অস্ট্রেলিয়া কি স্বাস্থ্য খাতের সাফল্য অর্থনীতিতে ধরে রাখতে পারবে ?
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১ মে,শুক্রবার,২০২০ | আপডেট: ০৮:০৪ এএম, ৩০ এপ্রিল,
বুধবার,২০২৫

মার্চের শেষের দিকে অস্ট্রেলিয়ায় নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণের গ্রাফ ছিল ঊর্ধ্বমুখী। তবে তিন সপ্তাহ ধরে তা অনেকটাই আনুভূমিক। করোনার স্বাস্থ্যগত প্রভাব নিয়ন্ত্রণে কিছুটা হলেও সফলতা দেখিয়েছে দেশটির সরকার। কিন্তু স্বাস্থ্য খাতের এ সাফল্য হয়তো অর্থনৈতিক খাতে সেভাবে দেখা যাবে না। ব্লুমবার্গ ইকোনমিকসের অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা, ১৯৩০-এর দশকের মহামন্দার পর এবারই সবচেয়ে বাজে অর্থনৈতিক সংকোচন দেখতে হতে পারে অস্ট্রেলিয়াকে।
খবর ব্লুমবার্গ। নভেল করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো অস্ট্রেলিয়ায়ও ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো যেন এ মহাদুর্যোগের মধ্যেও টিকে থাকতে পারে এবং কর্মীরা যেন তাদের চাকরি না হারান, সেজন্য দেশটির সরকার এরই মধ্যে আর্থিক ও মুদ্রানীতি উভয় ধরনের প্রণোদনার ঘোষণা দিয়েছে। তার পরও ব্যবসা-বাণিজ্যের সবকিছু তো আর তাদের নিজের হাতে নেই। মুক্তবাজার অর্থনীতির এ যুগে অস্ট্রেলিয়ার অর্থনীতি স্বল্প পরিসরে হলেও উন্মুক্ত। ফলে করোনা পরিস্থিতিতে বিশ্বজুড়ে চাহিদা ও সরবরাহ ব্যবস্থায় স্থবিরতার আঁচ অস্ট্রেলিয়ার গায়েও লেগেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সামনের বছরগুলোয় দেশটির অর্থনীতির জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে অর্থনীতিকে টেনে তুলতে হলে দেশটির সরকারকে আরো বেশি প্রণোদনামূলক পদক্ষেপ নিতে হবে। আর তা করতে হবে সময়োপযোগী আর্থিক ও মুদ্রানীতির সমন্বয়ের মাধ্যমে। অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা, চলতি বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) দেশটির জিডিপি টানা সংকুচিত হবে। গত বছরের শেষ প্রান্তিকেও (অক্টোবর-ডিসেম্বর) জিডিপি কমেছিল ৯ শতাংশ। চলতি বছরের শেষ প্রান্তিক থেকে জিডিপি ক্রমে বাড়তে থাকলেও করোনা-পূর্ব অবস্থায় ফিরে যেতে ২০২২ সালের দ্বিতীয়ার্ধ পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে। সব মিলিয়ে চলতি বছর অস্ট্রেলিয়ার অর্থনীতি ৬ শতাংশ সংকুচিত হতে পারে।
করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে ২০২১ সাল থেকে জিডিপিতে প্রবৃদ্ধি দেখা যেতে পারে। আগামী বছর দেশটির অর্থনীতি সম্প্রসারিত হতে পারে ১ দশমিক ৬ থেকে ২ দশমিক ৫ শতাংশ। তবে নভেল করোনাভাইরাসের প্রকোপ যদি আবার বেড়ে যায়, তবে তা অর্থনীতিকে করুণ পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দেবে। করোনার কারণে মানুষের জীবনযাত্রা থেমে গেছে। কমে গেছে কর্মসংস্থান। আয়-উপার্জনের পথ বন্ধ। এ অবস্থায় গৃহস্থালি ও ব্যবসা খাতকে সহায়তা এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আনার জন্য প্রণোদনার ঘোষণা করেছে অস্ট্রেলিয়ার সরকার। আর এ কাজে সরকারকে সহায়তার জন্য সুদহার দশমিক ২৫ শতাংশে নামিয়ে এনেছে রিজার্ভ ব্যাংক অব অস্ট্রেলিয়া।
অর্থনীতির পুনর্জাগরণের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককে এ হার অন্তত ২০২২ সাল পর্যন্ত ধরে রাখতে হবে। এছাড়া ব্যাংকটিকে সরকারি ও করপোরেট বন্ডের মতো ফিন্যান্সিয়াল অ্যাসেট কেনা অব্যাহত রাখতে হবে। করোনার কারণে শ্রমবাজারে যে সংকোচন তৈরি হয়েছে, তা অব্যাহত থাকতে পারে আরো কয়েক বছর। এটি মজুরি বৃদ্ধি ও মুদ্রাস্ফীতিকে চাপে ফেলে দেবে। ধারণা করা হচ্ছে, মজুরি বৃদ্ধি ও মুদ্রাস্ফীতির স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসতে কয়েক বছর লেগে যেতে পারে। এখন পর্যন্ত করোনার প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে অস্ট্রেলিয়া সরকার মোটামুটি সফল হলেও দেশটিতে যে মহামারী দ্বিতীয় দফায় আঘাত হানবে না, তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। এমনটি হলে দেশটির অর্থনীতি আরো গভীর সংকটে পড়বে।
অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা, দ্বিতীয় দফায় প্রকোপ শুরু হলে চলতি বছরের চতুর্থ প্রান্তিকে জিডিপি ৩ শতাংশ কমতে পারে। আর আগামী বছর অর্থনীতি সংকুচিত হতে পারে ২ দশমিক ১ শতাংশ। করোনা সংকট দীর্ঘায়িত হলে তা অর্থনীতিতে ধারণার চেয়েও বেশি নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। সেক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়াকে অর্থনৈতিক পুনর্জাগরণের জন্য আরো বেশি সময় অপেক্ষা করতে হবে।
আরও পড়ুন
এই বিভাগের আরো খবর

বাংলাদেশে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের প্রয়োজন: অস্ট্রেলিয়ার সিনেটরদ্বয়

অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশের নতুন হাই কমিশনারের পরিচয়পত্র পেশ

লাকেম্বা মসজিদে অনলাইন হুমকি নিয়ে তদন্ত চলছে

সিডনীতে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের দোয়া ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত
