রাজনীতিকে মই বানিয়েই উত্থান হাজী সেলিমের
                                    
                                    
                                        
                                            ডেস্ক রিপোর্ট
                                        
                                    
                                   
                                     প্রকাশ:  ০৮:১৫ পিএম,  ৩০ অক্টোবর,শুক্রবার,২০২০ | আপডেট:  ১০:৫৫ পিএম,  ৩০ অক্টোবর,বৃহস্পতিবার,২০২৫
                                
 
                        
                    ছেলে ইরফান সেলিমের কারণে নতুন করে আলোচনায় ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) হাজী মোহাম্মদ সেলিম। অতীতে নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে সংবাদ শিরোনাম হয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের এই এমপি।
অতীত বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সন্ত্রাস, দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ বিভিন্ন ধরনের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে আছে হাজী সেলিমের নাম। অন্যায় অনিয়মের পথ ধরেই তার উত্থান। আর নিজের সেই উত্থান আরও এগিয়ে নিতে তিনি রাজনীতিকে ‘মই’ হিসেবে ব্যবহার করেছেন। সে কারণে তিনি বেছে নিয়েছেন ‘ক্ষমতার রাজনীতি’।
১৯৯৬ সালে তৎকালীন অবিভক্ত ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ড কমিশনার হাজী সেলিম জাতীয় নির্বাচনে এমপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু নিজ দল বিএনপি তাকে মনোনয়ন না দেওয়ায় যোগ দেন আওয়ামী লীগে। আওয়ামী লীগ তাকে মনোনয়ন দেয় এবং তিনি এমপি নির্বাচিত হন। তবে ২০০১ সালের নির্বাচনে তিনি হেরে যান বিএনপি প্রার্থী নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টুর কাছে।
মূলত ওয়ার্ড কমিশনার থাকার সময় থেকেই রাজধানীর লালবাগ, চকবাজারসহ পুরান ঢাকার একটি বড় অংশ নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেন হাজী মোহাম্মদ সেলিম। অভিযোগ আছে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি হল দখল করে মার্কেট নির্মাণ করেছেন তিনি। আর এমপি হওয়ার পর রীতিমতো বেপরোয়া হয়ে ওঠেন তিনি। স্থানীয়দের অভিযোগ, ক্যাডার বাহিনী গঠন করে এলাকা নিয়ন্ত্রণে রাখতেন বিতর্কিত এই জনপ্রতিনিধি।
বিএনপি এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে অন্তত ১২০টি মামলা দায়ের করা হয় হাজী সেলিমের বিরুদ্ধে। খুন, খুনের চেষ্টা, নির্যাতন, চুরি এবং দুর্নীতি ও অবৈধ আয়ের কারণে এসব মামলা দায়ের করা হয়। নিজের বিভিন্ন অপরাধে সবসময় সহায়তা পেয়েছেন স্ত্রী গুলশান আরার। ২০০৮ সালের এপ্রিলে ২৭ কোটি টাকা জ্ঞাত বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের জন্য ১৩ বছরের জেল হয় সেলিমের। আর সেই সম্পদ নিজের কাছে রাখার জন্য ৩ বছরের জেল হয় তার স্ত্রী গুলশান আরার।
ছেলে ইরফান সেলিম এক নৌবাহিনী কর্মকর্তাকে মারধর করে গ্রেফতার হয়েছেন। তাকে ১৮ মাসের জেল দেওয়া হয়েছে। ঘটনার রাত থেকেই সস্ত্রীক আত্মগোপনে আছেন হাজী সেলিম।
ক্ষমতা অর্জনের পাশাপাশি আইনের জাল থেকে বের হতেও তিনি ব্যবহার করেছেন রাজনীতিকে। ১৯৯৬ সালে বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে এলেও দলের প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে পারেননি হাজী সেলিম। তবে ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন না পেয়ে ‘বিদ্রোহী প্রার্থী’ হয়ে নির্বাচন করেন। হারান ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদ। বিএনপিবিহীন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনকে হারিয়ে চমক দেখান হাজী সেলিম। ২০১৮ সালে আবার আওয়ামী লীগের মনোনয়নে ঢাকা-৭ আসনে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীকে হারান তিনি।
সর্বশেষ ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেও ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে সেলিম পুত্র ইরফান সেলিমকে ‘ওয়ার্ড কাউন্সিলর’ পদে মনোনয়ন দেয়নি আওয়ামী লীগ। সেখানেও ছেলেকে ‘বিদ্রোহী প্রার্থী’ বানিয়ে নির্বাচন করিয়েছেন।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, নিজে এমপি হওয়ার প্রভাব খাটিয়ে এবং ভোটারদের ভয়ভীতি দেখিয়ে ছেলেকে বিজয়ী করেছেন হাজী সেলিম।
জনপ্রতিনিধি এই বাপ-বেটার বাড়িতে পাওয়া গেছে ইয়াবার মতো মাদক, মদ ও বিয়ার, গুলিভর্তি পিস্তল, অবৈধ ওয়্যারলেস ডিভাইস এবং ভয়ঙ্কর টর্চার সেল।
পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে হাজী সেলিমের মদিনা টাওয়ারের এক সাধারণ জুয়েলারি ব্যবসায়ী বাংলানিউজকে বলেন, এই চকবাজার এলাকায় সেলিম ও তার পরিবারের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ। এলাকায় তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস কারও নেই। আমরা তার ভবনে দোকান ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করি। কিন্তু আমাদের সঙ্গেও তার লোকেরা যে আচরণ করে তা বলার মতো না। শুধু তার ভবনেই না, আশেপাশের মার্কেট আর ভবনের ব্যবসায়ীদের নিয়মিত চাঁদা দিতে হয় তার লোকদের। নইলে এই ভবনের অনেককেই ওপরে নিয়ে যাওয়া হতো। এতদিন শুধু গুজব শুনতাম যে ওপরে যাদের নেওয়া হয় তাদের শায়েস্তা করা হয়। আজ জানলাম সেখানে টর্চার সেল রয়েছে। তার বাসা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, মার্কেটের এসবের আশেপাশে সরকারি সড়কে কেউ গাড়ি পার্ক করতে পারে না, বাইক রাখতে পারে না। আমাদের গ্রাহকেরা এসব মার্কেটে এসে তার লোকদের কাছে হয়রানির শিকার হয়।
বিভিন্ন অভিযোগ সম্পর্কে জানতে হাজী সেলিমের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি। তার যে বাড়িতে র্যাব অভিযান চালিয়েছে, সেই ভবনেও তাকে পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন
এই বিভাগের আরো খবর
 
                                    ভাইরাল এই ছবিটি শেখ হাসিনার নয়
 
                                    আসিফ নজরুল প্রধান উপদেষ্টা হতে চেয়েছিলেন, এখন বল তার কোর্টে: নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী
 
                                    ভারত স্বৈরাচারকে আশ্রয় দিয়ে বিরাগভাজন হলে কিছু করার নেই: তারেক রহমান
 
                                    অনেক উপদেষ্টা আখের গুছিয়েছে সেফ এক্সিটের বিষয়ে ভাবছেন: নাহিদ
 
                                    




