avertisements 2

সিডনী হিল্টনঃ নিভৃতবাসের দিনগুলি - ১

ড. আব্দুল্লাহ আল মামুন
প্রকাশ: ০৭:৫২ পিএম, ৩ সেপ্টেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২০ | আপডেট: ০৯:৩১ এএম, ২৩ এপ্রিল,মঙ্গলবার,২০২৪

Text

কাতার এয়ারওয়েজের বিমান A908 সিডনীর মাটি ছুঁলো রাত ন’টায়। সাথে সাথেই নিরাপত্তা বাহিনীর কয়েকজন অফিসার ভিতরে ঢুকে দাপাদাপি শুরু করলো। বেশ কিছু কাগজপত্র হাতে ধরিয়ে দিয়ে সুরক্ষাবিধির উপর কিছুক্ষণ জ্ঞান দিল। নিজের কেবিনে ঠায় দাঁড়িয়ে রইলাম ত্রিশ মিনিট। এর পর বিমান থেকে ইমিগ্রেশানে যেতে লাগলো আরো চল্লিশ মিনিট। পথে বেশ কয়েকবার থামতে হল। তাপমাত্রা মাপা হল, আমাদের যে টানা ১৪ দিন হোটেল কোয়ারিন্টিনে বা নিভৃতবাসে কাটাতে সে কথাও জানিয়ে দিল একজন নার্স ।
বিমান বন্দরের বাইরে অপক্ষেমান বাসের সারি। অস্ট্রেলিয়ান সেনা বাহিনীর বেশ কিছু জোয়ান আমাদের ভারী লাগেজগুলো বাসে তুলে দিল, আমাদের ধরতেই হলনা।

বাস ছাড়লো আরো ঘন্টা খানেক পরে। কোন হোটেলে যাবো তা কারো জানা নেই। নির্ধারিত জায়গায় গেলেই কেবল জানা যাবে। বেশ কয়েকটি হোটেলে বাজে অভিজ্ঞতার কথা ফেসবুকে পড়ার পর সবার চোখে মুখে উৎকণ্ঠা। হাইওয়েতে ছুটে চলেছে বাস। আমি রাস্তার দু’পাশের সাইনবোর্ড দেখে কোথায় যাচ্ছি তা অনুমান করার চেষ্টা করছিলাম। অবশেষে সিডনী শহরতলীর প্রানকেন্দ্রে হিল্টন হোটেলের চত্বরে বাস থামার পর সবাই যেনো হাফ চেড়ে বাঁচলো। যাক, এ যাত্রায় তাহলে রক্ষে পাওয়া গেল।

এখানেও সেনাবাহিনীর জোয়ানরা আমার সব লাগেজ রুমে তুলে দিয়ে তবেই গেলো। দরোজা লাগিয়ে দেয়ার সময় বললো, অগামী দু’সপ্তাহের জন্য এটাই হচ্ছে তোমার সীমানা। তিনবেলার খাবার রেখে যাওয়া হবে দরজার বাইরে। টিলিভিশনে প্রতিদিনের খাবারের ডিজিটাল মেন্যু দেখতে পেলাম, তবে কোনো রুম সার্ভিস নেই। সপ্তাহখানেক পর বিছানার চাদর, কিছু টাওয়েল রাখা হবে দরজার বাইরে। এই চৌদ্দ দিনে দু’বার সোয়াব টেস্ট করা হবে।

রুম নাম্বার ৪০১৫। চল্লিশ তলার একটি একক রুম আমার জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। পাঁচ তারা হাটোলের কক্ষে যা থাকার সবই আছে। রুমের একপাশে দুটো জানালা। দ্রুত কাছে যেয়ে দেখি খোলার পথ নেই। জানালা দিয়ে তখন দেখতে পাচ্ছিলাম মধ্যরাতের ঘুমিয়ে পড়া সিডনী শহর, ঐতিহ্যবাহী টাউনহলের উঁচু মিনারের গায়ে বিশাল ঘড়ির কাঁটা, আর কুইন ভিক্টোরিয়া বিল্ডিংয়ের সবুজ চূড়া। সিডনীতে শীত যাই যাই করলেও এখন তাপাত্রা ১৩ ডিগ্রী। জানলার কাঁচে হাতের তালু লাগিয়ে ছুঁতে চাইছিলাম বাইরের মুক্ত শীতল হাওয়া, ETর মতো আঙ্গুলের স্পর্শ দিয়ে হাওয়ায় ভর করে প্রিয়জনদের কাছে পাঠাতে চাইছিলাম আবেগী মনের বার্তা।

কাতারে গত মার্চ থেকেই নিজের বাড়ীতে একাকী বলতে গেলে এক ধরণের লকডাউনের মধ্যেই ছিলাম । কিন্তু হিল্টন হোটেলে নিভৃতবাসের রংটাই ভিন্ন। পরিবার, বন্ধু-বান্ধব সবার হোটেল চত্বরে প্রবেশ নিষিদ্ধ। লকডাউনের অদৃশ্য বেড়ি পরিয়ে দেয়া হয়েছে দু’পায়ে। সবার সাথে দেখা হবে টানা দু’সপ্তাহ পর। এতোটা পথ পাড়ি দিয়ে এসে এখন মনে হচ্ছে বাড়ী আরও কতদূর... (চলবে)

-লেখকের ফেসবুক টাইমলাইন হতে সংগৃহীত

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2