avertisements 2

সবুজের অভিযান

জালাল উদ্দিন আহমেদ
প্রকাশ: ১২:২৫ এএম, ১ মার্চ,সোমবার,২০২১ | আপডেট: ০৯:৪৩ এএম, ১০ মার্চ,রবিবার,২০২৪

Text

 

আমাদের সর্ব শরীরে আজ পচন ধরেছে। এই পচনটা শুরু হয়েছে মাথা থেকে। বাঙালীর আপাদ মস্তক জুড়ে আজ দগদগে ঘা। সমাজ সংসারের প্রতিটি ক্ষেত্র আজ পংকিলতায় আবদ্ধ। দেশ রাজনীতি ও রাষ্ট্রের সর্বক্ষেত্রে অনিয়মের পাহাড় প্রমান উইপোকার বিচরন। সমাজনীতি ও রাষ্ট্রনীতির প্রতিটি ক্ষেত্রের অধোগতি আজ দেশের অস্তিত্বের সুবর্ন জয়ন্তীকে ফোকলা করে ফেলেছে। মুক্ত নিঃশ্বাসে বেঁচে থাকার আমাদের কি আর জো আছে! 

রাজনীতির বিষাক্ত ছোবল আজ রাষ্ট্র যন্ত্রকে বিকল করে দিচ্ছে। দেশের স্থপতির জন্ম শতবর্ষ উৎযাপনে আজ বাঙালী কোথায় উৎসব মুখর হবে, তা না হয়ে আজ দেশব্যাপী চলছে একতরফা ঢাক ঢোল পিটানোর অসুরীয় তান্ডব। কোথায় বাঙালী কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কোরাস গেয়ে আপন জাতি স্বত্ত্বার অস্তিত্ত্বের জনককে স্মরন করবে তা না হয়ে আজ দেশে একতরফা একই গলায় একই সুরের বেসুরো আহবানে বাঙালীকে স্বপক্ষ বিপক্ষের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে রাজনীতির  উত্তরাধিকারীয় ক্ষমতার অবগাহনে আপ্লুত হচ্ছে। 

সমাজনীতির দাদাগিরিতে আজ বাঙালী জর্জরিত। সমাজে আজ ওরাই সমাজপতি যারা রাজনীতির মাসলম্যান সেজে নিজের জীবনকে সাজিয়েছে। আজকের দিনে আমরা সমাজ কাঠামোয় তাইতো দেখি সেদিনের সলু, সবজি বাজারের টোল তোলা সল্যা আজ সলিম সাহেব। চার তলা বাড়ি, গ্যারেজে গাড়ি, ঢাকা রংপুর রূটে ডজন খানেক বাস। আজ ওরাই সমাজের নিয়ন্তা। চেয়ারম্যান, মেম্বার, মেয়র, কাউন্সিলর হতে হলে এই ক্রাইটেরিয়া নিয়েই সামনের সারিতে আসতে হয়। ধনে জনে মানে আজ ওরাই তো ওখানে। সময়ের আবর্তে এবং ক্ষমতার সরল অংকে ওরাইতো আজ স্কুল কমিটি, মসজিদ কমিটির সভাপতি সেক্রেটারী। একসময় এমপি এবং পরবর্তীতে মন্ত্রীত্বের সোনার হরিন। আর কি চাই। এভাবেই আমাদের সমাজে বিবর্তন ঘটছে। 

শিক্ষানীতির গ্যাঁড়াকলে আজ কোমলমতি আন্ডা বাচ্চারাও সোনার হরিনের পিছনে বেপরোয়া। গোল্ডেন এ প্লাসের মুলা ঝুলানো সোনার হরিন আজ বাচ্চাদের তোতাপাখি বানাচ্ছে। এই সোনার হরিন ধরার জন্য শিশুকাল থেকে বাচ্চাদের অশুভ প্রতিযোগিতায় নামতে হচ্ছে। এমন কি ক্ষেত্র বিশেষে ওইসব কোমলমতি শিশু কিশোরদের অভিভাবকরাও অসৎ পথের আশ্রয় নিতে দ্বিধাবোধ করছেন না। ফলশ্রুতিতে সোনার হরিনের পিছনে দৌড়াতে দৌড়াতে যোগ্য হওয়ার সময়কালে ওইসব কিশোর যুবারা সমাজ গঠনের মূল ধারার উঠানে অযোগ্য বিবেচিত হচ্ছে। ফলে সুস্থ্য বিকাশের মাধ্যমে বিকশিত না হওয়ার কাঠগড়ায় একসময় ওইসব মেধাবী (!) ছেলেরা মাদকাসক্ত হয়ে সমাজের আপদে পরিণত হচ্ছে নতুবা বিদেশে গিয়ে ট্যাক্সি ড্রাইভারর খাতায় নাম লেখাচ্ছে। 

অর্থনীতির উঠানে আজ শকুনীর ডানা ঝাপ্টায় সবকিছু উলোট পালট করে দিচ্ছে। দেশের সর্বোচ্চ নিরাপত্তার ভল্টে আজ চুরি হয়। শেয়ারের নাম করে সাধারন মানুষকে নিঃস্ব করে দেয়া হচ্ছে। বড় বড় প্রকল্প গ্রহনের নামে দেশে হরিলুট হচ্ছে। বেসরকারী প্রকল্পের নামে ব্যাংক ব্যাংকে লুটপাটের মচ্ছ্বব চলছে। দেশের অর্থনীতির একপক্ষীয় চক্রব্যুহে আজ বাইশ পরিবারের গল্প বাইশ'শ পরিবারের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে।

স্বাস্থ্যনীতি আজ ড্যাব ও স্বচিপ নামক রাজনীতির লেজুড়দের করতলে ডিগবাজি খাচ্ছে। তাছাড়া করোনা প্যাডেমিকের এই সময়টা না এলে হয়তো আমরা জানতেই পারতাম না আজকের দিনে এদেশের ডাক্তাররা কেন ডাঃ ইব্রাহীম বা ডাঃ জাফরুল্লাহ না হয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের প্রশাসক হতে চান। দেশের খাদ্যনীতিতে দেখছি কর্পোরেট সিন্ডিকেটে আমজনতা আজ বাক্সবন্দি। ব্যবসা বানিজ্যের চক্রব্যুহ একই বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে। চাকরী-বাকরী ও কর্ম সংস্থানেও পার্টিজান হুল্লোড় এবং লেনদেনের মচ্ছবে মেধাহীনদের সদম্ভ বিচরন। আজকাল সরকারী প্রশাসন যন্ত্রের খেরোখাতার হালখাতা লক্ষ্য করলেই এই দৈন্যতার গভীরতা টের পাওয়া যায়। ধর্মীয় বাতাবরনেও আজ অস্ত্রের ভাষায় কথা বলা হয়। 

বাঙালীর কপালটাই পোড়া। পঁচাত্তরের মধ্য আগষ্টে সেই যে কপাল পুড়লো তার আর হিল্লে হোল না। যদিওবা ঘোষনা পাঠের মহান সেনাপতিকে পেল তাও ক্ষনিকের সুখানুভূতিতে বিলীন হয়ে গেল কোন এক ভূরাজনৈতিক ডামাডোলে। অবশেষে পরম প্রাপ্তির উত্তরাধিকারীরা সামনের সারিতে এলেও রাজনৈতিক বিচক্ষনতার পরিবর্তে বাঙালী পেল দুই পরম প্রতাপশালী উত্তরাধিকারের জগদ্দল পাথর। এখন সেই কুড়িয়ে পাওয়া বনেদী “ডেমোক্র‍্যাসি”তেই(?) বাঙালীর বিচরণ। এহেন হাজারো কুজ্ঝটিকায় পড়ে বাঙালী আজ কক্ষ্যচ্যুত ধুমকেতুর ন্যায় খাবি খাচ্ছে। আমাদের ভরসা এখন নতুন ও তরুন প্রজন্ম। বর্তমানের রাজনীতি, সমাজনীতি ও রাষ্ট্র কাঠামোর বিষাক্ত ছোপ তাদের সর্বাঙ্গে ছড়িয়ে পড়ার আগেই তাইতো রবি ঠাকুরের ভাষায় বলতে ইচ্ছে করছেঃ – 

“ ওরে নবীন, ওরে আমার কাঁচা

ওরে সবুজ, ওরে অবুঝ

আধমরাদের ঘা  তুই বাঁচা।

রক্ত আলোর মদে মাতাল ভোরে

আজকে যে যা বলে বলুক তোরে।

পুচ্ছটি তুই উচ্চ করে নাচা

আই দূরন্ত, আইরে আমার কাঁচা।

তোরে হেথায় করবে সবাই মানা

হঠাৎ আলো দেখবে যখন

ভাববে, একি বিষম কান্ডখানা।

সংঘাতে তো উঠবে ওরা রেগে

শয়ন ছেড়ে আসবে উঠে বেগে

সেই সুযোগে, ঘুমের থেকে জেগে

লাগবে লড়াই মিথ্যা ও সাঁচায়।

আই প্রচন্ড, আইরে আমার কাঁচা”।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2