avertisements 2

এক তরুণীর মাথা মিরপুরে দেহ বিমানবন্দরে

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০১:১৫ এএম, ২১ ফেব্রুয়ারী,রবিবার,২০২১ | আপডেট: ০৭:৪৫ পিএম, ১০ মার্চ,রবিবার,২০২৪

Text

রাস্তা ঝাড়ু দিতে গিয়ে সুইপারের নজরে পড়ে একটি বড় আকারের বস্তা। মুখ বাঁধা দড়ি দিয়ে। বস্তাটির ভেতরে কী আছে তা বুঝতে লাঠি দিয়ে খোঁচাচ্ছিল। কিন্তু দড়ি দিয়ে এমনভাবে বাঁধা তাতে করে লাঠিতে কাজ হচ্ছে না। সে নিজেই দড়ির বাঁধন খুলে ফেলে। ভিতরে তাকাতেই এক ঝটকায় বস্তা থেকে হাত সরিয়ে ফেলে। ভিতরে নগ্ন তরুণীর লাশ! ভোরে লোকজনের চলাচল ছিল কম। সুইপার ভয়ে চেঁচামেচি করতে থাকে। লোকজনকে বস্তার কথা জানায়। লোকজনের ভিড় বাড়তে থাকে। আস্তে আস্তে সেখানে জটলার আকার বেশ বড় হয়। বস্তাবন্দী লাশের খবর চাউর হতে থাকে।

এ খবর চলে যায় পুলিশের কানে। পুলিশ ছুটে আসে ঘটনাস্থলে। রাজধানীর বিমানবন্দর থানার বেড়িবাঁধ এলাকার ঘটনা এটি। পুলিশ গিয়ে বস্তার ভিতর রশি দিয়ে পেঁচানো মস্তকহীন এক তরুণীর লাশ উদ্ধার করে। বস্তার ভিতর এমন কিছু ছিল না যাতে করে তরুণীর পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়। ক্লুলেস এই খুনের তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ বেশ হিমশিম খায়। খুঁজে পায় না কোনো সূত্র। যে সূত্র ধরে এগিয়ে নেওয়া যাবে খুনের তদন্ত। গোয়েন্দা পুলিশের ওপর তদন্তের ভার দেওয়া হয়। ঘটনাটি ২০১৭ সালের মার্চের হলেও রহস্য উদঘাটনে সময় লেগেছে দুই বছর। ফোন রেকর্ড ও ধর্ষণের আলামত পরীক্ষার প্রতিবেদনের সূত্র ধরে হত্যার নেপথ্য কাহিনি জানতে পারে পুলিশ। পুলিশ জানতে পারে, একটি নিষিদ্ধ প্রেমের ভয়ঙ্কর পরিণতির কথা।

পুলিশ জানায়, তরুণীকে শনাক্তে একমাত্র ফিঙ্গার প্রিন্ট ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না পুলিশের। এক সময় জাতীয় পরিচয়পত্রের সার্ভারে সংরক্ষিত তথ্যের সঙ্গে মিলিয়ে পুলিশ জানতে পারে, তার নাম কুলছুম বেগম। গ্রামের বাড়ি মাদারীপুরের কালকিনির তালিমপুরে। ২৫ বছরের এই বিবাহিত তরুণী রাজধানীর পল্লবীর বস্তিতে থাকতেন। একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন তিনি।

কুলছুম তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে পল্লবীর বস্তিতে থাকতেন। এ সময় তার সঙ্গে পাশের বাসিন্দা গাড়িচালক এনামুল হকের পরিচয় হয়। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে পরকীয়ার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এই বস্তির পাশের সি ব্লকের দুই বাসিন্দা ও এনামুলের পূর্বপরিচিত মাছ বিক্রেতা কালু ও কাসেম তাদের এই সম্পর্কের কথা জেনে ফেলে। বস্তি এলাকায় তারা একসঙ্গে ক্যারম খেলত। একদিন এনামুলকে কালু জানায়, কুলছুমের সঙ্গে সেও ‘ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে’ জড়াতে চায়। এ প্রস্তাব পেয়ে এনামুল তার কাছে ২০ হাজার টাকা দাবি করে। টাকা পাওয়ার পর এনামুল কালুকে তার বাসায় যেতে বলে। ঘটনার দিন সকালে এনামুল বেশ কয়েকবার কুলছুমের মোবাইল ফোনে কল করে।

ফোন রিসিভ করার পর এনামুল তার সাজানো ছক অনুযায়ী কুলছুমকে জানায়, তার ডায়রিয়া হয়েছে। শরীর খুব দুর্বল। স্যালাইন এবং ওষুধ নিয়ে তাকে যেন কুলছুম দেখতে আসে। এনামুলের কথা বিশ্বাস করে সকাল ৮টার দিকে তার বাসায় যান কুলছুম। এ সময় এনামুল তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে। এরই মধ্যে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী কালু ও কাসেম এনামুলের বাসায় যায়। তারা ঘরে ঢুকে কুলছুমকে ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। কুলছুম চিৎকার করার চেষ্টা করলে তার মুখের মধ্যে কাপড় গুঁজে দেওয়া হয়। মিনিট পাঁচেক পর তারা তিনজন নিশ্চিত হয়, শ্বাসরোধে মারা গেছেন কুলছুম। কুলছুমের লাশ গুম করতে তিনজন তাৎক্ষণিকভাবে ফন্দি আঁটে। এনামুলকে ৫০ টাকা দিয়ে দ্রুত পলিথিন ও বস্তা নিয়ে আসার নির্দেশ দেয় কালু।

এসব আনার পর এনামুলের ঘরে থাকা বঁটি দিয়ে কুলছুমের গলা কেটে ফেলে সে। গামছা দিয়ে হাত-পা বেঁধে কুলছুমের মস্তকহীন শরীর পলিথিনে মুড়িয়ে একটি বস্তায় ঢোকানো হয়। মস্তক ঢোকানো হয় আরেকটিতে। খন্ডিত মস্তকের বস্তা নিয়ে কালু ও কাসেম মিরপুর ১২ নম্বর বাসস্ট্যান্ডের ড্রেনের একটি স্থানে ছুড়ে ফেলে। একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে আরেকটি বস্তা নিয়ে এনামুল যায় বিমানবন্দর এলাকায়। সেখানে রাস্তার পাশে বস্তাবন্দী মস্তকহীন লাশ ফেলে পালিয়ে আসে সে।

কুলছুম হত্যা ছিল একটি ক্লুলেস ঘটনা। তদন্তের নানা সূত্র প্রয়োগ করে দীর্ঘদিন পর এ হত্যার আসল কাহিনি বের করা হয়। এ হত্যার সঙ্গে জড়িত তিনজনই অত্যন্ত ধুরন্ধর। ডিএনএ প্রতিবেদন পাওয়ার পর নিশ্চিত হওয়া যায়, হত্যার আগে কুলছুমের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক তৈরি করা হয়েছিল। হত্যার কথা এনামুল বারবার অস্বীকার করলেও শেষ পর্যন্ত আসল সত্য বেরিয়ে আসে।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2