অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় নির্বাচন শনিবার, কে বসছেন ক্ষমতার মসনদে
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৩ মে,শনিবার,২০২৫ | আপডেট: ১১:৫২ এএম, ৩ মে,শনিবার,২০২৫

অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকরা শনিবার (৩ মে) কেন্দ্রীয় সরকার নির্বাচনে ভোট দেবেন। দেশটির ৪৮তম এই পার্লামেন্ট নির্বাচনে হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভের ১৫০ আসনের সবকটিতে এবং সিনেটের ৭৬ আসনের ৪০টিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।
সিডনি থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজের নেতৃত্বে বর্তমান লেবার পার্টি সরকার দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার চেষ্টা করছে। অপরদিকে পিটার ডাটনের নেতৃত্বাধীন লিবারেল-ন্যাশনাল কোয়ালিশন এক মেয়াদ বিরোধী দলে থাকার পর আবারও সরকার গঠনের চেষ্টা করছে।
সাম্প্রতিক জরিপগুলো আলবানিজের বামপন্থী লেবার পার্টিকে দুই-দলীয় পছন্দের ভিত্তিতে রক্ষণশীল বিরোধী দলের চেয়ে সামান্য এগিয়ে থাকার ইঙ্গিত দিয়েছে।
জীবনযাত্রার ব্যয় ও ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার বিষয়টি জরিপকে প্রভাবিত করেছে।
শুক্রবার অ্যান্থনি আলবানিজ বলেছেন, ‘জরিপে অনেক অনিশ্চিত ভোটার রয়েছে। আমাদের আরো একটি পর্বত আরোহণ করতে হবে। আমার কাজ হলো আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে লেবার পার্টির ভোট সর্বাধিক করা। আমি এটাই করতে চাই।’
আলবেনিজ নবায়নযোগ্য জ্বালানি চালু, ক্রমবর্ধমান আবাসন সংকট মোকাবিলা এবং স্বাস্থ্যসেবায় অর্থ বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
৬২ বছর বয়সী আলবানিজ ৫৪ বছর বয়সী সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা পিটার ডাটনের নেতৃত্বে ডানপন্থী জোটের অধীনে ‘সরকারি ব্যয় সংকোচন ও বিশৃঙ্খলা’ সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছেন।
ডাটন অস্ট্রেলিয়ায় অভিবাসী কমানো, অপরাধ দমন এবং পারমাণবিক শক্তির ওপর দীর্ঘস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে চান।
ভোটাভুটি নিয়ে কোনো জটিলতা না হলে শনিবার রাতেই ফলাফল আসতে পারে। লিবারেল পার্টির নেতা ডাটন ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, শনিবার রাতে আসনভেদে অনেক চমক হবে। তিনি বলেন, ‘আমাদের নির্বাচনি প্রচারাণায় গিয়ে আমি এমন কোনো অস্ট্রেলীয়কে দেখিনি, যিনি বলেছেন তারা তিন বছর আগের তুলনায় বর্তমানে ভালো আছেন।’
নির্বাচনের জন্য মোট এক কোটি ৮১ লাখ ভোটার তাদের নাম নথিভুক্ত করেছেন। নির্বাচন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তাদের এক তৃতীয়াংশেরও বেশি ভোটার আগাম ভোট দিয়েছেন।
১৮ বছর বা তার বেশি বয়সী সব অস্ট্রেলিয়ান নাগরিকের জন্য ভোট দেওয়া বাধ্যতামূলক। ভোট না দিলে ২০ অস্ট্রেলীয় ডলার (১৩ মার্কিন ডলার) জরিমানা দিতে হয়। এ কারণে নির্বাচনে ৯০ শতাংশেরও বেশি ভোটার অংশ নেন।
আলবানিজ পরিমিত কর হ্রাস, সস্তা স্বাস্থ্যসেবা এবং যারা প্রথমবারের বাড়ি কিনতে চান, তাদের সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
ডাটন বলেছেন, তিনি জ্বালানি কর ও গ্যাসের দাম কমাবেন এবং পাঁচ লাখ বাড়ির জন্য অবকাঠামোতে বিনিয়োগ করবেন।
উভয় পক্ষকেই মার্কিন রাজনীতির সঙ্গেও লড়াই করতে হয়েছে। ছয় সপ্তাহের নির্বাচনি প্রচারণা শুরু হতে না হতেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অস্ট্রেলিয়ার ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে তার বাণিজ্য শুল্ক ঘোষণা করেন।
কিছু জরিপে দেখা গেছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে তোষামোদ করার কারণে ডাটনের প্রতি ভোটারদের সমর্থন কমেছে। এ বছরের শুরুতে ডাটন ট্রাম্পকে ‘বিগ থিংকার’ ও ‘গ্রাভিটাস’ বলে প্রশংসা করেন।
বিভিন্ন নীতি নিয়ে অস্ট্রেলীয়রা যখন মার্কিন প্রেসিডেন্টের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন, তখন ডাটন ও আলবেনিজ উভয়ই কঠোর সুরে অস্ট্রেলিয়ার স্বার্থের পক্ষে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেন।
কয়লা খনির পরাশক্তি অস্ট্রেলিয়া জলবায়ু পরিবর্তন ও কার্বন নির্গমন হ্রাসের বিষয়ে তীব্র বিপরীত ধারণার অধিকারী দুই নেতার মধ্যে থেকে একটিকে বেছে নেবে।
আলবেনিজের সরকার বৈশ্বিক কার্বনমুক্তকরণের চাপ গ্রহণ করেছে। তারা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, লৌহ আকরিক ও দূষণকারী কয়লা রপ্তানি করে ভবিষ্যতে অর্থনীতিকে আর চাঙ্গা করা যাবে না।
নির্বাচনে ডাটন নবায়নযোগ্য জ্বালানি-নির্ভরতা কাটাতে সাতটি শিল্প-স্তরের পারমাণবিক চুল্লি নির্মাণে ২০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি মেগা পরিকল্পনা তুলে ধরে অন্যদের চেয়ে নিজেকে আলাদাভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।
ভোটারদের মধ্যে অসন্তুষ্টি বৃদ্ধি স্বতন্ত্র প্রার্থীদের আরও স্বচ্ছতা এবং জলবায়ু অগ্রগতির দিকে জোরদার করেছে। জরিপে দেখা গেছে, ১০ বা তার বেশি জোটবিহীন ক্রসবেঞ্চার এখনও ক্ষমতার ভারসাম্য ধরে রাখতে পারেন, যা একটি বিরল সংখ্যালঘু সরকারের সম্ভাবনা তৈরি করেছে।