজিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিল। রাজশাহীকে বলা হয় এশিয়ার সবচেয়ে সুন্দর শহর। কিন্তু আমাদের কোনো নিরাপত্তা নেই এ শহরে। মানুষের জীবনের নিরাপত্তা না থাকলে সুন্দর শহর দিয়ে কী হবে?’ ছিনতাইয়ের ঘটনায় নগরের বোয়ালিয়া থানায় মামলা করেন নিশাদের চাচাতো ভাই আসাদুজ্জামান। এর পর সেলিম নামের একজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বোয়ালিয়া থানার এসআই ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আবদুল আওয়াল বলেন, সেলিমের নামে সাতটি মামলা রয়েছে। তাকে রিমান্ডে নিয়ে এ ঘটনায় কারা জড়িত, তা বের করা হবে। এদিকে নওগাঁ সংবাদদাতা জানান, বিকেলে গ্রামের বাড়িতে পৌঁছায় নিশাদের মরদেহ। জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁর দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
 

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2