avertisements 2

ডাচ-বাংলার লুটের টাকায় কেউ গাড়ি কিনেছে, ধারও দিয়েছে!

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১৮ মার্চ,শনিবার,২০২৩ | আপডেট: ০৯:০০ এএম, ১১ মে,শনিবার,২০২৪

Text

রাজধানীর উত্তরায় ডাচ-বাংলা ব্যাংক লিমিটেডের সোয়া ১১ কোটি টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িত আরও ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। এসময় তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ৫৮ লাখ টাকা। এ নিয়ে ছিনতাই হওয়া সোয়া ১১ কোটি টাকার মধ্যে মোট উদ্ধার হলো ৭ কোটি ১ লাখ ১১ হাজার টাকা। সেই সঙ্গে এখন পর্যন্ত গ্রেফতার হয়েছে ১১ জন।

দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মো. হারুন অর রশীদ তিনি জানান, উত্তরায় ডাচ ব্যাংকের টাকা লুটের ঘটনায় আরও ৫৮ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। সেই সঙ্গে কড়াইল বস্তি থেকে হৃদয় ও নেত্রোকোনা থেকে মিলন নামে দুজন এবং এ ঘটনার মূল মাস্টারমাইন্ড আকাশকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

এই পুলিশ কর্মকর্তা আরও জানান, এ ঘটনা বাস্তবায়নে বিভিন্নভাবে পরিকল্পনা নেয়া হয়। সোহেল রানা ও আকাশ মূল পরিকল্পনা সাজায়। যদিও সোহেল রানাকে এখনো গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি।

ডাকাতির ঘটনায় দেশের বিভিন্ন জায়গা গিয়ে কেউ গাড়ি কিনেছে, কেউ অন্যকে টাকা ধার দিয়েছে। মোট ৭ কোটি ১ লাখ ৫৮ হাজার টাকা এবং ১১ জন গ্রেফতার করা হয়েছে। সোহেল রানা এক সময় মানি প্লান্ট প্রতিষ্ঠানের ড্রাইভার হিসেবে চাকরি করতেন।

এর আগে, গত বৃহস্পতিবার ( ৯ মার্চ)  ডিএমপির তুরাগ থানাধীন দিয়াবাড়ী এলাকা থেকে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের এটিএম বুথে টাকা পৌঁছে দেওয়ার সময় মানিপ্ল্যান্ট লিংক লিমিটেড এর একটি গাড়ী ডাকাতির কবলে পড়ে। এই ঘটনায় গোয়েন্দা মিরপুর বিভাগ ১২ মার্চ প্রায় ২ কোটি ৫৪ লাখ টাকা উদ্ধারপূর্বক ৮ জনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য পায় পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, এই ঘটনার বাস্তবায়নে বিভিন্ন স্তরে বিভিন্ন গ্রুপ ভিন্ন ভিন্ন দায়িত্বে নিয়োজিত ছিল।

কেউ ছিল পরিকল্পনাকারী, কেউ মোবাইল ও সিম সংগ্রহকারী, কেউ শুধুমাত্র ঘটনার সময় ভাড়াটে হিসেবে কাজ করে। জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা যায়, মূল পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নকারী হিসেবে কাজ করে ৪/৫ জন। এদের মধ্যে আকাশ ও সোহেল রানা নামে ২ জন ডাকাতির মূল ছক সাজায়।

সোহেল রানা পূর্বে মানিপ্ল্যান্ট লিংক লিমিটেড এর ড্রাইভার ছিল। ড্রাইভার থাকার কারণে সে মানিপ্ল্যান্ট লিংক লিমিটেড এর খুটিনাটি বিষয়াদি সম্পর্কে অবগত ছিল। কোন প্রকার বাধাহীন ভাবেই তারা মাইক্রোবাসটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়।

পাশাপাশি ডাকাতির মূল হোতা আকাশ টাকা লুটের পর মাইক্রোবাসে উঠতে না পারলেও সেখান থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। আকাশ তার পূর্ব পরিচিত ইমন মিলনের কাছে টাকা ডাকাতির বিষয়টি শেয়ার করে এবং তাকে এই কাজে যুক্ত হওয়ার প্রস্তাব দেয়।

তাকে তারা জনবল সংগ্রহের দায়িত্ব দেয়। ইমন মিলন তার পূর্ব পরিচিত সানোয়ার হোসেনকে বিষয়টি সম্পর্কে অবগত করে এবং জনবল যোগান, সিম সংগ্রহ ও মোবাইল ফোন কেনার দায়িত্ব দেয়।

সানোয়ার ৮টি নতুন সিম এবং মোবাইল সেট যোগাড় করে এবং তার নিজ জেলা সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনা থেকে মোট ৯ জন সদস্য সংগ্রহ করে। পরবর্তীতে তারা প্রত্যেকেই ঘটনার ২ দিন আগে ঢাকায় একত্রিত হয়।

ডিবি সূত্রে জানা যায়, আকাশ এবং সোহেল রানা, ইমন মিলন এবং সানোয়ারের কাছে ডাচ্ বাংলা ব্যাংকের টাকা লুটের বিষয়টি গোপন রাখে। তারা তাদেরকে জানায় যে, তারা কিছু অবৈধ হুন্ডির টাকা লুট করবে এবং সেখানে প্রশাসনের লোক থাকবে।

পরবর্তীতে ঘটনার দিন সবাই কুর্মিটোলায় একত্রিত হয়ে মাইক্রোবাসে উঠার পর বুঝতে পারে বড় কিছু ঘটতে যাচ্ছে। ডাকাতির পর মূল হোতা আকাশ মাইক্রোবাসে উঠতে না পারায় তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। তারা ধারণা করে যে, আকাশ তাদের হাতে ধরা পড়ে গেছে।

ধরা পড়ার ভয়ে তারা তাদের কাছে থাকা অপারেশনাল মোবাইল ফোনগুলো ৩০০ ফিটে ফেলে দেয়। তাই তারা ট্র্যাঙ্ক ভেঙ্গে টাকা লুট করতে তাড়াহুড়ো করে। পরবর্তীতে তারা ৩০০ ফিটের একটি নির্জন জায়গায় গিয়ে ব্যাগ এবং বস্তায় করে যার যার মত টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়।

এছাড়া গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ডাকাতির ঘটনায় অংশগ্রহণকারীদের দেশের বিভিন্ন জেলা সুনামগঞ্জ, সিলেট, নেত্রকোনা, গোপালগঞ্জ ও বরিশাল থেকে সংগ্রহ করা হয়।

ডাকাতির পর তারা টাকা ভাগ-বাটোয়ারা করে যার যার মত বিভিন্ন এলাকায় পালিয়ে যায় এবং বেশ কিছু টাকা বিভিন্ন খাতে খরচ করে। যার ফলে ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত, গ্রেফতার ও লুন্ঠিত টাকা উদ্ধার করতে কিছুটা বিলম্ব হয়।

লুন্ঠনকৃত টাকার একটি বড় অংশ ডাকাতির ঘটনার মূলহোতা আকাশ ও সোহেল রানা নিয়ে পালিয়ে যায়। তবে আকাশ গ্রেফতার হলেও সোহেল রানাকে গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে জানান ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ।

ডিবি প্রধান আরো বলেন, বিভিন্ন জেলায় এই ডাকাতরা লুকিয়ে আছে। টাকা বহনকারি প্রতিষ্ঠানটির ভিতরে আরো কেউ জড়িত আছে কিনা, সেটিও খুঁজে দেখা হচ্ছে। টাকা বহনকারি প্রতিষ্ঠান সোয়া ১১কোটি টাকা একটি গাড়িতে পাঠালেন আর বিনা বাধায় টাকা নিয়ে গেলো, এটি নিয়েও রহস্য আছে। বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2