avertisements 2

শিশু পর্নোগ্রাফিতে জড়িত তিন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র যেভাবে গ্রেপ্তার

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৮:৩১ পিএম, ২০ অক্টোবর,মঙ্গলবার,২০২০ | আপডেট: ০৮:২৫ এএম, ২৩ এপ্রিল,মঙ্গলবার,২০২৪

Text

মার্কিন কিশোরির দেওয়া অভিযোগের ভিত্তিতে দীর্ঘ আট মাস অনুসন্ধান চালিয়ে ভয়ঙ্কর এক শিশু পর্নোগ্রাফি চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগ। গত বৃহস্পতিবার (১৫ অক্টোবর) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় তাদের। এই চক্রের তিন সদস্য বোরহান উদ্দিন, আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ও অভি হোসেন। তারা সবাই বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।

গত রবিবার তারা তিনজনই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।

সিটিটিসির তদন্তে উঠে এসেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১৬ বছরের এক কিশোরীর সঙ্গে কয়েক বছর আগে ইনস্টাগ্রামে পরিচয় হয়েছিল ঢাকার এক তরুণের। এরপর বন্ধুত্বের সুযোগ নিয়ে কৌশলে ঢাকার এই তরুণ মার্কিন ওই কিশোরীর নগ্ন ছবি দিতে চাপাচাপি করলে এক পর্যায়ে নিজের কিছু নগ্ন ছবি দেয় ওই কিশোরী। পর্নোগ্রাফি চক্রের পাল্লায় পড়েছে বুঝতে পেরে ওই কিশোরী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে বিষয়টি ঢাকার সিটিটিসিকে জানায়। 

জানতে চাইলে সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের ডিজিটাল ফরেনসিক বিভাগের সহকারী পুলিশ কমিশনার ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, চক্রটি কৌশলে দেশি-বিদেশি শিশু ও কিশোরীদের ন্যুড ছবি ও ভিডিও সংগ্রহ করে চাইল্ড পর্ন গ্রুপ ও ওয়েসবাইটগুলোতে সরবরাহ করতো। 
এরপর সারা দুনিয়ায় সাধারণত ডার্ক ওয়েবের মাধ্যমে চাইল্ড পর্ন ট্রেড হয়ে ছড়িয়ে পড়ত। তবে এই চক্রটি চাইল্ড পর্ন ট্রেড করে কি ধরনের অর্থনৈতিক সুবিধা পেয়েছে তার তদন্ত চলছে।

সিটিটিসি সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ২ ফেব্রুয়ারি মার্কিন এক কিশোরী ফেসবুকের মাধ্যমে তাদের কাছে একটি অভিযোগ করার পাশাপাশি ওই কিশোরী সাইবার ক্রাইম বিভাগকে তার একটি আইপি নম্বর দেয়। সাইবার ক্রাইম বিভাগের কর্মকর্তারা ওই আইপি নম্বরের সূত্র ধরে অনুসন্ধান চালিয়ে ওই আইপি নম্বরটির ব্যবহারকারীকে শনাক্ত করে। এরপর তাদের ধরতে অভিযান শুরুর এক পর্যায়ে গত বৃহস্পতিবার রাতে উত্তর শাজাহানপুরের একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে আইপি নম্বর ব্যবহারকারী বোরহান নামে এক তরুণকে প্রথমে গ্রেপ্তার করে।

পরে তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী রামপুরা থানাধীন রিয়াজবাগ থেকে আব্দুল্লাহ আল মাহমুদকে এবং পল্লবী এলাকা থেকে অভিকে গ্রেপ্তার করা হয়। এদের মধ্যে বোরহান একটি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি থেকে ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেছে। বাকি দুজন অপর দুটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ’র শিক্ষার্থী।

এদের মধ্যে বোরহান গ্রেপ্তার হওয়ার পর প্রথমে সে শিশু পর্নোগ্রাফির কথা অস্বীকার করে। বোরহানের ব্যবহৃত কম্পিউটার থেকে একটি ফোল্ডার উদ্ধার করা হয়, যেখানে ৪৫ দেশি-বিদেশি কিশোরীর নগ্ন ছবি পাওয়া যায়। যার মধ্যে তিন হাজার ৩১৬টি ফাইল ছিল। এর মধ্যে মার্কিন ওই কিশোরীর নামেও একটি ফোল্ডার ছিল। এছাড়া বোরহানের কম্পিউটার ঘেঁটে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন চাইল্ড পর্নোগ্রাফি ওয়েবসাইট লগইন অবস্থায় পাওয়া যায়।

জিজ্ঞাসাবাদে বোরহান সিটিসিকে জানিয়েছে, সে মূলত ইনস্টাগ্রামভিত্তিক বিভিন্ন চাইল্ড পর্নোগ্রাফি গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত ছিল। ইনস্টাগ্রামে চাইল্ড পর্ন গ্রুপগুলোকে ‘শাটআউট’ নামে পরিচিত। এসব গ্রুপ থেকেই কিশোরীদের কিভাবে মোটিভেটেড করে নগ্ন ছবি সংগ্রহ করা যায়, সেসব কৌশল শিখেছে। পরে এই কৌশল প্রয়োগ করে কিশোরীদের নগ্ন ছবি সংগ্রহ করে শিশু পর্নোগ্রাফি গ্রুপগুলোতে আপলোড করতো। বোরহানের আয়ত্তে থাকা অবস্থায় তার ছয়টি ফেক ইনস্টাগ্রাম আইডি উদ্ধারের তথ্য জানিয়ে সিটিটিসির এক কর্মকর্তা বলেন, একাধিক ফেক মেইল আইডিও উদ্ধার করা হয়েছে।

ইনস্টাগ্রামের ফেক আইডি বানিয়ে নিজেকে লেসবিয়ান নারী হিসেবে তুলে ধরে দেশ-বিদেশের কিশোরীদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতো বোরহান। এক পর্যায়ে কিশোরীদের কাছ থেকে নগ্ন ভিডিও এবং ছবি সংগ্রহ করে সেসব ভিডিও এবং ছবি আপলোড কর পর্ন ওয়েব সাইট ও গ্রুপে দিত।

তার কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া নথিপত্র উদ্ধার করে জানা গেছে, কিভাবে অনলাইনে একজন কিশোরীকে নগ্ন ছবি সরবরাহ করত, তার ১৩টি কৌশল উল্লেখ রয়েছে নথিতে। 

কড়া নজরদারির মধ্যেও বিশ্বজুড়ে চাইল্ড পর্নোগ্রাফির রমরমা বাণিজ্য চলছে জানিয়ে সিটিটিসি সূত্র জানায়, মূলত ডার্ক ওয়েবের মাধ্যমেই শিশু পর্নোগ্রাফির এই বাণিজ্য চলে। শিশু বা কিশোরীদের নগ্ন ভিডিও বা ছবি আপলোড করা হয় বিভিন্ন ওয়েবসাইটে। চলে লাইভ স্ট্রিমিংও। টাকা খরচ করে সেসব ওয়েবসাইটে ঢুকে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ। এসব ক্ষেত্রে মুদ্রা হিসেবে ব্যবহৃত হয় সাধারণত ক্রিপ্টোকারেন্সি বিট কয়েন। অনলাইনে ডলার পেমেন্ট করেও এসব ওয়েবসাইটে ঢোকা যায়।

আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোল শিশু পর্নোগ্রাফি চক্রের সদস্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করতে দীর্ঘ দিন ধরেই কাজ করে আসছে। এখন পর্যন্ত তারা বিভিন্ন দেশ থেকে ১০ হাজারেরও বেশি অপরাধীকে শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করেছে। ইন্টারপোলের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই ২০১৪ সালের জুন মাসে ঢাকায় টিপু কিবরিয়াসহ চাইল্ড পর্নোগ্রাফি চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ- সিআইডি। ওই চক্রটি সেসময় অন্তত পাঁচ শতাধিক শিশুর পর্ন ভিডিও তৈরি করে অর্থের বিনিময়ে আন্তর্জাতিক চাইল্ড পর্ন চক্রের হাতে তুলে দিয়েছিল বলে জানা গেছে।


কালের কন্ঠ

আরও পড়ুন

avertisements 2