avertisements 2

দ্য হিন্দুস্তান টাইমসের নিবন্ধ

ছাই থেকে উঠে ফিনিক্স পাখির মত উড়ছে বাংলাদেশ

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:৪১ পিএম, ২৮ অক্টোবর, বুধবার,২০২০ | আপডেট: ১০:৪৫ পিএম, ৫ মার্চ,মঙ্গলবার,২০২৪

Text

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) তাদের ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুকে’ পূর্বাভাস দিয়েছে, মাথাপিছু মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ভারতকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

আইএমএফ পূর্বাভাসে জানিয়েছে, ২০২০ পঞ্জিকাবর্ষে বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি হবে ১ হাজার ৮৮৮ ডলার। আর একই সময়ে ভারতের মাথাপিছু জিডিপি হবে ১ হাজার ৮৭৭ ডলার। এই পূর্বাভাসের পর থেকেই ভারতে এ নিয়ে নানা বিতর্ক চলছে। এবার ভাষ্যকার ও বিবিসির সাবেক সাংবাদিক মার্ক টালিও এ পূর্বাভাসের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।

গত দুই দশকে বাংলাদেশের অর্থনীতি যেভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে, সেটাকে ‘ছাই থেকে উঠে ফিনিক্স পাখির মত উড়ার’ সঙ্গে তুলনা করে করেছেন তিনি। শনিবার ‘দ্য হিন্দুস্তান টাইমসে’ এক নিবন্ধে স্যার মার্ক টালি তার এই মতামত জানান।

নিবন্ধে মার্ক টালি লিখেছেন, পাকিস্তানি সেনাবাহিনী একাত্তরে সেখানে যেভাবে গ্রামের পর গ্রাম পুড়িয়ে ছাই করে দিয়েছিল, সেই ভস্ম থেকে অর্ধশতাব্দী পর উঠে দাঁড়ানো কম কথা নয়।

১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর এই বর্বরতা আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি। যুদ্ধের নিউজ করতে গিয়ে ঢাকা থেকে রাজশাহী যাওয়ার পথে আমি নিজের চোখে দেখেছি সেই ধ্বংসলীলা। বাঙালি জাতির নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে নিতে পাকিস্তানি বাহিনী গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছে।

সেই সময়কার বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে তিনি লিখেছেন, স্বাধীনতার মাত্র আড়াই বছরের মধ্যে বাংলাদেশ ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের কবলে পড়ে। তারপর বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ড দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার জন্ম দেয়। ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়েন সেনা কর্মকর্তারাও। সেইসঙ্গে বন্যা এবং ঘূর্ণিঝড় পরিস্থিতিকে আরও কঠিন করে তোলে।

সেই সময় নবগঠিত দেশটি নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অনেকেই বিদ্রুপ করেছিলেন। তখনকার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশকে তুলনা করেছিলেন ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’র সঙ্গে।

বিবিসির এই সাংবাদিক লিখেছেন, এতকিছুর পরেও গত ২০ বছর ধরে বাংলাদেশে অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি হচ্ছে নিয়মিত হারে। বহু উন্নয়ন সংস্থাই এখন ‘বাংলাদেশের উন্নয়ন মডেল’কে উন্নয়নের একটি প্রতিষ্ঠিত ধারা হিসেবে মেনে নিচ্ছে।

বাংলাদেশের জনসংখ্যার প্রায় ২০ শতাংশ এখনও অতি-দরিদ্র। দেশটির অর্থনীতি পোশাক খাত এবং বিদেশে কর্মরত শ্রমিকদের রেমিটেন্সের উপর নির্ভরশীল।

বিশ্বব্যাংক অনুমান করেছে যে, করোনাভাইরাস মহামারির কারণে এ বছরের রেমিটেন্স প্রায় ২৫ শতাংশ হ্রাস পাবে।

অন্যদিকে পোশাক খাতের অবস্থাও অত্যন্ত নাজুক। তবে এসব আশঙ্কার পরেও বাংলাদেশ আজ যে অবস্থানে পৌঁছেছে, এর পেছনে প্রধানত দুটো ফ্যাক্টর কাজ করেছে বলে মার্ক টালি জানিয়েছেন। এই দু’টি জায়গাতেই বাংলাদেশ ভারতের চেয়ে ভিন্ন পথে হেঁটেছে।

প্রথমত, দুর্বল অর্থনীতির কারণে বাংলাদেশ একটা সময় এর দাতা দেশ ও উন্নয়ন সহযোগীদের পরামর্শ মেনে নিতে এক প্রকার বাধ্য হয়েছে।

তিনি বলেছেন, নব্বইয়ের দশকের গোড়ার দিকে আমি এই বিদেশি সাহায্যের প্রতি আসক্তির বিরুদ্ধে যুক্তি দিয়েছিলাম।

আমি বলেছিলাম, প্রচুর বৈদেশিক সাহায্যের প্রাপ্যতা রাজস্ব বৃদ্ধিতে বাংলাদেশ সরকারের সংকল্পকে দুর্বল করছে। তবে পেছনের দিকে এখন ফিরে তাকালে মনে হয়, এ থেকে বাংলাদেশ বরং উপকৃতই হয়েছে।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে যদিও সেসময় একটা তীব্র সমাজতান্ত্রিক ধারা ছিল এবং বেসরকারিকরণকে ‘জনবিরোধী’ বলে ভাবা হতো, তারপরেও রাজনীতিকে একপাশে সরিয়ে রেখে সে দেশের সব সরকারই আন্তর্জাতিক দাতাদের উপদেশ অক্ষরে অক্ষরে মেনে নিয়েছে। অন্যদিকে, প্রতিবেশী ভারতে কিন্তু বেসরকারিকরণ নিয়ে সব সময়ই একটা দ্বিধা কাজ করেছে।

আর দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের উন্নয়নে এনজিও বা বেসরকারি সংস্থাগুলোকে সব সময়ই একটা বড় ভূমিকা পালনে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে, যেটা ভারতে কখনোই হয়নি।

যেমন, দ্য ইকোনমিস্টের মতে, ‘বাংলাদেশের ব্র্যাক এখন বিশ্বের বৃহত্তম স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বা এনজিও। তাদের কর্মসূচি বাংলাদেশকে চরম দারিদ্র্য থেকে উত্তরণে সাহায্য করেছে এবং বিশ্বের অন্তত ৪৫টি দেশের এনজিওগুলো এখন ব্র্যাকের সেই পথ অনুসরণ করছে।

মার্ক টালি আরও লিখেছেন, এই অর্থনৈতিক উন্নয়নই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সেই রাজনৈতিক পুঁজিটা দিয়েছে, যার জোরে তিনি ‘ভারতের কাছে দেশটা বেচে দেওয়া হচ্ছে’ এই সমালোচনা অগ্রাহ্য করতে পেরেছেন।

তিনি পরপর ভারতের দুই প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ও নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে পেরেছেন। এই সুসম্পর্কের সুবাদেই দুই দেশের বহু বছরের অমীমাংসিত ইস্যুও নিষ্পত্তি হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, দুই দেশের মধ্যে স্থল সীমান্ত চুক্তির কথা বলা যেতে পারে।

নিবন্ধে তিনি লিখেছেন, দুই দেশের মধ্যে বাস ও রেল যোগাযোগ উন্নত হয়েছে। বাংলাদেশের আখাউড়া থেকে ভারতের আগরতলা পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার রেলপথ স্থাপনের কাজ চলছে দ্রুতগতিতে।

এই রেলপথ উন্মুক্ত হলে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারতের বাণিজ্য ও সংযোগ আলাদা মাত্রা পাবে। তবে পশ্চিমবঙ্গে আসন্ন নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক প্রচারণা এবং ‘বাংলাদেশের জন্য অমর্যাদাকর’ সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বাস্তবায়ন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে বলেও সতর্ক করেছেন তিনি।

বিষয়: জিডিপি

আরও পড়ুন

avertisements 2