avertisements 2

পানির দামও বেড়েছে, আধালিটার বোতল ২০ টাকা

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৬ মার্চ,সোমবার,২০২৩ | আপডেট: ০৯:৪১ এএম, ৪ মে,শনিবার,২০২৪

Text

সব ধরনের নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির মূল্যের কারণে দেশের সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস অবস্থা। আয়ের সঙ্গে কোনোভাবেই তাল রাখা যাচ্ছে না ব্যয়ের। ফলে মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্তসহ সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় কাটছাঁট করে টিকে থাকার লড়াই করছে। এর মধ্যে এবার বাড়ানো হয়েছে বোতলজাত খাবার পানির দাম। বেশির ভাগ কম্পানি তাদের বিভিন্ন পরিমাপের পানির মধ্যে শুধু ৫০০ মিলিলিটারের বোতলেই দাম বাড়িয়েছে পাঁচ টাকা।

দেশে অন্তত ৪৫টি দেশি-বিদেশি কম্পানি খাবার পানি বোতলজাত করছে। পানি সরবরাহ করা প্রায় সব কম্পানি আধালিটার বোতলজাত পানির দাম ১৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০ টাকা করেছে, যা ৩৩.৩৩ শতাংশ। ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন ক্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ঠুনকো অজুহাতে দেশে বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়ানোর উৎসব চলছে।

গত শুক্রবার রাজধানীর শুক্রাবাদ, কারওয়ান বাজার, বাড্ডা, নতুনবাজার, গুলশান ও বনানী এলাকার বিভিন্ন দোকানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আকারভেদে প্রতি বোতল পানি পাঁচ টাকা বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে। তবে বেশির ভাগ কম্পানির দাম বাড়ালেও কয়েকটি বাড়ায়নি। বাজারে বোতলজাত পানির মধ্যে সর্বাধিক চাহিদা ৫০০ মিলিলিটারের। ক্রেতারা বলছে, আধালিটার পানিতে পাঁচ টাকা বাড়ানো অযৌক্তিক। পানি তো আমদানি করা হয় না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশে বছরে অন্তত ৩৫ থেকে ৪০ কোটি লিটার বোতলজাত পানি বিক্রি হয়, যার বাজারমূল্য প্রায় এক হাজার কোটি টাকা।

বিএসটিআই অনুমোদিত কম্পানি
দুই শর বেশি কম্পানিকে খাবার পানি বাজারজাত করার অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই)। এর মধ্যে অন্তত ৪৫টি কম্পানি দেশজুড়ে বোতলজাত পানি সরবরাহ করছে। এসব কম্পানির ৩৫টি রাজধানীকেন্দ্রিক। এই কম্পানিগুলো সাধারণত আধালিটার, এক লিটার, দুই লিটার ও পাঁচ লিটারের বোতল বাজারজাত করে। অন্য অন্তত দেড় শ কম্পানি বড় জারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস, হোটেল-রেস্তোরাঁ এবং বাসাবাড়িতে পানি সরবরাহ করে।

বোতলজাত পানি বাজারজাত করছে যেসব গ্রুপ
রাজধানীর বাজারে দেখা গেছে, অন্তত আটটি গ্রুপ তাদের পানি বাজারজাত করছে। এর মধ্যে কোকোলার ‘কিনলে’, পেপসিকোর ‘অ্যাকুয়াফিনা’, পারটেক্সের ‘মাম’, মেঘনা গ্রপের ‘ফ্রেশ’, আকিজ গ্রুপের ‘রিভেরা’ ও ‘স্পা’, প্রাণ গ্রুপের ‘প্রাণ ড্রিংকিং ওয়াটার ও সিটি গ্রুপের ‘জীবন’। এর বাইরে বাংলাদেশ সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মৈত্রী শিল্প প্লান্টে উৎপাদন হচ্ছে ‘মুক্তা’ পানি। এই পানির বেশির ভাগ সরকারি প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করা হয়। আর ঢাকা ওয়াসা উৎপাদন করে ‘শান্তি’ পানি। তবে খুচরা বাজারে এ দুটি পানি দেখা যায়নি।

দাম বাড়ানোর ধরন
খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, কম্পানিগুলো একদিনে বোতলজাত পানির দাম বাড়ায়নি। ১৫ থেকে ২০ দিন ধরে বাড়ানো হয়েছে পানির দাম। খুচরা বাজারে দেখা গেছে, অ্যাকুয়াফিনা ৫০০ মিলিলিটার পানির বোতল বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা, আগে যা ছিল ১৫ টাকা। আগে এক লিটারের দাম ছিল ২৫ টাকা, বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা, দেড় লিটারের দাম ৩০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩৫ টাকা করা হয়েছে। ফ্রেশ পানি আধালিটার ১৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০ টাকা, দুই লিটার ৩০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩৫ টাকা, পাঁচ লিটার আগের দামেই ৭৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে। মাম পানি ৫০০ এমএল বোতল ১৫ টাকাতেই পাওয়া গেছে। কিন্তু দুই লিটার ৩০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩৫ টাকা, পাঁচ লিটার ৭৫ টাকা থেকে বেড়ে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রাণ কম্পানি দাম না বাড়িয়ে এখনো আগের দামে বিক্রি করছে। সিটি গ্রুপের ‘জীবন’ বোতলে গায়ের দাম না বাড়ালেও ১২ বোতলের কেসে ২৫ টাকা বাড়িয়েছে। ফলে দোকানিদের লাভ কিছুটা কম হচ্ছে।

বিক্রেতা ও ভোক্তার অভিমত
কারওয়ান বাজারে চা-পান, বিস্কুট ও পানি বিক্রি করেন মো. জাফর। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘কম্পানি দাম বাড়ালেও আমাদের লাভ আগের মতোই। কিন্তু ব্যবসায় টাকা বেশি খাটাতে হচ্ছে। কম্পানি বোতলের গায়ে যে রেট বসিয়েছে, সে দামেই বিক্রি করি। তবে অনেক কাস্টমার দাম বাড়ানো নিয়ে আমাদের সঙ্গে ঝামেলা করেন।’

বেসরকারি কম্পানিতে চাকরি করেন প্রকৌশলী রিজওয়ানুল ইসলাম। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন আমাকে পানি কিনতে হয়। সেই পানির দামও বাড়ানো হলো। ফলে এখন পরিবারে মাসিক খরচও প্রায় দুই হাজার টাকা বেড়ে গেছে। আগে যেখানে মাসে কিছু টাকা জমাতে পারতাম, সেটা এখন আর সম্ভব হচ্ছে না। ১৫ টাকায় পাঁচ টাকা বাড়ানো মানে অনেক বাড়ানো। এটা যুক্তিসংগত নয়।

উৎপাদকরা যা বলছেন
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের বিপণন বিভাগের পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের পানির দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। তবে আগের দামে পানি সরবরাহ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। কারণ বোতল ও ছিপির উৎপাদন ব্যয় বেড়ে গেছে। তেলের দাম বাড়ায় পানি সরবরাহ করতে পরিবহন ব্যয়ও বেশি হচ্ছে।’

নাম প্রকাশ না করে অ্যাকুয়াফিনার একজন কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গ্যাস, বিদ্যুৎ ও প্লাস্টিকের দাম বেড়েছে। সরকার ট্যাক্স বাড়িয়েছে, ডলারের দামসহ সব কিছুর দাম বেড়েছে। এ জন্য পানির দামও বাড়ানো হয়েছে।’

কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘পণ্যের দাম বাড়ানো এখন উৎসবে পরিণত হয়েছে। পানি যাঁরা বোতলজাত করেন, তাঁরাও বলছেন অনেক কাঁচামাল আমদানি করতে হয়। মূলত গ্যাস, বিদ্যুতের দাম বাড়ানোয় সব পণ্যের দাম বাড়ানোর হিড়িক পড়েছে। বিষয়টি সরকারের পক্ষ থেকে ভাবা উচিত।’

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2