টাকার অভাবে চালিয়েছেন রিকশা, ৩৪তম বিসিএসে পেয়েছেন চাকরি
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০২:০৭ এএম, ১ অক্টোবর,বৃহস্পতিবার,২০২০ | আপডেট: ০৭:২৯ এএম, ২৩ এপ্রিল,মঙ্গলবার,২০২৪
লাখো তরুণের অনুপ্রেরণা রিক্সাচালক বিসিএস নন-ক্যাডার সোহেল আজকের গল্প খুলনার সোহেলকে নিয়ে। ঢাকার নিউমার্কেট মোড়ের একটা ঘটনা বলি- দাঁড়িয়ে পেয়ারা ভর্তা খাচ্ছিলাম। পাশে অনেকগুলো রিক্সা সারি সারি। এক লোক এসে রিক্সাচালককে বললেন, ‘মামা, ফার্মগেট যাইবা?’ রিক্সাচালকের প্রত্যুত্তর- ‘No, I’m not going to Farmgate.’ আমি ঘাড় ঘুরিয়ে বিস্ময়চোখে তাকিয়ে দেখি রিক্সাচালকের মুখেই নিখুঁত ইংরেজি! আমার দিকে তাকিয়ে তিনি হাসলেন। আবার বলতে লাগলেন- ‘I want to go to Mirpur’. তার কথা শুনে শুধুই হাসছিলাম।
কিন্তু বুকের ভেতরে হঠাৎ টান দিয়ে উঠলো। ভাবলাম, এই রিক্সাচালকের গল্পটা নিশ্চয়ই অন্যরকম। কথা বাড়ানোর আগেই তিনি মিরপুরের ভাড়া পেয়ে রিক্সা টান দিলেন। নিউমার্কেট থেকে অন্য একটি রিক্সায় ফেরার পথে মনে মনে ওই কাহিনির পুণরাবৃত্তি করতে থাকি। পুড়তে থাকি অজানা গল্পটি না জানার আক্ষেপে। ফার্নিচারের দোকানে চাকরিরত অনার্স পড়ুয়া ছেলেটিকে দেখলেই আমার নিউমার্কেটের সেই
রিক্সাচালকের কথা মনে পড়ে। আজ হঠাৎ স্যোশাল মিডিয়ায় একটি খবরের লিংক আমাকে আবারও চমকে দিলো! খবরের লিংকে যুক্ত থাকা একটি চেনামুখ। এক মুহূর্ত ভাবতেই নিউমার্কেটের মোড়ে সেই রিক্সাচালক মনের দর্পনে ভেসে উঠলো। এই তো সেই চেনা মুখ। খুলনার কোনো এক অখ্যাত কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করে ঢাকায় চলে আসেন সোহেল। লক্ষ্য তাঁর বিসিএস ক্যাডার হওয়া। কিন্তু খরচ দেবে কে? প্রথম দিকে রাতের বেলায় একটি কোচিং সেন্টারে পড়াতেন। সেই চাকরি
বেশিদিন টিকলো না। তাতেও দমে যাননি সোহেল। স্থানীয় এক পরিচিত রিক্সাচালকের মাধ্যমে তার ঘুরে দাঁড়ানো। নিজেই হয়ে যান একজন রিক্সাচালক। দিনে পড়াশোনা, রাতে রিক্সাচালানো- সোহেলের জীবন এভাবেই কাটে। মনের মধ্যে পুষে রাখেন, যে করেই হোক বিসিএস ক্যাডার তাকে হতেই হবে। সদ্য প্রকাশিত ৩৪তম বিসিএস পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলে তিনি উত্তীর্ণ হননি। তবে খুশির খবর ঠিকই পেয়েছেন তিনি। পিএসসি থেকে প্রকাশিত নন ক্যাডারের তালিকায় তার নাম এসেছে। এখানেই থেমে যেতে
চান না এই অদম্য। বিসিএস ক্যাডার তিনি হবেনই। তার সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ ৩৫তম বিসিএস। তাঁর স্বপ্ন, ৩৫তম বিসিএসে তিনি শিক্ষা ক্যাডার হবেন। এই মুহূর্তে আমার কাছে অদম্যের অপর নাম সোহেল। কিন্তু দেশের প্রথম সারির গণমাধ্যমে সোহেলের এই খবরটি পৌঁছায়নি। তলানির কিছু অনলাইন সংবাদমাধ্যমে সোহেলকে নিয়ে খবর ছাপা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে দেখেছি, সোহেলের ছবি থেকে মুখমণ্ডল কেটে ফেলা হয়েছে। হয়তো, জনসম্মুখে এই অদম্য লোকটিকে দেখাতে তারা লজ্জাবোধ করছেন!
আমি সোহেলের পুরো ছবিটাই আপনাদের দেখালাম। খবরের কাগজে দুর্নীতিবাজ-সন্ত্রাসীদের ছবি দেখে জাতি এখন ক্লান্ত। সোহেল নামের এই অদম্য মুখের ছবিই জতিকে দিতে পারে নতুন দিশা। ৩৫তম বিসিএস ক্যাডারে পাস করে সোহেলের নামটি লেখা থাকুক ইতিহাসের কোনো এক কোণে। সোহেল, আপনার জন্য শুভকামনা। অন্তর থেকে ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধা। হতাশায় নুয়ে পড়া লাখো তরুণের চেতনায় জ্বালিয়ে দিন অনুপ্রেরণার বাতি। [লেখাটি সংগৃহীত। সোহেলের পরবর্তী আপডেট আমরা জানতে পারিনি।]