avertisements 2

সুবর্ণ জয়ন্তীর প্রথম প্রহরে

অজল জালাল
প্রকাশ: ০৮:৩৭ পিএম, ২৪ মার্চ, বুধবার,২০২১ | আপডেট: ০৪:২৩ এএম, ২৬ এপ্রিল,শুক্রবার,২০২৪

Text

লিকলিকে একহারা
বড় একরোখা ছেলেটি।
নীতিহীনতার আপোষ কখনোই
তাকে টলাতে পারে নি।
বিদ্যালয় জীবনের শেষ প্রান্তে
যখন তার ঘাড় শক্ত হোল
তখন থেকেই রাজনীতির উঠানে
পা রাখার স্বপ্নে
স্বপ্নচারী হোল সে।
বাড়ির কনিষ্ঠ সন্তানের আদরে
সে বেশ ভাগ্যবানই বটে।
স্বাধীন চেতার স্বপ্নজালে
বরাবরই অন্যরকম।
তবুও সে দুর্ভাগা -
বাঙালীয়ানার প্রকৃত উঠানে
তখনও পা পড়ে নি তার।

আজ পঞ্চাশের ফালনামায়
ঘটে যাওয়া রক্তঝরা বাহান্ন
চুয়ান্নর বাঙালীয়ানার যুক্তফ্রন্ট
ছেষট্টির ছয়দফা মুক্তির সনদ।
পরিশেষে বিস্ফোরনের ঊনসত্তর
সবই তার শোনা। 
ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের জোয়ার
সে তার অগ্রজদের কাছে শুনেছে।
সত্তরের নির্বাচনী মহা বিজয়ের
কথাও তার কাছে পৌঁছেছে।
তখন  আকাশ প্রবাহের
এত বাহুল্য ছিল না।
সে এসব জেনেছে পাতাভর্তি
কলমের কালির আঁচড়ে।

একাত্তরের সাতই মার্চ
সবকিছু বদলে দিল।
সমস্ত বাঙালীর মুখ এক হয়ে
মহাকবির মুখ নিসৃত কাব্যগীতি
রেসকোর্সে উচ্চারিত এক
মহাকাব্যের বাণী।
“এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম
এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম”
আটই মার্চ সকালের আকাশ তরঙ্গে
নিজ ভাষার সগর্ব উচ্চারন- 
বাঙালী ফুঁসে উঠলো।
সেই থেকে বাঙালীর আকাশ
খুলে গেল আপন উচ্চারনে।
বাঙালী কোমর কষে
গামছায় টান মারলো।
নিজের অস্তিত্ত্বের ঘরানায়
সে তার মহান নেতার
চুড়ান্ত নির্দেশের অপেক্ষায়
উৎকর্ণ থাকলো।
পঁচিশের মধ্যরাতে দানবের
সেই বিভৎস খান্ডবদাহে
বাঙালী দিশেহারা উদ্ভ্রান্ত।
অবশেষে বাঙালী এক পোষাকী
মানুষের কন্ঠে নেতার আদেশ
শুনে উজ্জীবিত হোল।
রনাঙ্গনের রক্তাক্ত প্রান্তর থেকে
এক অখ্যাত মেজরের কন্ঠে
সেই ঘোষনাপাঠ বাঙালীকে
যোদ্ধা বানালো।
একাত্তরের সেই রক্তক্ষয়ী প্রলয়
একাত্তরেই বিজয় মিছিলে
বাঙালী উদযাপন করলো।

আজ একবিংশের একুশ
গুনে গুনে পঞ্চাশটি বছর
বিদগ্ধ উচ্চারনে সুবর্ন জয়ন্তী।
কাক ডাকা ভোরে সোনার বাংলায়
বাঙালী তার স্থপতিকে হারিয়েছে
নির্মমতার সেই মধ্য আগষ্ট
বাঙালীকে পিতৃহারা করেছে।
ইতিহাসের নির্মমতায় ঘোষনপাঠের
সেই সিপা্হসালারও বিদায় নিয়েছে।
তবুও বাঙালী শক্ত শিরদাঁড়ায়
মাথা উঁচু - কন্যা ও জায়ায়।
 
সূচনার সেই ছেলেটি এখন
ষাটোর্ধ অবসরের আদম।
সেই তেজ সেই চেতনা
সেই আপোষহীনতার বাস্তবে
তিনি এখন সিনিয়র সিটিজেন।
সুবর্ন জয়ন্তীর প্রথম প্রহরে
তিনি তৃপ্ত বাঙালীয়ানায়
 জায়নামাজে সৃষ্টিকর্তার শোকরানায়।

অস্তিত্ত্বের সুবর্ন জয়ন্তী!
শেকড়ের বিশুদ্ধ উচ্চারনে 
বাঙালী একই বৃত্তে – 
নৈতিকতার আপন উঠানে।
গগন বিদীর্ণ মাটির গানে
বাঙালী সমস্বরে গেয়ে উঠুক -
জয় বাংলা।
বাংলাদেশ চিরজীবি হোক।
-০-
রাজশাহী, ২৩ মার্চ।


 

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2